হলের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ‘আত্মহত্যার’ চেষ্টা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের চার তলার ছাদ থেকে তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে লাফ দেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টার আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট করেন।

মঙ্গলবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। তার দুই পা ভেঙে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। 

ফেসবুক পোস্টে প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘তুমি জানতা, তোমাকে আমি কত্তটা ভালোবাসি। তবুও কেন এমন করলে? সব জায়গায় সেইম ইফোর্ট, সেইম ডায়ালগ কীভাবে পার? মানুষ এতটা সাইকো কীভাবে হয়? তোমাকে তো বলেই ছিলাম, আমার সঙ্গে চিট করলে কিন্তু আমার বন্ধু ফিরোজের মতো আমাকেও মরা ছাড়া উপায় থাকবে না। এত্ত করে বুঝাইলাম তাও বুঝলে না।’

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি মাত্রই ছাদে উঠেছিলাম, তিনতলায় উঠার পরে একজন জোরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে এবং পরক্ষণেই হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। তারপর ওখান থেকে দৌড়ে এসে দেখি একজন মাটিতে পড়ে আছে। তার পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। দুই পাই ভেঙে গেছে মনে হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স এসে তাকে রামেকে নিয়ে যায়।’

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো.

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাইরে ছিলাম। ঘটনাটি শোনার পর হলে গিয়ে শুনতে পেলাম তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সে ফার্স্ট ব্লকের চারতলা থেকে লাফ দিয়েছিল। সম্ভবত তার একটা পা ভেঙে গেছে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শোনামাত্রই সেখানে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছি। তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি।’

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর রাজকীয় বিদায়

৩৫ বছরের চাকরিজীবনের শেষ দিনে এমন সম্মান পাবেন, তা কল্পনাও করেননি ফেনীর সেন্ট্রাল হাই স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সন্তোষ লাল। বিদায়বেলায় গলায় ফুলের মালা, হাতে উপহার, চারপাশে ভালোবাসার ডালি নিয়ে হাজির হন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা। সুসজ্জিত গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়ি পর্যন্ত। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সন্তোষ লালসহ সবাই।

বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে রবিবার (২২ জুন) দুপুরে সন্তোষ লালকে দেওয়া হয় বিদায় সংবর্ধনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।

বিদায় অনুষ্ঠানে নগদ অর্থ, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উপহার পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সন্তোষ লাল। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, “একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে জীবনে কখনো ভাবিনি যে, এমন ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিতে পারব। এই স্কুলই আমার পরিবার।”

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী উপহার হিসেবে স্কুলের বিভিন্ন শাখা থেকে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫ লাখ টাকার বেশি অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে সন্তোষ লালকে। এর মধ্যে দিবা শাখার শিক্ষক পরিষদ ৫৪ হাজার, প্রভাতী শাখা ৫০ হাজার, দিবা শাখার শিক্ষার্থীরা ৬০ হাজার ৫৭০, প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থীরা ৫৯ হাজার ১৩০ এবং স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সেন্ট্রালিয়ান’-এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০ টাকা।

বিদ্যালয় চত্বরে স্কাউটস গ্রুপের পক্ষ থেকে সন্তোষ লালকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এর পর ফুলে সজ্জিত গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় সন্তোষ লালকে, যেন কোনো বীরের বিজয়যাত্রা।

১৯৭৩ সালে মাত্র ৯-১০ বছর বয়সে মা সুন্দরী রানীর হাত ধরে ফেনী সেন্ট্রাল স্কুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পা রাখেন সন্তোষ লাল। পরে বাবা কানু লালও একই পেশায় যুক্ত হন। সেই ধারাবাহিকতায় স্ত্রী সনজু রানীসহ সন্তোষ লালও দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ওই স্কুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে সুলতানপুরের বাসিন্দা তিন কন্যা সন্তানের জনক সন্তোষ লাল। তিনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং পায়ের সংক্রমণে ভুগছেন। অসুস্থতার কারণেই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি।

ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, “সন্তোষ দার মতো দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মচারীকে সম্মান জানিয়ে বিদায় দিতে পারা আমাদের সৌভাগ্য।”

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষক নিখিল চন্দ্র পাল, শাহজাহান চৌধুরী, বর্তমান সিনিয়র শিক্ষক তাজুল ইসলাম ভুঞা, সহকারী প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক চৌধুরী বেলাল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব নবী, ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন, যুগ্ম সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াদ, প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শতাধিক ‘সেন্ট্রালিয়ান’।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল বলেছেন, “সন্তোষ দা কেবল একজন কর্মচারী নন, এই বিদ্যালয়ের ইতিহাসের অংশ। আমরা চাই, এমন মানুষের সম্মানজনক বিদায় যেন একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়ায়।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভিনয় নাকি নির্মাণ, কোন পথে হাঁটছেন পলাশ
  • নেতানিয়াহু ‘একজন যোদ্ধা’, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প
  • ‘তোমাকে কতটা ভালোবাসি’ লিখে হলের ছাদ থেকে ছাত্রের লাফ
  • নেতানিয়াহুর মতো ‘মহান নায়ককে’ ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প
  • ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হলের ছাদ থেকে লাফ দিলেন রাবি শিক্ষার্থী
  • ফেসবুকে ‘তোমাকে কতটা ভালোবাসি’ লিখে হলের ছাদ থেকে লাফ
  • ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহারান মামদানি
  • নিউ ইর্য়কের ডেমোক্র্যাট ‘চমক’ ৩৩ বছরের মামদানি
  • বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর রাজকীয় বিদায়