প্রথমে নির্মাতা, পরে হয়ে গেলেন অভিনেতা। ভিন্নধর্মী অভিনয় দিয়ে এখন জয় করছেন দর্শক হৃদয়। তিনি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। এ অভিনেতা যখনই নতুন কোনো কাজ নিয়ে হাজির হন, দর্শক তা সাদরে গ্রহণ করেন। চেনা ছকের বাইরে গত ঈদে তাঁকে দেখা গেছে ‘কেন এই সঙ্গতা’ নাটকে। পারিবারিক গল্পের এ নাটকটিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। 

পলাশ বলেন, ‘আমি সব সময় ভালো গল্প ও স্ক্রিপ্টের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি। কাজের ফর্দ ঘাটলে দেখবেন আমার প্রতিটি কাজই আলাদা। ‘কেন এই সঙ্গতা’ আমার কাছে ভিন্নধর্মী গল্প মনে হয়েছে। এটি আসলে অনেক মানুষের গল্প। তা ছাড়া নির্মাতা আশিকুর রহমান পছন্দের একজন নির্মাতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আমার সবসময় থাকে। সে কারণেই কাজটি করেছি। কাজটিতে দর্শক সাড়াও মিলছে বেশ।’

‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে কাবিলা চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি এই নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন পলাশ। কাবিলা চরিত্রটি এখনও মানুষের মুখে মুখে। চরিত্রের জনপ্রিয়তার আড়ালে হারাতে বসেছে তাঁর আসল নামটিই। সম্প্রতি ক্লাব ইলেভেনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার শুরু হয়েছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’- সিজন ফাইভ। নাটকটি প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটি নিয়ে প্রতিবারই ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল। 

এবারে যেহেতু কাজটি ওটিটিতে এসেছে, তাই নতুন দর্শক কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নতুন যারা দেখছেন, তাদের কাছে এটি বেশি ভালো লাগছে। আবার অনেকেই বলছেন, ‘আগের ওই জিনিসটা মিস করছি’। আড়াই বছর পর শুট করেছি, তাই অনেক কিছুর বদল হয়েছে। প্রত্যেক নিজের জীবনেও তো এই লম্বা সময়ে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কাবিলা জীবনেরও এসেছে। কাবিলা এখন  আগের চেয়ে অনেক ম্যাচিউরড, সে ডিসিশন নিতে জানে। যদিও ফাঁপরবাজিটা আছে, তবে এবার সেটা আরও ইনোভেটিভ। তাঁর ঘরবাড়ির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। এরই মধ্যে মাত্র ৮টি পর্ব প্রচার হয়েছে। আরও ১১২টি পর্ব প্রচার বাকি। এই যে আমার জীবনযাপন পরিবর্তন হয়েছে, এর পেছনেও তো গল্প আছে। এটি ধাপে ধাপে দেখানো হবে। জীবনযাপনের পরিবর্তন, মানুষগুলোর হারিয়ে যাওয়ার সবকিছুর উত্তর আমরা নাটকে পাব।’  

অভিনয় দিয়ে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেলেও পলাশ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পরিচালক হিসেবে। পরিচালনা দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি হুট করে হয়ে গেলেন অভিনেতা! একে একে অভিনয় করেছেন অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটকে। পরিচালনায়ও দেখিয়েছেন মুনশিয়ানা।  

অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও নিজের পরিচালনা থেকে দূরে থাকেননি তিনি। ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফি’, ‘সারপ্রাইজ’, ঘরে ফেরা’ ‘সন্ধ্যা ৭টা’সহ অনেক কাজই আলোচিত হয়েছে। 

পলাশ বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও নিজের ভেতর আমি একজন নির্মাতা। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। নিজের ভাবনাগুলো পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে দেখাতে চাই। সে লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’

বর্তমানে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ফাইভ-এর শুটিং নিয়েই ব্যস্ত পলাশ। পাশাপাশি নতুন কয়েকটি কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তাঁর নির্দেশনায় নতুন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক পরিচালনায় তাঁকে দেখা যাবে। 

নির্মাণ-অভিনয়ের বাইরে সামাজিক কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ‘ডাক বাক্স’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন তিনি। এর মাধ্যমে অসহায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা।

পলাশ বলেন, ‘ডাকবাক্স’ আমার একটি স্বপ্নের ফাউন্ডেশন। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এ ফাউন্ডেশনের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি যে শুধু মানুষকে সাহায্য করে তা নয়, এটি দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। মানুষ যাতে নিজেদের কর্মসাধন করে নিজেরাই এখান থেকে পয়সা রোজগার করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে। এ কাজটি ডাকবাক্সের মাধ্যমে করতে চাই। আশা করছি, এ মহতী কাজে সবাইকে পাশে পাব।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

নিউ ইর্য়কের ডেমোক্র্যাট ‘চমক’ ৩৩ বছরের মামদানি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের জন্য চকম হয়ে এসেছে একটি নাম। সেই নামটি হলো জোহরান মামদানি। ৩৩ বছর বয়সি এই মুসলিম তরুণ নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার পথে রয়েছেন। দলীয় প্রাইমারি ভোটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। 

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত করেছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্র কুয়োমোকে। পরাজয় স্বীকার করে মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কুয়োমো বলেছেন, “আজ রাত তার, সে-ই এটার যোগ; সে জিতেছে।” 

