ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি ঘিরিয়া দেশের চিকিৎসা শিক্ষার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে যেই পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। রবিবার প্রকাশিত সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কলেজটির ফজলে রাব্বি হল, গার্লস হোস্টেল, একাডেমিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি ভবন দীর্ঘদিন পূর্বেই ব্যবহার-অযোগ্য থাকায় কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হইয়াছে। সরকারের গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস পূর্বেই ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করিয়াছে। এতৎসত্ত্বেও বহু শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি লইয়া হলটিতে বসবাস করিতে হইতেছে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক, অনেকে তথায় রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তিরও আশঙ্কা করিতেছেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বহুদিন যাবৎ নূতন হল নির্মাণের দাবি জানাইবার পরও এই ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয় নাই। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ ভবনগুলি ছাড়িতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাইলে শেষোক্তরা বাঁকিয়া বসেন। তাহাদের বক্তব্য, নিরাপদ আবাসন ও ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা না হইলে তাহারা জরাজীর্ণ ভবনেই অবস্থান করিবেন। এই অবস্থায় ঢামেকে ভবনধস বা অনুরূপ কোনো দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহা নিশ্চিতভাবেই হইবে চরম বিয়োগান্ত ঘটনা। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্যও উহা একটি লজ্জাজনক উদাহরণ সৃষ্টি করিবে। তবে শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝিতে পারিতেছে না বলিয়া আমাদের মনে হইতেছে। যেই কারণে তাহারা জোরপূর্বক ভবন খালি করিতে শনিবার কলেজটিই বন্ধ ঘোষণা করিয়াছে। শিক্ষার্থীরা যে কর্তৃপক্ষের উক্ত ঘোষণা অমান্য করিয়া উক্ত হলেই অবস্থান করিতেছেন, উহাকেও আমরা অস্বাভাবিক মনে করি না।
সর্বশেষ খবর, রবিবার শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকট সমাধানে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়াছেন। তাহাদের ঘোষণা অনুসারে, অদ্য সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢামেকের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও হলের অবস্থা পরিদর্শন না করিলে তাহারা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করিবেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের এই দাবি উচ্চারণ করিবার পূর্বেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উচিত ছিল অকুস্থলে গিয়া আলোচ্য পাঁচ দফা পূরণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নূতন ভবন ও হল নির্মাণের ব্যবস্থা করা। সত্য, সমস্যাটা যদ্রূপ স্বল্প সময়ে সৃষ্ট হয় নাই, তদ্রূপ অতি দ্রুত উহার কার্যকর সমাধানও অসম্ভব। উপরন্তু অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে, অধিক কাল অতিক্রান্ত হয় নাই। তবে দীর্ঘদিনের সমস্যা বলিয়াই তো অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হইবার কথা। উপরন্তু নাগরিকগণ অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট পূর্বসূরিদের ন্যায় বিগত সরকারের উপর দায় চাপাইয়া কোনো গুরুতর সমস্যা সমাধানে স্বীয় দায়িত্ব উপেক্ষার প্রবণতাও প্রত্যাশা করে না।
স্বীকার করিতে হইবে, বর্তমান সরকার যদি উক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে ইতোমধ্যে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিত, তাহা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করিত। মনে রাখিতে হইবে, দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষার্থীরাই চিকিৎসাবিদ্যায় সনদ লাভ করিতে আসেন। তদুপরি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক হইবার কারণে চিকিৎসাবিদ্যা একজন শিক্ষার্থীর নিকট যে অভিনিবেশ দাবি করে, তাহার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ও অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ না পাইলে তাহাদের যত ক্ষতি হইবে, ততোধিক ক্ষতি হইবে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রের।
