‘মৃত্যুর আগে ছেলের গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দেখে যেতে চাই’
Published: 26th, June 2025 GMT
‘রোগশোকে আমি জর্জরিত। শরীর আর চলছে না, নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি, তবুও সুস্থ হতে পারছি না। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছি না। এক ছেলে গুমের শিকার হয়েছে, অপর ছেলে দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। বিগত ১১ বছর ছেলের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো হদিস পাইনি। থানা-পুলিশ মামলা নেয়নি। আদালতেও মেলেনি সহযোগিতা। গুমের শিকার ব্যক্তিদের তদন্তে গঠিত গুম কমিশনে ছেলের গুমের তথ্য জমা দিয়েছি। মৃত্যুর আগে অন্তত ছেলের গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দেখে যেতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকার আমার ছেলের গুমের বিচার করবে, আমি সেই প্রত্যাশা করছি।’
নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীতে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তব্য দেন গুমের শিকার যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের মা রওশন আরা বেগম। গলায় ছেলের ছবি ঝুলিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে ২০১৪ সালের ২১ মার্চ মধ্যরাতে শহরের ওয়াপদা এলাকার সরকারি বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ১১ বছর তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আবদুর রহিম। দিবসের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মানবাধিকারকর্মী শেখ আশিকুন্নবী।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাপ্তাহিক আনন্দ তারকা পত্রিকার সম্পাদক এম মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহিউদ্দিন খন্দকার, লায়ন্স ক্লাব অব ফেনীর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জাফর উল্লাহ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাজমুল হক।
নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবসের মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতিটি সরকারের আমলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তা চরম আকার ধারণ করে। এই সময় র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে। অধিকার–এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারে আমলে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৮২ ব্যক্তি নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২০২৪–এর ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২০ জুন পর্যন্ত ১০ ব্যক্তি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে: আদালতে হাবিবুল আউয়াল
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতকে বলেছেন, “২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন। এটি ছিল প্রহসনের নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানিতে তার প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন হাবিবুল আউয়াল।
হাবিবুল আউয়ালের এমন উত্তরের পর তাকে আদালত প্রশ্ন করেন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন? আদালতের এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, “অতীতে কোনো সিইসি পদত্যাগ করেননি।”
আরো পড়ুন:
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে
আউয়াল প্রসঙ্গে ডিবি
বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন, ভোটের পরিসংখ্যান নিয়েও করেন মিথ্যাচার
হাবিবুল আউয়াল পরে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের অনিয়মের প্রসঙ্গ আদালতে তুলে ধরেন। দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
এ মামলায় হাবিবুল আউয়ালকে বুধবার সকালে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
একই মামলায় গত রবিবার আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সোমবার তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।
মামলায় ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়। মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের ধারা যুক্ত করার বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ আবেদন করলে গতকাল তা মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারী, এ কে এম শহীদুল হক প্রমুখ।
ঢাকা/এম/এসবি