দেশে পাঁচ বছরের ব্যবধানে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে ২৫ শতাংশ, আবাদ বেড়েছে ৪০ শতাংশ। মাল্টা, কমলা, লেবু ও বাতাবি লেবুসহ লেবুজাতীয় ফলের আবাদ ও উৎপাদনের এই ধারা বাড়লেও মাঝে মাঝে চাষি দাম পান না। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লেবুজাতীয় ফসলের চাষ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা কৃষকবান্ধব করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ২০১৯ সালের থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এই মাসে শেষ হচ্ছে। সমাপনী কর্মশালায় প্রকল্পের অর্জন, মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা, সম্ভাবনা ও নানা চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড.

মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটওয়ারী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাইফুল আলম ও লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক ফারুক আহমদ প্রমুখ। 

কর্মশালায় বলা হয়, ২০১৮-১৯ সালে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৯০ টন, ২০২৩-২৪ সালে ২৫ শতাংশ বেড়ে উৎপাদন হয় ২ লাখ ২ হাজার ৩৮০ টন। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ এলাকা ছিল ১৩ হাজার ৮০ হেক্টর, ২০২৩-২৪ সালে ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে আবাদ এলাকা হয় ১৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৭৩৪ টন, ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১৭৭৯ টন। প্রকল্পের আওতায় ৬৫ হাজার ২৮০ কৃষককে প্রশিক্ষণ ও চারা-উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। তাদের আধুনিক ফলচাষ, রোগ ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহোত্তর সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। লেবুচাষিদের কাছে মানসম্মত চারা পৌঁছে দিতে এ প্রকল্পের আওতায় ২০টি হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃবাগান স্থাপন করা হয়।

 

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, লেবু, মাল্টা, কমলা জাতীয় ফসল দেহের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা করোনা মহামারিকালে প্রমাণিত হয়েছে। চাষ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি লেবুজাতীয় ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল চাষেরও আহ্বান জানানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কৃষি বিভাগ, বিজ্ঞানী ও চাষিদের সম্মিলিত চেষ্টায় দেশে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না। অপরদিকে ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এত বছরেও বাজার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা যায়নি। পর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকা, বাজারে পণ্য প্রবেশে সুযোগ কম থাকা এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনে দুর্বলতাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে। ফলে কৃষকের স্বার্থে সরকারকে বাজার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দিকে জোর দিতে হবে। উৎপাদক ও ভোক্তা দুজনের কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা। 

কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষক যখন যে ফসল লাভজনক দেখেন সেই ফসলের দিকে ঝুঁকেন। কিন্তু কখনও কখনও বাম্পার ফলন করেও কৃষক দাম পান না। শ্রম-ঘামের স্বপ্নের ফসল কৃষকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সরকার কৃষকের এমন বঞ্চনা দূর করতে কাজ করছে। দীর্ঘ দিনের এই সমস্যা দূর করতে ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি চাষি ও ভোক্তা দুজনের কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সরকার নিশ্চিত করবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে কৃষিতে নতুনত্ব নিয়ে আসার কাজ চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ বছর মেয়াদি কৃষি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ফলে চাহিদা এবং উৎপাদনের হিসাব করে কতটুকু উৎপাদন কীভাবে বাড়াতে হবে সেই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হবে। 
তিনি বলেন, একটি ফসল একযোগে সারাদেশে বেশি উৎপাদন হলে চাহিদা কমে যায়। ফলে দামও পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে চাহিদা, উৎপাদন ও অঞ্চলভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে ফসলের আবাদ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ব জ ত য় ফসল র প রকল প র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২%

বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল–জুনে দেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, যা ওই প্রান্তিকের রপ্তানি দক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ (পরে কমে হয়েছে ২০ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক আরোপ। তখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর না হলেও তা ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এবারে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, এ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চীনের শুল্ক এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। সময়মতো পণ্য পাঠানোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা ইত্যাদি কারণে রপ্তানির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে পণ্য পাঠানো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা রপ্তানির গতি শ্লথ করে দেয়।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কমেছে

বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল–জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কিছুটা কমেছে। এই প্রান্তিকে দেশ থেকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়। তার মানে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।

গত ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের গরমিলের বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। এরপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমে যায়।

রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন আরও বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৫৭ থেকে সাড়ে ৬১ শতাংশ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই–সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর–ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপরের দুই প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে হয় যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৯০ ও ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে বৃদ্ধ হারালেন ১২ কোটি টাকা
  • পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২%
  • পাঁচ বছরে ৩৯.৬১ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি
  • টিএসসিতে আবু সাঈদ-ওয়াসিমের স্ট্যাটাসে সাঈদীর ছবি প্রদর্শন শিবিরের
  • এনআরবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন