প্রায় চার মাস ধরে গাজায় ত্রাণ সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। মাঝেমধ্যে কিছু ট্রাককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে অনাহার, ওষুধের অভাব এবং স্বাস্থ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ এই অবরোধে গাজার পুরো জনগোষ্ঠী মানবিক বিপর্যয়ে ধুঁকছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ ইতোমধ্যে একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে বিতর্কিত একটি সংস্থা উপত্যকায় সীমিত আকারে ত্রাণ বিতরণ করছে। সমালোচকরা মনে করেন, গাজার প্রকৃত মানবিক প্রয়োজনের বদলে রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই বিতরণ ব্যবস্থা চালু করেছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষুধার্ত মানুষ খাবারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংস্থাটির বিতরণকেন্দ্রে ভিড় করছেন।

 কিন্তু কেন্দ্রগুলোয় নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে ইসরায়েলি সেনারা। প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের মিছিল। এ জন্য ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে অভিহিত করেছে গাজা কর্তৃপক্ষ। 
গাজা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত চার সপ্তাহে জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তার জন্য গিয়ে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। এ ছাড়া নিখোঁজ হয়েছেন ৩৯ জন। এই কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, খাদ্যকে গণহত্যার অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে ইসরায়েল। 
এদিকে ইসরায়েল গাজায় হামলা আরও জোরদার করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটির হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯০ জন। বুধবার প্রাণ গেছে ৪৫ জনের, যাদের অনেকেই ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ১৫৭ ফিলিস্তিনি। 

তবে জিএইচএফ দাবি করছে, তারা এখন পর্যন্ত ৪ কোটির বেশি খাবার প্যাকেট সহায়তা হিসেবে বিতরণ করেছে। কিন্তু ইউনিসেফসহ অনেক মানবাধিকার সংস্থাই এই ত্রাণ কেন্দ্রগুলোয় শিশুহত্যা এবং মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, জিএইচএফের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোয় হওয়া ১৯টি প্রাণঘাতী হামলার মধ্যে অন্তত ১০টিতে হতাহতদের অধিকাংশই শিশু। 
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলা, অবরোধ ও জ্বালানির অভাবে গাজায় প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা। এমনকি খাবার পানির সংকটে পড়েছেন ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীরাও। ফলে তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার গাজাবাসী। 
এমন অবস্থায় ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির আবারও গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে সংঘাতে বিরতি নিশ্চিত হওয়ায় এখন ইসরায়েলের নজর আবার পুরোপুরি গাজার হত্যাযজ্ঞে ফিরেছে। 

এদিকে গাজায় নতুন অস্ত্রবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। হামাস জানিয়েছে, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চললেও এখনও কোনো কার্যকর প্রস্তাব পায়নি তারা। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ‘খুব কাছাকাছি’ হলেও বাস্তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও। 
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসেইন বলেন, ‘ট্রাম্প চাইলে নেতানিয়াহুকে থামাতে পারেন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তিনি ইসরায়েলকে গাজায় যা ইচ্ছা করার পূর্ণ ছাড় দিয়েছেন।’
এএফপি জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। রামাল্লার উত্তর-পূর্বে কফর মালেক গ্রামে গতকাল দখলদারদের চালানো হামলায় অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্থানীয় সূত্রে আলজাজিরা জানিয়েছে, হামলাকারীরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পাহারায় ফিলিস্তিনিদের গ্রামটিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ণ ব তরণ ক ন দ রগ ল জ এইচএফ ইসর য় ল ব তরণ ক

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নারী নিহত

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। 

নিহত নিলুফা ইয়াসমিন নিলা (৩০) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রুনসী গ্রামের আবুল বাসারের স্ত্রী।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, মা-মেয়ে নিহত

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল চন্দ্রা পরিবহনের বাসটি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়।  পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলার মরদেহ উদ্ধার করে। আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মাদারীপুরের মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বাস খাদে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