এই সকল কিছু মিলাইয়াই সামগ্রিক চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নজর দেওয়া জরুরি। আর এই কার্যের শুভ সূচনা হইতে পারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের আলোচ্য পাঁচ দফা পূরণে আন্তরিকতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়া। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিক হইতে এহেন আন্তরিকতা প্রত্যক্ষ করিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও নিশ্চয় সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করিবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ব যবস থ অবস থ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শ্রবণ করুন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি ঘিরিয়া দেশের চিকিৎসা শিক্ষার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে যেই পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। রবিবার প্রকাশিত সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কলেজটির ফজলে রাব্বি হল, গার্লস হোস্টেল, একাডেমিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি ভবন দীর্ঘদিন পূর্বেই ব্যবহার-অযোগ্য থাকায় কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হইয়াছে। সরকারের গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস পূর্বেই ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করিয়াছে। এতৎসত্ত্বেও বহু শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি লইয়া হলটিতে বসবাস করিতে হইতেছে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক, অনেকে তথায় রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তিরও আশঙ্কা করিতেছেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বহুদিন যাবৎ নূতন হল নির্মাণের দাবি জানাইবার পরও এই ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয় নাই। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ ভবনগুলি ছাড়িতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাইলে শেষোক্তরা বাঁকিয়া বসেন। তাহাদের বক্তব্য, নিরাপদ আবাসন ও ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা না হইলে তাহারা জরাজীর্ণ ভবনেই অবস্থান করিবেন। এই অবস্থায় ঢামেকে ভবনধস বা অনুরূপ কোনো দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহা নিশ্চিতভাবেই হইবে চরম বিয়োগান্ত ঘটনা। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্যও উহা একটি লজ্জাজনক উদাহরণ সৃষ্টি করিবে। তবে শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝিতে পারিতেছে না বলিয়া আমাদের মনে হইতেছে। যেই কারণে তাহারা জোরপূর্বক ভবন খালি করিতে শনিবার কলেজটিই বন্ধ ঘোষণা করিয়াছে। শিক্ষার্থীরা যে কর্তৃপক্ষের উক্ত ঘোষণা অমান্য করিয়া উক্ত হলেই অবস্থান করিতেছেন, উহাকেও আমরা অস্বাভাবিক মনে করি না।
সর্বশেষ খবর, রবিবার শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকট সমাধানে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়াছেন। তাহাদের ঘোষণা অনুসারে, অদ্য সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঢামেকের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও হলের অবস্থা পরিদর্শন না করিলে তাহারা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করিবেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের এই দাবি উচ্চারণ করিবার পূর্বেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উচিত ছিল অকুস্থলে গিয়া আলোচ্য পাঁচ দফা পূরণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নূতন ভবন ও হল নির্মাণের ব্যবস্থা করা। সত্য, সমস্যাটা যদ্রূপ স্বল্প সময়ে সৃষ্ট হয় নাই, তদ্রূপ অতি দ্রুত উহার কার্যকর সমাধানও অসম্ভব। উপরন্তু অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে, অধিক কাল অতিক্রান্ত হয় নাই। তবে দীর্ঘদিনের সমস্যা বলিয়াই তো অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হইবার কথা। উপরন্তু নাগরিকগণ অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট পূর্বসূরিদের ন্যায় বিগত সরকারের উপর দায় চাপাইয়া কোনো গুরুতর সমস্যা সমাধানে স্বীয় দায়িত্ব উপেক্ষার প্রবণতাও প্রত্যাশা করে না।
স্বীকার করিতে হইবে, বর্তমান সরকার যদি উক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে ইতোমধ্যে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিত, তাহা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করিত। মনে রাখিতে হইবে, দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষার্থীরাই চিকিৎসাবিদ্যায় সনদ লাভ করিতে আসেন। তদুপরি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক হইবার কারণে চিকিৎসাবিদ্যা একজন শিক্ষার্থীর নিকট যে অভিনিবেশ দাবি করে, তাহার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ও অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ না পাইলে তাহাদের যত ক্ষতি হইবে, ততোধিক ক্ষতি হইবে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রের।
এই সকল কিছু মিলাইয়াই সামগ্রিক চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নজর দেওয়া জরুরি। আর এই কার্যের শুভ সূচনা হইতে পারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের আলোচ্য পাঁচ দফা পূরণে আন্তরিকতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়া। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিক হইতে এহেন আন্তরিকতা প্রত্যক্ষ করিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও নিশ্চয় সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করিবেন।