ঢাকার কেরানীগঞ্জে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে। আজ রোববার ভোররাত চারটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ পাকিজা প্লট এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন, ভবনের নিচতলার ভাড়াটে ফারুক হোসেন (৪৩), তাঁর স্ত্রী শিউলি বেগম ও তাঁদের আট বছরের ছেলে আল সামির হোসেন। ঘটনার পর তাঁদের পুরান ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ১০ ফুট প্রস্থের দেয়াল ধসে গেছে। রান্নাঘরের মেঝে ফেটে গেছে। ঘরের দরজা ও জানালাও ভাঙা। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন।

আহত ফারুক হোসেন বলেন, গতকাল শনিবার রাতে খাবার খেয়ে স্ত্রী–সন্তানসহ তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত চারটার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তাঁর স্ত্রীর হাত, ছেলের শরীর ও নিজের কপালের বাঁ পাশ পুড়ে যায়। তাঁদের চিৎকারে এলাকার লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক ধরে ঘরের মেঝে অস্বাভাবিকভাবে গরম হচ্ছিল। বিষয়টি মেরামত করার জন্য একাধিকবার বাড়ির মালিককে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। তিনি সময়মতো গুরুত্ব দিলে আজ ঘটনাটি ঘটত না। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার পরিবার প্রাণে বেঁচে গেছে।’

ভবনের মালিক শাহিদ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার পাঁচতলা ভবনে ১০টি পরিবার বসবাস করছে। ঘটনার সময় তিনি তাঁর কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখেন, নিচতলার একটি ঘরের দেয়াল ধসে গেছে।’ তিনি বলেন, ভবনের জন্য রাজউকের কোনো অনুমতি ছিল না। তবে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিয়ে ভবনটি করা হয়েছিল।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কেরানীগঞ্জ জোনের ব্যবস্থাপক (বিপণন আবাসিক) নাজির হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’

ফায়ার সার্ভিসের পোস্তগোলা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আবু মুহাম্মদ সাজেদুল কবির জোয়ার্দার সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তাঁরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন, ভবনটির নিচতলার দেয়াল ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণে ওই ঘরে থাকা এক ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আহত হয়েছেন। ঘটনার পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, একটি ডোবা ভরাট করে সেটির ওপর ভবনটি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের তলদেশে সৃষ্ট গ্যাস কিংবা গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ঘটনাটি ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র দ য় ল ধস ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”

এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।

তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:

১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।

৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।

৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