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বুধবার সকালে এক্সে (সাবেক টুইটার) সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি লেখেন, “নেলসন ম্যান্ডেলার কথায়, ‘এটা সবসময়ই অসম্ভব মনে হয়, যতক্ষণ না সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে। বন্ধুরা, সেটা সম্ভব হয়েছে। আর আপনারাই সেটা করেছেন। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট মনোনীত প্রার্থী হতে পেরে আমি সম্মানিত।”

আরো পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাল ব্রিকস

হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি: মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য

প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মামদানি পেয়েছেন ৪৩ দশমকি ৫ শতাংশ ভোট, যেখানে কুয়োমো পেয়েছেন ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কুইন্স, ব্রুকলিন ও ম্যানহাটনের বেশিরভাগ জায়গায় মামদানি বড় জয় পেয়েছেন, আর কুয়োমো জিতেছেন ব্রঙ্কস ও স্টেটেন আইল্যান্ডে।

প্রাইমারি নির্বাচনের আগে মামদানি তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর জাতীয় রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতার সময় নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

তার গল্প অনেকটা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্তেজের মতো, যিনি ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসনাল নির্বাচনে চমকপ্রদ জয়ের মাধ্যমে মার্কিন রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে এই প্রাইমারি নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি।

নিউ ইয়র্কের প্রাইমারি ভোটিং প্রক্রিয়ায় ভোটাররা তাদের পছন্দের শীর্ষ পাঁচজন প্রার্থীকে র‍্যাংক করতে পারেন। তাই যারা মামদানিকে প্রথম পছন্দ হিসেবে ভোট দেননি, তাদের ভোটও আগামী কয়েক দিনে গণনা করা হবে। 

বার্তা সংস্থা এপির মতে, মামদানির অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে কৌশলগত জোট গঠনের ফলে তিনি সম্ভবত ৫০ শতাংশের গণ্ডি পেরিয়ে যাবেন।

নিউ ইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ফলে মামদানিকে ঘিরে সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছে যে, তিনি শহরের প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হবেন; যদি তিনি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে নির্বাচনে হারাতে পারেন। 

অ্যাডামস এবার একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন কার্টিস স্লিওয়া।

মামদানি জন্মগ্রহণ করেন উগান্ডায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে এবং ছোটবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তার মা মীরা নায়ার একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক আর তার উগান্ডায় জন্ম নেওয়া বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। মামদানির দাদা ভারতীয়।

ফিলিস্তিনি আন্দোলনের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় নিউ ইয়র্কের কিছু মানুষ তার বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তোলেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গাজার যুদ্ধকে সমর্থন করা নিয়ে সমালোচনামুখর প্রগতিশীল ও তরুণ ভোটারদের সমর্থন লাভ করেন।

‘আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার দায়িত্ব’
নিউ ইয়র্কে ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইহুদি জনগোষ্ঠী রয়েছে, পাশাপাশি এখানে একটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনগোষ্ঠীও বাস করে। তাই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচনেও ভোটারদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব ফেলবে।

ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি ভোটের কয়েকদিন আগে স্টিফেন কোলবার্টের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দ্য লেট শো উইথ স্টিফেন কোলবার্ট-এ এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলেন মামদানি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত কৌতুকশিল্পী কোলবার্টের প্রশ্নের জবাবে মামদানি বলেন, তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের সঙ্গে একমত। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা করার দায়িত্বও তাদের রয়েছে।”

তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনার কথা স্বীকার করে নিউ ইয়র্কে একটি কমিউনিটি সেফটি ডিপার্টমেন্ট গঠনের প্রস্তাব দেন এবং ঘৃণামূলক অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রমের বাজেট ৮০০ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

মামদানির প্রচারে নিউ ইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয়সংক্রান্ত সমস্যাগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেমন ভাড়ার হার কমিয়ে আনা, ফ্রি বাস সার্ভিস এবং সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মুদি দোকান চালুর প্রতিশ্রুতি।

৬৭ বছর বয়সি অ্যান্ড্রু কুয়োমো শুরুতে মূলধারার প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন কিন্তু তার প্রচার ঘিরে নানা বিতর্ক মামদানিকে অতিরিক্ত সুবিধা এনে দেয়।

২০২১ সালে যৌন অসদাচরণের অভিযোগে কুয়োমোকে নিউ ইয়র্কের গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। আর তার মেয়র পদে প্রার্থী হওয়াকে অনেকে তার ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছেন।

তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫ মিলিয়ন ডলারের সুপার প্যাক (স্বতন্ত্র ব্যয়ভিত্তিক রাজনৈতিক কমিটি) এবং সাবেক মেয়র ও ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমর্থন সত্ত্বেও কুয়োমো তার পুরোনো কেলেঙ্কারির ছাপ মুছতে পারেননি।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জোহরান মামদানির উত্থান: ফিলিস্তিনপন্থি রাজনীতির সুযোগ বাড়ার আভাস
  • নেতানিয়াহু ‘একজন যোদ্ধা’, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প
  • ‘তোমাকে কতটা ভালোবাসি’ লিখে হলের ছাদ থেকে ছাত্রের লাফ
  • নেতানিয়াহুর মতো ‘মহান নায়ককে’ ক্ষমা করে দেওয়া উচিত: ট্রাম্প
  • ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হলের ছাদ থেকে লাফ দিলেন রাবি শিক্ষার্থী
  • ফেসবুকে ‘তোমাকে কতটা ভালোবাসি’ লিখে হলের ছাদ থেকে লাফ
  • হলের ছাদ থেকে রাবি শিক্ষার্থীর লাফ
  • ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহারান মামদানি
  • নিউ ইর্য়কের ডেমোক্র্যাট ‘চমক’ ৩৩ বছরের মামদানি