অভিনয় নাকি নির্মাণ, কোন পথে হাঁটছেন পলাশ
Published: 26th, June 2025 GMT
প্রথমে নির্মাতা, পরে হয়ে গেলেন অভিনেতা। ভিন্নধর্মী অভিনয় দিয়ে এখন জয় করছেন দর্শক হৃদয়। তিনি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। এ অভিনেতা যখনই নতুন কোনো কাজ নিয়ে হাজির হন, দর্শক তা সাদরে গ্রহণ করেন। চেনা ছকের বাইরে গত ঈদে তাঁকে দেখা গেছে ‘কেন এই সঙ্গতা’ নাটকে। পারিবারিক গল্পের এ নাটকটিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘আমি সব সময় ভালো গল্প ও স্ক্রিপ্টের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি। কাজের ফর্দ ঘাটলে দেখবেন আমার প্রতিটি কাজই আলাদা। ‘কেন এই সঙ্গতা’ আমার কাছে ভিন্নধর্মী গল্প মনে হয়েছে। এটি আসলে অনেক মানুষের গল্প। তা ছাড়া নির্মাতা আশিকুর রহমান পছন্দের একজন নির্মাতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আমার সবসময় থাকে। সে কারণেই কাজটি করেছি। কাজটিতে দর্শক সাড়াও মিলছে বেশ।’
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে কাবিলা চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি এই নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন পলাশ। কাবিলা চরিত্রটি এখনও মানুষের মুখে মুখে। চরিত্রের জনপ্রিয়তার আড়ালে হারাতে বসেছে তাঁর আসল নামটিই। সম্প্রতি ক্লাব ইলেভেনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার শুরু হয়েছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’- সিজন ফাইভ। নাটকটি প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটি নিয়ে প্রতিবারই ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল।
এবারে যেহেতু কাজটি ওটিটিতে এসেছে, তাই নতুন দর্শক কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নতুন যারা দেখছেন, তাদের কাছে এটি বেশি ভালো লাগছে। আবার অনেকেই বলছেন, ‘আগের ওই জিনিসটা মিস করছি’। আড়াই বছর পর শুট করেছি, তাই অনেক কিছুর বদল হয়েছে। প্রত্যেক নিজের জীবনেও তো এই লম্বা সময়ে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কাবিলা জীবনেরও এসেছে। কাবিলা এখন আগের চেয়ে অনেক ম্যাচিউরড, সে ডিসিশন নিতে জানে। যদিও ফাঁপরবাজিটা আছে, তবে এবার সেটা আরও ইনোভেটিভ। তাঁর ঘরবাড়ির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। এরই মধ্যে মাত্র ৮টি পর্ব প্রচার হয়েছে। আরও ১১২টি পর্ব প্রচার বাকি। এই যে আমার জীবনযাপন পরিবর্তন হয়েছে, এর পেছনেও তো গল্প আছে। এটি ধাপে ধাপে দেখানো হবে। জীবনযাপনের পরিবর্তন, মানুষগুলোর হারিয়ে যাওয়ার সবকিছুর উত্তর আমরা নাটকে পাব।’
অভিনয় দিয়ে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেলেও পলাশ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পরিচালক হিসেবে। পরিচালনা দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি হুট করে হয়ে গেলেন অভিনেতা! একে একে অভিনয় করেছেন অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটকে। পরিচালনায়ও দেখিয়েছেন মুনশিয়ানা।
অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও নিজের পরিচালনা থেকে দূরে থাকেননি তিনি। ‘ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফি’, ‘সারপ্রাইজ’, ঘরে ফেরা’ ‘সন্ধ্যা ৭টা’সহ অনেক কাজই আলোচিত হয়েছে।
পলাশ বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও নিজের ভেতর আমি একজন নির্মাতা। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। নিজের ভাবনাগুলো পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে দেখাতে চাই। সে লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমানে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ফাইভ-এর শুটিং নিয়েই ব্যস্ত পলাশ। পাশাপাশি নতুন কয়েকটি কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তাঁর নির্দেশনায় নতুন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই ভিন্নধর্মী গল্পের নাটক পরিচালনায় তাঁকে দেখা যাবে।
নির্মাণ-অভিনয়ের বাইরে সামাজিক কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ‘ডাক বাক্স’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন তিনি। এর মাধ্যমে অসহায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা।
পলাশ বলেন, ‘ডাকবাক্স’ আমার একটি স্বপ্নের ফাউন্ডেশন। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এ ফাউন্ডেশনের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি যে শুধু মানুষকে সাহায্য করে তা নয়, এটি দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। মানুষ যাতে নিজেদের কর্মসাধন করে নিজেরাই এখান থেকে পয়সা রোজগার করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে। এ কাজটি ডাকবাক্সের মাধ্যমে করতে চাই। আশা করছি, এ মহতী কাজে সবাইকে পাশে পাব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দা
