রংপুর কারমাইকেল কলেজে একাডেমিক ভবন, অডিটরিয়াম, আবাসিক হল নির্মাণসহ ৩৭ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে শহরের লালবাগ এলাকায় ৩ ঘণ্টা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে কলেজের অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ক্যাম্পাসে এসে দাবি মেনে না নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে আজ রোববার সকাল থেকে কলেজে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা কলেজ প্রশাসনকে ২৫ দফা এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো কলেজের সব খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মানসম্মত অডিটরিয়াম নির্মাণে পূর্ণ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, কলেজের দখলকৃত জমি উদ্ধার এবং কলেজ চত্বরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করা ও সৌন্দর্যবর্ধনমূলক ফটক নির্মাণ, কলেজের জমি অন্য কোথাও না দেওয়ার লিখিত নিশ্চয়তা, হলসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কার, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অন্তত ছয়টি বাস সরবরাহ, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ স্মার্ট ক্লাসরুমে রূপান্তর, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি ও উন্নত সরঞ্জাম প্রদান ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, নতুন বিভাগ সংযোজনের প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বাস–সংকট, ছাত্রী বিশ্রামাগারের অনুপযুক্ত পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা ও আইসিটি–সুবিধার ঘাটতি নিয়ে তাঁরা অবহেলিত থেকেছেন। বারবার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে কলেজের নানাবিধ সংকটের কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পদে পদে সংকটে জর্জরিত। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের ঘোষণা দেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। শিক্ষা উপদেষ্টা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সরাসরি আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। প্রশাসন দ্রুত দাবি মেনে না নিলে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।’

ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.

রমিজ আলম। এ সময় তাঁরা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

রংপুরে কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

লালমাইয়ে পাল্টাপাল্টি জিডি প্রকৌশলী ও সাংবাদিকের

কুমিল্লার লালমাই উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় এক সাংবাদিক গতকাল শনিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

আজ রোববার বিকেলে লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম দুটি জিডির তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার। এ ছাড়া তাঁদেরও পরামর্শ দিয়েছি, নিজেরা বিষয়টি সমাধান করে ফেলার জন্য।’

দৈনিক সংবাদের উপজেলা প্রতিনিধি মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার (গতকাল) বিকেলে আমিসহ কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক উপজেলা কমপ্লেক্সের নতুন ভবন দেখতে যাই। সেখানে দ্বিতীয় তলায় তালাবদ্ধ আটটি কক্ষের দরজায় এলজিইডি লেখা দেখতে পাই। পরে সেখানে উপস্থিত থাকা উপজেলা প্রকৌশলী সাবরীন মাহফুজের কাছে জানতে চাই, তাঁদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কেউ কক্ষ ভাগ করে (বরাদ্দ) দিয়েছেন কি না? এ প্রশ্ন শুনেই উপজেলা প্রকৌশলী আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন; বলতে থাকেন, “আমি কক্ষ বরাদ্দ কমিটির সদস্যসচিব, এই ভবন আমাদের। আমি ঠিক করব কে কোথায় বসবে।’”

মাসুদ রানার দাবি, উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন প্রকৌশলী। পরে তিনি ওই দিন রাতে নিজের নিরাপত্তার জন্য থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনি শুনেছেন, সন্ধ্যায় ওই প্রকৌশলীও তাঁর বিরুদ্ধে জিডি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মোসা. সাবরীন মাহফুজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (মাসুদ) হঠাৎ এসে আমাকে উদ্দেশ্যমূলক বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। এরপরও আমি চেষ্টা করেছি ভালোভাবে তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য। একপর্যায়ে মাসুদ সাহেব আমার অনুমতি না নিয়ে ভিডিও করতে থাকেন। আমি তাঁকে বারবার বলেছি, আপনি আমার অনুমতি ছাড়া এভাবে ভিডিও করতে পারেন না। কিন্তু তিনি ভিডিও করেই গেছেন। আমি একজন নারী অফিসার, নিরাপত্তারও একটি বিষয় থাকে। পরে আমি বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে জানালেও তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এরপর নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি।’

আজ বিকেলে এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিমাদ্রি খীসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যার পর বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। তবে উপজেলা প্রকৌশলী থানায় যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছুই জানাননি। আমরা বিষয়টির বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