কিরগিজস্তানে ২০২০ সালের অক্টোবরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের পর রাজধানী বিশকেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৬টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ভোটসীমা পেরোতে সক্ষম হয়। এই চার দলের তিনটির সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সোরনবাই জিনবেকভের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

কিরগিজস্তানের শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ চীন তখন এই অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় বেশ সংযম দেখিয়েছে। তবে সংযম তারা দেখিয়েছে এমনভাবে, যা ইঙ্গিত দেয়, গণতন্ত্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, ‘চীন আন্তরিকভাবে আশা করে, কিরগিজস্তানের সব পক্ষ আইনের মাধ্যমে, সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে এবং যত দ্রুত সম্ভব স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।’

২০২২ সালের শুরুর দিকে কাজাখস্তানে বেসামরিক বিক্ষোভ দমনে সরকার যখন সহিংস পন্থা বেছে নেয়, তখন চীনের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। চীন প্রকাশ্যে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ত তোকায়েভকে সমর্থন জানায় এবং তাঁর দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ঘোষণা দেয়, ‘বিদেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা’ এই অস্থিরতার জন্য দায়ী।

তোকায়েভের কঠোর অবস্থানের কারণে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও চীন তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন চীন প্রতিবেশী দুই দেশে সংঘটিত দুই ধরনের গণ-অভ্যুত্থানে একটির ক্ষেত্রে সংযত ও অন্যটির ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল?

আমার সদ্য প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আজকের বিশ্বে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রচারের একটি বিস্তৃত প্যাটার্নে এর উত্তর লুকিয়ে আছে।

গবেষকেরা সাধারণত ধরে নেন, স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থাগুলো একধরনের সুসংগঠিত মতাদর্শ বিদেশে ‘রপ্তানি’ করতে চায়, যেমনটি সোভিয়েত ইউনিয়ন শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিজম প্রচারের ক্ষেত্রে করেছিল। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম বিস্তার করতে চায়। তারা একদলীয় শাসন ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকে এমন এক মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, যা অন্য অনুগত সরকারগুলো গ্রহণ করতে পারে।

কিন্তু আজকের দিনে খুব কমসংখ্যক স্বৈরশাসকের একক মতাদর্শ আছে। তার বদলে, বেইজিংয়ের মতো দমনমূলক সরকারগুলো দেখাতে চায়, স্বৈরাচারী শাসনই বাস্তব জীবনের প্রশাসনিক সমস্যা বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সবচেয়ে যুক্তিসংগত সমাধান; অর্থাৎ তারা স্বৈরাচারকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন এটি স্বাভাবিক ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা।

এর পর থেকে কাজাখস্তানও তার স্বৈরাচারী পথে এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেখানে নতুন একটি গণমাধ্যম আইন কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি গণমাধ্যম ও তাদের প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি বাতিল করার ক্ষমতা পায়।

আমি একে বলি ‘স্বৈরাচার বাণিজ্যিকীকরণ’। যেমন কোনো পণ্য ভোক্তার পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী আলাদা উপায়ে বিপণন করা হয়, তেমনি চীনও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে স্বৈরাচারী চর্চাকে উৎসাহিত করে।

কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তানের উদাহরণ এই গতিশীলতারই প্রতিফলন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে কিরগিজস্তানকে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখা হতো। সেখানে সক্রিয় রাজনৈতিক বিরোধী দল, প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছিল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, চীন সেখানে যা করছে, তাকে আমি আমার গবেষণায় ‘রক্ষণাত্মক যুক্তি’ বলেছি। এর অর্থ হলো, চীন কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে স্বৈরাচারী শাসনপদ্ধতিকে গণতান্ত্রিক অস্থিরতা রোধের সম্ভাব্য প্রতিরোধক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কিরগিজস্তানে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং দেশটি ক্রমে আরও গভীরভাবে স্বৈরাচারিতার দিকে নেমে গেছে।

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রেম, গোপনে পাইলটকে নায়িকার বিয়ে!

ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া। দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করে অধিক খ্যাতি কুড়ালেও হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা শক্ত জায়গা করতে পারেননি এই অভিনেত্রী। বলিউডে পরিচিতি না পেলেও ব্যক্তিগত কারণে নানা সময়ে চর্চায় থেকেছেন সোনম। হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে পঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি নামকরা অভিনেত্রী। বলিউডে পরিচিতি তৈরি করতে না পারলেও ব্যক্তিগত জীবনের কারণে সব সময় চর্চায় থেকেছেন অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া। একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে যেমন নাম জড়িয়েছে, তেমনি বলিউড বাদশা শাহরুখের ‘প্রেমিকা’ হতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।

