ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে কী বললেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী
Published: 24th, June 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে সই হওয়া ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ।
আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদমাধ্যম ইজভেস্তিয়া রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। গতকাল সোমবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতরত দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ট্রাম্পের এ ঘোষণার আগে ইজভেস্তিয়াকে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াবকভ। তিনি বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তে ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখছি না। তবে এর মানে এ নয় যে কূটনীতি ত্যাগ করতে হবে, বরং ঠিক তার উল্টোটা করতে হবে। এখনই সময় আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার, যেন এমন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়, যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে।’
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যেই গত শনিবার দিবাগত রাতে তেহরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর রিয়াবকভ এসব কথা বলেন।
রিয়াবকভ বলেন, রাশিয়া তেহরানের যুক্তি ও ব্যাখা বুঝতে পেরেছে। রাশিয়া মনে করছে যে ইরান এখন হামলা বন্ধ করতে প্রস্তুত, যদি অন্য পক্ষও আর উত্তেজনা না বাড়ায়।
‘উত্তেজনা হ্রাস বা হামলা বন্ধ হওয়া একটি প্রয়োজনীয় শর্ত, যাতে ইরান ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় বা আলোচনায় ফিরতে আগ্রহ দেখায়’, বলেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়া ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায্য হামলা বিশ্বকে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইরান পারমাণবিক চুক্তি সই হয় ২০১৫ সালে। চুক্তির লক্ষ্য ছিল, তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করা।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু ইসরায়েলের হামলার পর ইরান সাম্প্রতিক বৈঠকটি বাতিল করে দেয়।
আরও পড়ুনপারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা১৩ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপপরর ষ ট রমন ত র য ক তর ষ ট র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান ‘পুনর্বহাল’ করা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত: পেজেশকিয়ান
যেকোনো ‘পুনর্বহাল’ করা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার মতো প্রস্তুতি ইরানের রয়েছে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। শনিবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এর আগে শুক্রবার ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হবে কি না, তা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করে।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯টি দেশ প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয়। শুধু চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও আলজেরিয়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। দক্ষিণ কোরিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে ভোটদান থেকে বিরত থাকে। ভোটদানে বিরত থাকে গায়ানাও।
রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তব্যে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘স্ন্যাপব্যাক’ দিয়ে তারা পথ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্ক ও চিন্তাধারা তা খুলে দেয় বা নতুন পথ তৈরি করে। প্রসঙ্গত, ‘স্ন্যাপব্যাক’ বলতে কোনো কিছু হঠাৎ পুনরায় ফিরে আসা বা শুরু করাকে বোঝায়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তারা আমাদের থামাতে পারবে না। তারা নাতাঞ্জ বা ফর্দো (পারমাণবিক স্থাপনায়) হামলা চালাতে পারে। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে নাতাঞ্জ মানুষই তৈরি করেছে। মানুষই আবার সেটি নতুন করে গড়ে তুলবে।’ গত জুনে ইরানের নাতাঞ্জ বা ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছিল।
শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটির আগে গত মাসে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ৩০ দিনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তাদের অভিযোগ, ইরান ২০১৫ সালের চুক্তির শর্ত মানছে না। দেশটিকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখাই ছিল সেই চুক্তির উদ্দেশ্য।
ইরান বরাবর বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাড়াবাড়ি রকমের দাবির মুখে আমরা কখনোই নতি স্বীকার করব না। কারণ, পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে।’
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি তেহরান ও ইউরোপের প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হয়, তাহলে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আবারও কার্যকর হবে।
ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা, পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসম্পর্কিত কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা হবে। পাশাপাশি দেশটির বৈশ্বিক সম্পদ জব্দ এবং ইরানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিষদ সর্বপ্রথম ২০০৬ সালের ডিসেম্বর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তী সময়ে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১০ সালে আরও তিনটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইরান, যা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি। এই চুক্তির বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছিল জাতিসংঘ। ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়।
আরও পড়ুনইরানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, কে কোন পক্ষে ভোট দিল১৯ ঘণ্টা আগে