মাদকের গডফাদাররা ধরা পড়ছে না বলে নিজেই স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এক, মাদক; দুই, দুর্নীতি। তবে আগের চেয়ে মাদকের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের বেশি ধরা হচ্ছে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে ‘মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫’ পালন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শুধু মাদক বহনকারীদের ধরা হয়। গডফাদারদের ধরা হচ্ছে না। মাদকের গডফাদারদের ধরতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, একসময় মাদকের সঙ্গে বদির (কক্সবাজারের এমপি আবদুর রহমান) নাম ছিল। এখন অনেক বদি জন্ম নিয়েছেন। তাঁদের ধরতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান তিনি।

এ সময় এক সাংবাদিক জানতে চান, ঢাকায় মাদকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযান পরিচালিত হয়, তা কার্যকর নয়। এ প্রশ্নের জবাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক হাসান মারুফ বলেন, এ কথা সত্যি যে অভিযান কার্যকর হচ্ছে না। তবে এর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তারা যেমন জড়িত রয়েছেন, তেমনি গণমাধ্যমকর্মীরাও রয়েছেন। সম্প্রতি বনানীতে দুটি অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেছে, মাদকের সঙ্গে সমাজের অনেক গোষ্ঠী রয়েছে। তখন সাংবাদিকেরা গণমাধ্যমকর্মী ও কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করতে বলেন। এ সময় মাদকদ্রব্যের ডিজি বলেন, সবাইকে নিজ অন্তর থেকে পরিশুদ্ধ হতে হবে।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজির উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যা চেয়েছেন, তা–ই দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এখন আর মাদক বহনকারীকে ধরে লাভ নেই। ধরতে হবে গডফাদারদের। গডফাদাররা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বসে আছে। আমাদের সঙ্গে চা খেয়ে থাকে। ঘোরাফেরা করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাদকের সঙ্গে যুক্ত উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁকে শিগগিরই কেরানীগঞ্জে কারাগারে ঢোকানো হবে। ওই কর্মকর্তা কে—এমন প্রশ্ন করলে তিনি নাম বলেননি।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৩২টি বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত গডফ দ

এছাড়াও পড়ুন:

লিবিয়া উপকূলে ২৬ বাংলাদেশি অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, ৪ জনের মৃত্যু

লিবিয়া উপকূলে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের বহনকারী দুটি নৌকা ডুবে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। লিবীয় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এ তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে উপকূলীয় শহর আল–খুমসের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথম নৌকাটিতে বাংলাদেশ থেকে আসা ২৬ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন।

রেড ক্রিসেন্ট জানায়, দ্বিতীয় নৌকায় ৬৯ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন মিসরীয়। অনেক সুদানিও ছিলেন। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়। বলা হয়, এ নৌকার যাত্রীদের মধ্যে আটটি শিশু ছিল।

আল–খুমস হলো রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ১১৮ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত একটি উপকূলীয় শহর।

রেড ক্রিসেন্ট জানায়, দ্বিতীয় নৌকায় ৬৯ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন মিসরীয়। অনেক সুদানিও ছিলেন। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়। বলা হয়, এ নৌকার যাত্রীদের মধ্যে আটটি শিশু ছিল।

২০১১ সালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো-সমর্থিত এক আন্দোলনে লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। এর পর থেকে দেশটি যুদ্ধ ও দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য প্রধান ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে।

লিবীয় রেড ক্রিসেন্টের প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো মৃতদেহগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা। অন্য ছবিতে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, উদ্ধার হওয়া লোকেরা কম্বল জড়িয়ে মাটিতে বসে আছেন।

আরও পড়ুনলিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, উদ্ধারকাজে উপকূলরক্ষী বাহিনী ও আল–খুমস পোর্ট সিকিউরিটি এজেন্সি অংশ নেয়। শহরের সরকারি কৌঁসুলির নির্দেশে মৃতদেহগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গত বুধবার জানিয়েছে, আল বুরি তেলক্ষেত্রের কাছে একটি রাবারের নৌকা ডুবে কমপক্ষে ৪২ জন অভিবাসী নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁরা মারা গেছেন বলে মনো করা হচ্ছে। তেলক্ষেত্রটি লিবিয়ার উত্তর–উত্তরপশ্চিম উপকূলে অবস্থিত।

গত অক্টোবরের মাঝামাঝি ত্রিপোলির পশ্চিম উপকূলে ৬১ জন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বরে আইওএম জানিয়েছিল, লিবিয়ার উপকূলে সুদানের ৭৫ জন শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকায় আগুন লাগার পর অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন।

গত অক্টোবরের মাঝামাঝি ত্রিপোলির পশ্চিম উপকূলে ৬১ জন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বরে আইওএম জানিয়েছিল, লিবিয়ার উপকূলে সুদানের ৭৫ জন শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকায় আগুন লাগার পর অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন।

আরও পড়ুনলিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় ৬ অভিবাসীর লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ২৯১৬ এপ্রিল ২০২২

গত সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসংঘের এক বৈঠকে যুক্তরাজ্য, স্পেন, নরওয়ে ও সিয়েরা লিয়নসহ কয়েকটি দেশ লিবিয়াকে সেসব আটককেন্দ্র বন্ধ করার আহ্বান জানায়; যেখানে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী অভিবাসী ও শরণার্থীদের নির্যাতন, মারধর এমনকি কখনো হত্যা পর্যন্ত করা হয়।

আরও পড়ুনলিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে অন্তত ৬১ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু: আইওএম১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লিবিয়া উপকূলে ২৬ বাংলাদেশি অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, ৪ জনের মৃত্যু
  • লিবিয়ায় নৌকাডুবি: ৪ বাংলাদেশির মৃত্যু