১৯৮৯ সালের ১৬ আগস্ট ভারতের উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোনম। বাবা-মা, জমজ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। তার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শৈশব থেকেই মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সোনমের। সেরা সুন্দরী প্রতিযোগিতা জিততে চেয়েছিলেন। স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সেখান স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে বিমানসেবিকা হিসেবে কিছু দিন কাজ করেন সোনম।

২০১২ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন সোনম। বিজয়ী হতে না পারলেও সেই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছান। সেখান থেকে সোনমের জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়। ২০১৩ সালে পাঞ্জাবি ভাষার একটি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। পাঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তারপর তামিল, তেলুগু ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেন সোনম। পাঞ্জাবি ভাষার একাধিক মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন।

বলিপাড়ায় কাজের সুযোগ পেতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয় সোনমকে। আশাভঙ্গও হয়েছিল তার। এক সাক্ষাৎকারে সোনম জানিয়েছিলেন, বলিউডের বড় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনটি হিন্দি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। পরে পরিচালক বেঁকে বসেন। চুক্তির সঙ্গে জড়িত প্রথম সিনেমার শুটিং শুরুর আগেই বাধার মুখে পড়েন। শুটিং শুরুর ছয় দিন আগে পরিচালক জানান, তিনি সোনমের উপর ভরসা করতে পারছেন না। পরে সোনমের তিনটি সিনেমার চুক্তি বাতিল হয়।

২০১৪ সালে মুক্তি পায় ফারাহ খান নির্মিত ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সিনেমাটির মোহিনী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়ে সুযোগ পাননি সোনম। শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেতে পারেন বলে অডিশন দিয়েছিলেন সোনম। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন দীপিকা পাড়ুকোন। শাহরুখের ‘প্রেমিকা’ হতে চেয়েও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি সোনমের।

ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের ভয় থেকে বলিউডের বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব ফেরান সোনম। ফিল্ম কম্পানিয়নকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেন, “ঘনিষ্ঠ দৃশে অভিনয় করতে হবে, এজন্য বলিউডের একাধিক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়েছি। কারণ পাঞ্জাবি সিনেমার দর্শকরা আহত হতে পারেন। পরে বুঝতে পারি সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল।” ২০১৯ সালে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘বালা’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেন সোনম। তাছাড়া ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্ট্রিট ড্যান্সার থ্রিডি’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। গানের দৃশ্যটি সিনেমায় না থাকলেও তা আলাদাভাবে ইউটিউবে মুক্তি পায়। 

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে রক্ষিত অগ্নিহোত্রী নামে এক পাইলটকে গোপনে বিয়ে করেন সোনম। দিল্লির বাসিন্দা রক্ষিতের সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল তার। পরে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি সোনম। এর আগে সোনমের ব্যক্তিগত জীবন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ক্রিকেটার কেএল রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সোনম। ২০১৮ সালে ইনস্টাগ্রামে সোনম ও কেএল রাহুল পরস্পরের পোস্টে কমেন্ট চালাচালি করেন। এ নিয়ে নেটিজেনরাও চর্চা কম করেননি। পরে বলিউড অভিনেত্রী আথিয়া শেঠির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং বিয়ে করেন কেএল রাহুল।

সোনমের নাম জড়িয়েছিল ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক শুভমন গিলের সঙ্গে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে দুর্দান্ত দ্বিশতরান করেন শুভমন। বার বার বড় ইনিংস খেলে শিরোনামে এসে শুভমন যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তার নেপথ্যে ছিলেন সোনম। পাঞ্জাবি ভাষার একটি চ্যাট শো সঞ্চালনা করতেন সোনম। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় শুভমনকে। শুভমনের সঙ্গে হাত মেলান সোনম। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখেই গুঞ্জন চাউর হয়, সোনমের কারণেই শুভমনের পেশাগত জীবনে সাফল্য এসেছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে সোনম লিখেছিলেন—“এসবই মিথ্যা।”

নতুন করে গুঞ্জন রয়েছে, নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সোনম কাপুর। তবে তার প্রেমিক পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রজগতের তারকা নন। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা তিনি। কিন্তু বলিপাড়ার সঙ্গেও তার কোনো যোগসূত্র নেই। যদিও এ নিয়ে টুঁ-শব্দ করেননি সোনম।

চলতি বছরে সোনম অভিনীত চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হিন্দি ভাষার সিনেমা। এগুলো হলো—‘হাউজফুল ৫’, ‘বাঘী ৪’, ‘এক দিওয়ানে কি দিওয়ানিয়ত’। বর্তমানে ‘বর্ডার টু’ সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সোনম। হিন্দি ভাষার এ সিনেমা ২০২৬ সালে মুক্তির কথা রয়েছে। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রেম, গোপনে পাইলটকে নায়িকার বিয়ে!