সিলেট, সুনামগঞ্জ ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৪৬ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার ভোরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্বরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তাঁদের আটক করে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

আজ সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ২০ জন এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে সাতজনকে ঠেলে পাঠানো হয়। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে বিজিবি।

ভোরে জৈন্তাপুর উপজেলার মিনাটিলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঠেলে পাঠানো ১৯ জনকে আটক করে বিজিবি। তাঁরা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে আছেন তিন পরিবারের ৬ জন পুরুষ, ৬ জন নারী ও ৭ শিশু। এর আগে গত ১২ জুন জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৫৩ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে জৈন্তাপুরের মিনাটিলা সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। এ সময় বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবির সদস্যরা তাঁদের আটক করে হেফাজতে নেন।

বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঠেলে পাঠানো সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা বিভিন্ন সময় অবৈধপথে ভারতে গিয়েছিলেন। তাঁদের বাড়ি কুড়িগ্রামে। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জৈন্তাপুর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

গত ২৯ মে সিলেটের বিয়ানীবাজার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ২১ জন, ২৫ মে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ৩২ জন, ২৪ মে একই সীমান্ত দিয়ে ২১ জন, ১৪ মে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৬ জন এবং ২৮ মে ৬৬ জন ঠেলে পাঠানো ব্যক্তিকে আটক করেছিল বিজিবি।

এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনের বাড়ি কুড়িগ্রামে ও একজনের বাড়ি পাবনায়। ছাতকের নোয়াকোট সীমান্ত এলাকা তাঁদের আটক করে বিজিবি। তাঁরা বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

নাজমুল হক বলেন, সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানোর পরপরই তাদের আটক করে বিজিবি। তাঁদের ছাতক থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে ২৮ মে একই সীমান্ত দিয়ে ১৬ জন ও ১২ জুন ১৭ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছিল বিএসএফ।

এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ সাতজনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁদের আটক করে বিজিবি। পরে তাঁদের থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁদের সবার বাড়ি খুলনার দৌলতপুর উপজেলায়।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোসনাবাদ গ্রাম সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৮২ নম্বর ও ২ নম্বর সাবপিলারের ওপারে ভারতের কোচবিহারের ১৫৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মহেশমারী বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তিনটি শিশু, দুজন নারী ও দুজন পুরুষকে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠায়। বিজিবির নবীনগর ক্যাম্পের সদস্যরা স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় তাঁদের আটক করে ইউনিয়নের খারিজা জোংড়ার একটি বিদ্যালয়ের বারান্দায় আটক করে রাখেন। পরে দুপুরে তাদের পাটগ্রাম থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পুশ-ইন করা সাতজনকে থানায় দিয়েছে বিজিবি। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব যাচাইয়ের পর তাঁদের স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম ন ত এল ক ব এসএফ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বড়লেখায় ১২ রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ 

মৌলভীবাজারের বড়লেখার কুমারসাইল সীমান্ত দিয়ে ১২ রোহিঙ্গাসহ অন্তত ১৬ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। সোমবার ভোরে সীমান্তের জিরো লাইনে এনে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে দিকে ঠেলে দেয়। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বিজিবি তাদের আটক করে। এ নিয়ে গত দুই মাসে বড়লেখা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বিএসএফ প্রায় চার শতাধিক অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। 

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানান, সকালে কুমারসাইল গ্রামের লোকজন ওই এলাকায় কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশুকে ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখেন। তাদের কথা শুনে কয়েকজনকে রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ হলে স্থানীয়রা বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেয়। পরে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে লাতু ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শুনেছি বিজিবি তাদের পুলিশের হস্তান্তর করবে।

এ বিষয়ে ৫২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বড়লেখা থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুর রহমান জানান, বিজিবি আটককৃতদের এখনো থানায় হস্তান্তর করেনি। হস্তান্তর করা হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার পরমেশ্বরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ৪ যুবককে আটক করেছে বিজিবি। রোববার রাত সাড়ে ৩টায় বোচাগঞ্জ উপজেলার পরশ্বেরপুর বিওপির সীমান্তের ৩৩১ মেইন পিলারের ৮ সাব পিলারের ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তর চালান দিঘীরপাড় থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদেরকে বোচাগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বাংলাদেশি। সোমবার দিনাজপুর-৪২ বিজিবি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। 

আটককৃতরা হলেন- বোচাগঞ্জ উপজেলার নারইল গ্রামের জুবিয়ার ইসলাম, বেলবাস গ্রামের অতীন চন্দ্র রায়, বিরল উপজেলার বনগ্রামের মোনাই দীপক চন্দ্র রায় ও ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বিজিবি জানায়, তারা কাজের সন্ধানে ৩ থেকে ৪ মাস আগে দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন সীমান্ত দিয়ে ৪৬ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় আরও ১৯ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় আরও ১৯ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • বড়লেখায় ১২ রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ 
  • বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১২ রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • পুশইনের হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত
  • ভুল করে ভারতে ঢোকা বিজিবি সদস্যকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৪ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করলো বিএসএফ
  • পথ ভুলে ভারতে ঢোকা বিজিবি সদস্যকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