চাকরি দেওয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে এক তরুণকে অপহরণ, দাবি করা হয় মুক্তিপণ
Published: 26th, June 2025 GMT
চাকরি দেওয়ার কথা বলে দিনাজপুর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে এনে এক তরুণকে অপহরণ করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে একটি চক্র। পরে ওই তরুণ আজ বৃহস্পতিবার ভোরে পাহাড় থেকে পালিয়ে এলেও চক্রের দুই সদস্য তাঁর পিছু নেয়। স্থানীয় এক ব্যক্তির সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত তিনি রক্ষা পান।
অপহৃত তরুণের নাম রিফাত ইসলাম (১৮)। তিনি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাকিমের ছেলে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে মুরগির খামারে ১৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রিফাতকে টেকনাফে আনে চক্রটি। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি টেকনাফ পৌঁছালে তাঁকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়।
রিফাত ইসলাম বলেন, ‘চাকরির প্রস্তাব শুনে আমার ভালো লেগেছিল। সংসারে অভাব, চাকরির খুব দরকার ছিল। টেকনাফে এলে একটি খামারও আমাকে দেখানো হয়। পরে অস্ত্রের মুখে আমাকে গভীর পাহাড়ে নিয়ে যায় তারা। একটি ঝুপড়ি ঘরে বেঁধে রাখে। মারধর করে, ভিডিও ধারণ করে। এরপর আমার পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’
রিফাত আরও জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে সুযোগ বুঝে তিনি পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে চক্রের দুজন সদস্য তাঁকে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি দৌড়ে টেকনাফ সদরের মাঠপাড়া এলাকার আব্দুল গফুর সওদাগরের বাড়ির আঙিনায় ঢুকে পড়েন। তখন অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
আব্দুল গফুর সওদাগর প্রথম আলোকে বলেন, ‘তরুণটি প্রাণভয়ে বাড়ির আঙিনায় আশ্রয় নেয়। পরে আমি টেকনাফ থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।’
রিফাতের বাবা আবদুল হাকিম বলেন, ‘চাকরির কথা বলে ছেলেকে টেকনাফে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। ছেলেকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে। নির্যাতনের ভিডিও আমাদের পাঠানো হয়। মুক্তিপণ না দিলে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। আল্লাহর রহমতে ও পুলিশের সহায়তায় শেষ পর্যন্ত ছেলেকে ফিরে পেয়েছি।’
ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘তরুণটিকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ১৭ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫৫ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ কর র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৪৩ দিন ধরে নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্র বেলালের সন্ধান চায় পরিবার
চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন (২০) নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পর অজ্ঞাত স্থান থেকে স্বজনদের ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কারণে আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলবে। আমার ওপর তোমরা কোনো দাবি দাওয়া রেখো না।’
৩৪৩ দিন ধরে নিখোঁজ বেলালের সন্ধানের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বজনেরা এ তথ্য জানান। স্বজনদের অভিযোগ, বেলালকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে। জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে মামলাও করেছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বেলালের স্বজনরা। সেখানে তার বাবা আমির হোসেন, মা ফাতেমা বেগম, দুই ভাই সুমন মিয়া ও ইসমাঈল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বেলালের সন্ধান দাবি করে কান্নায় ভেঙে পরেন তারা।
কাঁদতে কাঁদতে মা ফাতেমা বেগম বলেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছেলেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। মাদ্রাসা থেকে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিক। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ছেলেকে ফেরত চাই।
লিখিত বক্তব্যে বেলালের বড় ভাই সুমন মিয়া জানান, তাদের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের উত্তর গুদিঘাটা গ্রামে। বেলাল চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ২০১৮-১৯ সেশনের মুতাফাররেকা শ্রেণির একজন ছাত্র। আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের দেড় মাস পর সুমনের মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ আসে। তাতে বেলাল লিখেছিল 'আমার শরীর বেশি ভালো না, মরে যাব।' তখন স্বজনরা নিশ্চিত হয় বেলাল অপহরণ হয়েছে। আগস্টে মাদ্রাসার শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও কারী কাসেম এবং শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহ ছাত্র বেলাল হোসেনকে অপহরণের পর গুম করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তাদের বিরুদ্ধে গত বছরে আগস্টে হাটহাজারী মডেল থানায় মামলাও করা হয়েছে।
সুমন মিয়া বলেন, মামলা করার পর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আবারও সেই অজ্ঞাত নাম্বর থেকে কল দিয়ে আমার ভাই বলে, 'তোমরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কারণে আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে, আমাকে মেরে ফেলবে, আমার ওপর তোমরা কোনো দাবি দাওয়া রেখো না।' মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়া সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগে সুমনের। বেলালের সন্ধানে র্যাব, পুলিশের কাছ থেকেও আশানুরূপ সহযোগিতা মেলেনি বলে জানান তিনি। দুজন শিক্ষক এবং একজন ছাত্রকে কেনো অভিযুক্ত করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নে সুমন মিয়া বলেন, একজন শিক্ষকের খাদেম নিয়োগ নিয়ে বেলালের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছিল।
অভিযুক্ত শিক্ষক তরিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে মঙ্গলবার বিকেলে সমকালকে বলেন, 'আমি মাদ্রাসার মাদানী মঞ্জিল নামের আবাসিক ভবনের দায়িত্বে রয়েছি। ওই ভবনের ৬২৭ নম্বর কক্ষে বেলালসহ ১২ জন ছাত্র থাকত। সে না জানিয়ে অনেক সময় মাদ্রাসা থেকে চলে যেত, এক-দুই সপ্তাহ পর আসত। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় তার সিট বাতিল করে দিই এবং তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। সে কোথায় গেছে, সেটা আমার জানার কথা না। আমার বিরুদ্ধে কেনো অভিযোগ জানি না।'