একটি মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী আমিনুল গনি (টিটু) ফেসবুকে ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রীর ফাঁসি চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন একজনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেছেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন। এটাতে প্রসিকিউশনের করণীয় কিছু নেই।’

রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম এ কথা বলেন।

ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনার পক্ষে যে আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি আগেই তাঁর ফাঁসি চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এসব বিষয় ট্রাইব্যুনালের নজরে এনেছেন কি না, কিংবা এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না।

জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল তো আজকে প্রকাশ্যেই ছিলেন। আপনারাও উপস্থিত ছিলেন। এটা ট্রাইব্যুনালের বিষয়। ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করবেন তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এসেছে বা কী আদেশ দেওয়া উচিত বা কী আদেশ দিয়েছেন—এটা ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেবেন। এটা সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন। এখানে প্রসিকিউশনের করণীয় কিছু নেই।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে নারী কণ্ঠের একজনকে বলতে শোনা যায়, সারা দেশে তাঁর নামে ২২৭টি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ২২৭টি হত্যার লাইসেন্স পেয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এই অডিও ফরেনসিক পরীক্ষা করে। তাতে তারা নিশ্চিত হয় যে এ কথা বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো.

শাকিল আলমকে আসামি করে একটি আদালত অবমাননার মামলা করে। এই মামলায় দুই আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল। এর পরও তাঁরা হাজির না হলে তাঁদের পলাতক দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁদের পক্ষে ‘স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল’ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল গনিকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব প রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি

গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আট বছর গুম থাকা আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তিরা ঠিকমতো চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিতে ভয় পায়, বাড়ির মালিকেরাও বাড়িভাড়া দিতে ভয় পান।

বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমদ বিন কাসেম এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমাদের ভেতর এখন কী কাজ করছে, তা যদি আমি একটি শব্দে বলতে চাই, সেটা হলো আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।’

গুমের শিকার সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর মতে, গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের ভয় এখন সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ভীতি শুধু আমাদের ঘিরে নেই। যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চারিত হয়। একটা লোক অনেক মেধাবী। কিন্তু যখন কোনো উদ্যোক্তা জানতে পারেন, এই লোকটা একটা সময় গুম ছিলেন, তাঁকে তিনি চাকরি দিতে ভয় পাচ্ছেন।’

আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমার তো অন্তত একটা ল ডিগ্রি আছে, তাই দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি এই মাসের ভাড়াটা কীভাবে দেবেন, তা জানেন না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। আপনি যদি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমাদের ট্যাক্সের (কর) একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। সারা দুনিয়া এগিয়ে আসবে এই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে অন্তত অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের আর চিন্তা করতে না হয়।’

গুমের শিকার হয়ে আহমদ বিন কাসেম আট বছর নিখোঁজ ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করা হয়। আট বছর বন্দিশালায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট মুক্ত হন তিনি।

সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, দোষীদের ন্যায়বিচার, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে।

আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

শর্মিলা নওশিন ও তাজরিয়ান আকরামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে প্রাইভেটকার চালককে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১
  • গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি
  • দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের ওপর রায় ১০ আগস্ট
  • আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার সেই মামলা বাতিল
  • কিস ক্যাম বিতর্কের জেরে বিচ্ছেদ হলেও জরিমানা গুনতে হবে না বাইরনকে, কেন জানেন?
  • মানি লন্ডারিং মামলায় খালাস পেলেন জি কে শামীম
  • সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন
  • সিলেটে ফুটসাল টুর্নামেন্টে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আটক ১
  • না, লেনদেনে ট্রাম্প ভরসা করার মতো লোক নন
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর আদেশ এক দিন পেছাল