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা পুরো গাজা সিটি ‘দখলে’ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। আগামী কয়েক মাসে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির প্রায় ১০ লাখ মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা রয়েছেন। প্রাণ হারাতে পারেন আরও কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজা সিটি দখলে নেওয়ার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের এ পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার বৈঠকে গাজা উপত্যকার বৃহত্তম নগরী গাজা সিটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনাটি পাস হয়।
পরে গতকাল ভোরে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আইডিএফ (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) গাজা সিটি দখলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে। একই সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা বেসামরিক মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করবে।
এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন করে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন শুরু করেছে। গাজা সিটিতে অভিযান শুরু করতেই এ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটি দখলে নেওয়ার অভিযান কবে শুরু হবে, তা জানানো হয়নি। তবে ইসরায়েলের দুটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েক ধাপে গাজা সিটি দখলে নেওয়া হবে। প্রথম ধাপ চলবে দুই মাস, যা আগামী ৭ অক্টোবর শেষ হবে। এদিনই ইসরায়েলের হামলার দুই বছর পূর্ণ হবে।
এই দুই মাসে গাজা সিটির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নানাভাবে বাধ্য করা হবে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোয় ত্রাণ বিতরণ বৃদ্ধি করা হবে, যাতে গাজা সিটির বাসিন্দারা সেদিকে চলে যান।
তবে গাজা সিটি সম্পূর্ণ দখলে নিতে পাঁচ মাস লাগতে পারে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গাজা উপত্যকার আনুমানিক ৭৫ শতাংশ দখল করেছে ইসরায়েল। গাজা সিটি দখলের মধ্য দিয়ে তা প্রায় ৮৫ শতাংশ হবে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইসরায়েলের এ পরিকল্পনা পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনার অংশ। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু এমনটিই জানিয়েছিলেন।
ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ইংরেজি ‘অকুপাই’ (দখল) শব্দের পরিবর্তে ইংরেজি টেকওভার (নিয়ন্ত্রণ বা দখল) সচেতনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীন আনুষ্ঠানিক ‘দখলদারি’বিষয়ক আইনি বাধ্যবাধকতা এড়ানো যায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় দুই বছর পূর্ণ হতে চলা এ যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৬১ হাজার ২৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকাটির আনুমানিক ২১ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই কয়েকবার করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল সরকারের পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের পরিপন্থী।
নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ দখল নেওয়ার ঘোষণাকে ‘নির্জলা অপরাধ’ উল্লেখ করে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, অনাহারে রাখা ও অবরোধের ধারাবাহিকতা। গাজা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ইসরায়েলকে বড় মূল্য চুকাতে হবে এবং বাকি সব জিম্মিকে হারাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। নেতানিয়াহুর এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যবহার হতে পারে, এমন অস্ত্র ইসরায়েলে রপ্তানি স্থগিত করেছে জার্মানি। ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে নিজেরা বড় রকমের উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছে চীন।
এর বাইরে সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুর গাজা সিটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কাছে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণার পর আজ শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা ছাড়া ১৫ সদস্যের পরিষদটির বাকি সদস্যরা এ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। আজ নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বেলা তিনটা (বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত একটা) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর একজন মুখপাত্র।