মাসখানেক ধরে গরম হচ্ছিল ঘরের মেঝে, বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩
Published: 22nd, June 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে। আজ রোববার ভোররাত চারটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ পাকিজা প্লট এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন, ভবনের নিচতলার ভাড়াটে ফারুক হোসেন (৪৩), তাঁর স্ত্রী শিউলি বেগম ও তাঁদের আট বছরের ছেলে আল সামির হোসেন। ঘটনার পর তাঁদের পুরান ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ১০ ফুট প্রস্থের দেয়াল ধসে গেছে। রান্নাঘরের মেঝে ফেটে গেছে। ঘরের দরজা ও জানালাও ভাঙা। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন।
আহত ফারুক হোসেন বলেন, গতকাল শনিবার রাতে খাবার খেয়ে স্ত্রী–সন্তানসহ তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত চারটার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তাঁর স্ত্রীর হাত, ছেলের শরীর ও নিজের কপালের বাঁ পাশ পুড়ে যায়। তাঁদের চিৎকারে এলাকার লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক ধরে ঘরের মেঝে অস্বাভাবিকভাবে গরম হচ্ছিল। বিষয়টি মেরামত করার জন্য একাধিকবার বাড়ির মালিককে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। তিনি সময়মতো গুরুত্ব দিলে আজ ঘটনাটি ঘটত না। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার পরিবার প্রাণে বেঁচে গেছে।’
ভবনের মালিক শাহিদ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার পাঁচতলা ভবনে ১০টি পরিবার বসবাস করছে। ঘটনার সময় তিনি তাঁর কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখেন, নিচতলার একটি ঘরের দেয়াল ধসে গেছে।’ তিনি বলেন, ভবনের জন্য রাজউকের কোনো অনুমতি ছিল না। তবে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিয়ে ভবনটি করা হয়েছিল।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কেরানীগঞ্জ জোনের ব্যবস্থাপক (বিপণন আবাসিক) নাজির হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’
ফায়ার সার্ভিসের পোস্তগোলা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আবু মুহাম্মদ সাজেদুল কবির জোয়ার্দার সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তাঁরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন, ভবনটির নিচতলার দেয়াল ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণে ওই ঘরে থাকা এক ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আহত হয়েছেন। ঘটনার পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, একটি ডোবা ভরাট করে সেটির ওপর ভবনটি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের তলদেশে সৃষ্ট গ্যাস কিংবা গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ঘটনাটি ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র দ য় ল ধস ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক ও অস্ত্র ঠেকাতে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে বসল যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্যানার
অবশেষে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান ঠেকাতে বসানো হলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘স্ক্যানার’। আজ সোমবার দুপুর থেকে এই যন্ত্র চালু করা হয়। প্রথম যাত্রায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ টেনের আট শতাধিক যাত্রীর লাগেজ, ব্যাগ স্ক্যান করা হয়। সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে লাগেজ-ব্যাগ তল্লাশির সুযোগ পেয়ে খুশি যাত্রীরা।
আইকনিক রেলস্টেশনে মাদকদ্রব্য (ইয়াবা-আইস) ও অস্ত্র পাচার বন্ধে আগে যাত্রীদের লাগেজ, ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিয়োজিত করা হয় ডগ স্কোয়াডও। এ নিয়ে ১ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘মাদক-অস্ত্র ঠেকাতে কক্সবাজার রেলস্টেশনে ডগ স্কোয়াড’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্বোধনের এক বছর আট মাস পরও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে স্ক্যানার, তথ্যকেন্দ্র, চলন্ত লিফট, যাত্রী লাউঞ্জ, শিশু বিনোদনকেন্দ্র ও পদচারী-সেতু এবং ওপরের তলাগুলোতে শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল, তারকা মানের হোটেলসহ অন্তত এক ডজন সুবিধা চালু হয়নি। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিনের মাথায় স্ক্যানার চালু হলেও অন্য পরিষেবা চালু হয়নি এখনো।
কক্সবাজার শহরতলির চান্দেরপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয় দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সঙ্গে এই রেলস্টেশনও উদ্বোধন করা হয়। ছয়তলাবিশিষ্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৩৬ কোটি টাকা।
রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবন এখনো রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। নিচতলার কিছু কক্ষ আমরা ব্যবহার করছি।’
২০১৮ সালের জুলাইয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পের কাজ দুটি ভাগে করে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ‘কাজ শেষ করেছি। রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমাও প্রায় শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরে ভবনটি রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন সব পরিষেবা চালু হবে।’
যাত্রীদের স্বস্তি
সোমবার দুপুর ১২টায় রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে শতাধিক নারী-পুরুষ যাত্রী ঝিনুক ফোয়ারার পাশ দিয়ে রেলভবনের ফটকে ঢুকছেন। তারপর লাগেজ স্ক্যানের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছেন। ভবনের নিচতলায় লাগেজ স্ক্যানারের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বসানো হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রটি।
সংশ্লিষ্ট রেলকর্মীরা জানান, গতকাল রোববার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ ব্র্যান্ডের লাগেজ স্ক্যানার যন্ত্রটি বসানো হয়েছে। আজ দুপুর থেকে যন্ত্র দিয়ে যাত্রীদের লাগেজ স্ক্যান শুরু হলো। এতে যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
দুটি লাগেজ স্ক্যান শেষ করে প্ল্যাটফর্মে দিকে যাচ্ছিলেন ঢাকার ফতুল্লা এলাকার গৃহবধূ নিলুফা ইয়াছমিন। তিনি বলেন, তিন দিনের ভ্রমণে তিনি পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছিলেন। আগে লাগেজ তল্লাশি হতো হাতে। এখন হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রে। নতুন এই উদ্যোগ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ হয়রানি থেকে রক্ষা করবে।
লাগেজ স্ক্যানিং কার্যক্রমে নিয়োজিত আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কালেক্টর শান্ত বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজার থেকে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বেড়েছে। তাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার রেলস্টেশনে লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে। ট্রেন ছাড়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতে হচ্ছে।