ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে খেজুরবাগ এলাকায় ভবনের নিচে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। শনিবার গভীর রাতে পাকিজা নামে পাঁচতলা ভবনে এই ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

আহতরা হলেন– শিশু আল-সামির, তার বাবা ফারুক হোসেন ও মা শিউলি আক্তার। এই পরিবারটি পাঁচতলা ভবনের নিচের একটি কক্ষে বসবাস করে।

আহত ফারুক হোসেন বলেন, ‘শনিবার রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। দেখি আমার স্ত্রী শিউলীর হাত ও ছেলের শরীর আগুনে পুড়ে গেছে। আমার নিজের মুখের একপাশও দগ্ধ হয়। আমরা দ্রুতই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরি।’ দীর্ঘদিন ধরে তাদের কক্ষের মেঝে অস্বাভাবিক গরম হচ্ছিল। বিষয়টি বাড়িমালিককে জানালে মেরামতের আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে জানান ফারুক হোসেন।

ভবনের মালিক সহিদ হোসেন জানান, ঘটনার সময় পাশের কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন তিনি। শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দেখেন দেয়াল ধসে গেছে। ভবনটি ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করেছেন এবং ভবনে ১০টি পরিবার বসবাস করছে।

কথা হয় পোস্তগোলা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবু মুহাম্মদ সাজেদুল কবির জোয়ার্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। নিচতলার দেয়াল সম্পূর্ণ ধসে পড়ে গেছে। ভবনটি ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ডোবার ওপর নির্মিত হওয়ায় বায়োগ্যাসের চাপ কিংবা পাশে থাকা গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণটি ঘটে থাকতে পারে। ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি ভবন মালিককে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অধিকতর তদন্তও চলছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিন বলেন, বিস্ফোরণের পরপরই স্থানীয়ভাবে আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। ভবনের দেয়াল আংশিক ধসে গেছে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

মাদক ও অস্ত্র ঠেকাতে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে বসল যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্যানার

অবশেষে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান ঠেকাতে বসানো হলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘স্ক্যানার’। আজ সোমবার দুপুর থেকে এই যন্ত্র চালু করা হয়। প্রথম যাত্রায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ টেনের আট শতাধিক যাত্রীর লাগেজ, ব্যাগ স্ক্যান করা হয়। সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে লাগেজ-ব্যাগ তল্লাশির সুযোগ পেয়ে খুশি যাত্রীরা।

আইকনিক রেলস্টেশনে মাদকদ্রব্য (ইয়াবা-আইস) ও অস্ত্র পাচার বন্ধে আগে যাত্রীদের লাগেজ, ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিয়োজিত করা হয় ডগ স্কোয়াডও। এ নিয়ে ১ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘মাদক-অস্ত্র ঠেকাতে কক্সবাজার রেলস্টেশনে ডগ স্কোয়াড’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্বোধনের এক বছর আট মাস পরও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে স্ক্যানার, তথ্যকেন্দ্র, চলন্ত লিফট, যাত্রী লাউঞ্জ, শিশু বিনোদনকেন্দ্র ও পদচারী-সেতু এবং ওপরের তলাগুলোতে শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল, তারকা মানের হোটেলসহ অন্তত এক ডজন সুবিধা চালু হয়নি। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিনের মাথায় স্ক্যানার চালু হলেও অন্য পরিষেবা চালু হয়নি এখনো।

কক্সবাজার শহরতলির চান্দেরপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয় দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সঙ্গে এই রেলস্টেশনও উদ্বোধন করা হয়। ছয়তলাবিশিষ্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৩৬ কোটি টাকা।

রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবন এখনো রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। নিচতলার কিছু কক্ষ আমরা ব্যবহার করছি।’

২০১৮ সালের জুলাইয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পের কাজ দুটি ভাগে করে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ‘কাজ শেষ করেছি। রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমাও প্রায় শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরে ভবনটি রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন সব পরিষেবা চালু হবে।’

যাত্রীদের স্বস্তি

সোমবার দুপুর ১২টায় রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে শতাধিক নারী-পুরুষ যাত্রী ঝিনুক ফোয়ারার পাশ দিয়ে রেলভবনের ফটকে ঢুকছেন। তারপর লাগেজ স্ক্যানের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছেন। ভবনের নিচতলায় লাগেজ স্ক্যানারের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বসানো হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রটি।

সংশ্লিষ্ট রেলকর্মীরা জানান, গতকাল রোববার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ ব্র্যান্ডের লাগেজ স্ক্যানার যন্ত্রটি বসানো হয়েছে। আজ দুপুর থেকে যন্ত্র দিয়ে যাত্রীদের লাগেজ স্ক্যান শুরু হলো। এতে যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

দুটি লাগেজ স্ক্যান শেষ করে প্ল্যাটফর্মে দিকে যাচ্ছিলেন ঢাকার ফতুল্লা এলাকার গৃহবধূ নিলুফা ইয়াছমিন। তিনি বলেন, তিন দিনের ভ্রমণে তিনি পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছিলেন। আগে লাগেজ তল্লাশি হতো হাতে। এখন হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রে। নতুন এই উদ্যোগ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ হয়রানি থেকে রক্ষা করবে।

লাগেজ স্ক্যানিং কার্যক্রমে নিয়োজিত আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কালেক্টর শান্ত বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজার থেকে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বেড়েছে। তাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার রেলস্টেশনে লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে। ট্রেন ছাড়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদক ও অস্ত্র ঠেকাতে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে বসল যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্যানার