একটি আধা পাকা টিনশেড ঘর। মাঝখানে কাপড় ঝুলিয়ে করা হয়েছে একাধিক কক্ষ। নেই দরজা-জানালা। টিনের চালে অনেক ছিদ্র, বৃষ্টি নামলেই চুইয়ে পড়ে পানি।
এ চিত্র নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।
ঝড়-বৃষ্টি হলেই বন্ধ হয়ে যায় পাঠদান। মেঘের গর্জনে কেঁপে ওঠে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বুক। বৃষ্টিতে ভিজে যায় বই-খাতাসহ গায়ের পোশাক। তখন বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী হাজরাতলা মন্দিরের বারান্দায় ক্লাস করতে হয়।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ে পাকা ভবনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা।
মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র অলোক বিশ্বাস বলেছে, স্কুলঘরে দরজা-জানালা নেই। বৃষ্টি নামলে বই-খাতা ভিজে যায়। ঝড়ো বাতাস হলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। তাই, ক্লাসে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারি না।
নবম শ্রেণির ছাত্রী মীম খানম বলে, যখন মেঘ ডাকে বা বিদ্যুৎ চমকায় তখন ভয়ে আমাদের বুক কেঁপে ওঠে। বন্ধুরা ভালো স্কুলে পড়ে, তাদের বিদ্যালয়ে চার তলা ভবন আছে, কিন্তু আমাদের নেই। এতে আমাদের মন খারাপ হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, একটা নতুন পাকা ভবন করে দেওয়া হোক।
মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেছেন, ইচ্ছা থাকলেও ঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছি না। ভবন না থাকায় আধুনিক যুগে ডিজিটাল ক্লাস নিতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, একটি পাকা ভবন করে দিন।
নড়াইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মাউলি পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। ক্লাস নেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। এ বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকা/শরিফুল/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রীদের নিয়ে জবি ছাত্রদল নেতার আপত্তিকর মন্তব্য, সমালোচনার ঝড়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনের হিজাব ও নারী শিক্ষার্থী নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রী সংস্থার নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি ছবি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেন তিনি। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “সেরের জন্য কয়টা তালি”।
পোস্টের নিচে জিএমএস আহমাদ রেজা নামে একজন মন্তব্যের ঘরে লেখেন, “ভাই, ছবিতে সমস্যাটা কোথায়? রাজনীতি করবেন, এতোটুকু সেন্স রাখবেন না- কোথায় সমালোচনা বা ট্রল করতে হয় আর কোথায় না?” জবাবে আরেফিন লেখেন, “এই সে**ক্সটাই তো সেরের এবং সেরের ছাত্রের কাছে শিখতে চাই। সরি সেন্স।”
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামানের শাস্তি দাবি
হিজাব ইস্যুতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ২ বিচারপতির ভিন্নমত
এ মন্তব্য মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে এটাকে কুরুচিপূর্ণ ও হিজাববিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
সমালোচনার মুখে আরেফিন পোস্টটি সম্পাদনা করে লেখেন, “একদিকে রাজনীতি প্রোমোট করেন, অন্যদিকে নিষিদ্ধ। নোটটুকু এডিট করে দিলাম, নারী ও হিজাবের উপর চাপানোর অপচেষ্টা হতে পারে। নারী ও তাঁর ধর্মীয় স্বাধীনতায় আমার আজন্ম শ্রদ্ধা।”
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “এর মাধ্যমে পুরো নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে। দাড়িওয়ালা পুরুষ ও হিজাব পরা নারী নিয়ে এমন মন্তব্য বৈধ হতে পারে না। ইসলামপন্থিদের থামাতে যতই চেষ্টা করুন, তারা থামবে না।”
জবি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মন্তব্য করেন, “শামসুল আরেফিন রাজনীতি আর অভদ্রতার তফাৎ বুঝতে পারছেন না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মকারি করলেও কিছু জায়গায় তা অনুচিত। ‘হিজাব’ পরাদের সংগ্রামটাও তার মনে রাখা উচিত।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “পর্দানশীল মুসলিম নারী নিয়ে কটূক্তি জাহেলিয়াতের চরম বহিঃপ্রকাশ। মুসলিম পরিবারের কেউ এমন কথা বলতে পারে না।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিলাল হোসাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম নারী বোরখা, হিজাব বা নিকাব পরিধান করেন। বোরখা পরা ছাত্রীদের বিষয়ে কটূ মন্তব্য করা বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করায় কোনো মাহাত্ম্য নেই; বরং এতে কেবল ব্যক্তির নিজস্ব হীনমন্যতাই ফুটে ওঠে। আল্লাহ হেদায়েত দান করুন।”
প্রথম পোস্টে মন্তব্যকারী আহমাদ রেজা বলেন, “আমার মন্তব্যের জবাবের স্ক্রিনশট নিয়ে অনেক পরিচিত বন্ধু ও সিনিয়র পোস্ট করেছেন, যা আমি সচেতনতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বিষয়টিকে ধর্মীয় অবমাননা বা পর্দা নিয়ে কটাক্ষের অভিযোগে জাতীয় ইস্যুতে রূপান্তর করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করেছি, যা আমি সমর্থন করি না।”
অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা শামসুল আরেফিন বলেন, “এটি হিজাববিরোধী কটূক্তি নয়। বিষয়টি অন্যভাবে চালিয়ে দিয়ে নারী ও বোরখার ওপর চাপানোর চেষ্টা এক ধরনের দুষ্টুমি। আমি পোস্টে ছাত্র ও শিক্ষকের প্রসঙ্গ স্পষ্ট করেছি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী