বিশ্ব এমএসএমই দিবস আজ শুক্রবার । টেকসই উন্নয়নের জন্য এমএসএমই খাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে জাতিসংঘ এ দিনকে ‘বিশ্ব এমএসএমই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছর সারা বিশ্বে নবমবারের মতো পালিত হচ্ছে দিবসটি।

কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই)-এ চারটি খাতই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া দেশের জিডিপিতে এই খাতগুলোর অবদান ২৫ শতাংশ। এই খাতকে সহায়তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যতিক্রম নয় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাইম ব্যাংক পিএলসিও। ব্যাংকটি এমএসএমই খাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোক্তামুখী মনোভাব নিয়ে নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের এ খাতে ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রাখছে প্রাইম ব্যাংক।

এ ধরনের উদ্যোগের মধ্যে প্রাইম ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি টার্ম লোন চুক্তি। যা রপ্তানি ও আমদানিভিত্তিক সিএমএসএমই শিল্পে সরাসরি বিনিয়োগ করছে। আর এ ধরনের উদ্যোক্তাদের কাছে আর্থিক সুবিধা সহজলভ্য এবং তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। সেই সঙ্গে জাতীয় কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া ডাচ এন্টারপ্রেনোরিয়াল ব্যাংক ‘এফএমও’র সহায়তায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সুবিধা পেয়েছে প্রাইম ব্যাংক। যার ৪০ শতাংশ গ্রিন প্রকল্পে এবং বাকি ৬০ শতাংশ নারী, কৃষি ও তরুণসহ এমএসএমইকে সাধারণ ঋণ হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে। এই উদ্যোগ এমএসএমই মালিকানায় বৈচিত্র্য এবং টেকসই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে। এ ধরনের খাতের জন্য প্রাইম ব্যাংক নন-ফাইন্যান্সিয়াল সুবিধা দিয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, এক কোটি টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ব্যবসায়িক ঋণ, কম সুদে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা এবং এমএসএমইদের আর্থিক স্বাক্ষরতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।

দেশের এমএসএমই খাতে এক-তৃতীয়াংশ নারী অবদান রাখছেন। তাই নারী উদ্যোক্তাদের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ও তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.

নাজিম এ. চৌধুরী বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের অ্যাক্সেস টু ফাইন্যান্স অগ্রগামী ও কার্যকর করতে আমাদের উদ্যোগসমূহ অনন্য। সেগুলো হলো, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ, ব্রাঞ্চ পর্যায়ে বর্তমান ও সম্ভাব্য নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, কম সুদে বা লাভে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা এবং সঞ্চয়ের সুবিধার সঙ্গে বাড়তি সুদ বা লাভ দেওয়া হয়।’

নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি ‘সবুজ অর্থায়ন’ সম্পর্কে এম. নাজিম এ. চৌধুরী বলেন, ‘টেকসই ব্যবসার জন্য এমএসএমইদের সবুজ অর্থায়ন সুবিধা দিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে সবুজ ও টেকসই ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি, গ্রিন বিল্ডিং ও শিল্প প্রকল্পে সহায়তা এবং গ্রিন এলসি সুবিধা।’

এমএসএমই সম্ভাবনাময় একটি খাত। কিন্তু অধিকাংশ উদ্যোক্তা সঠিক ও গঠনমূলক পরিকল্পনা থাকার পরও পুঁজির অভাবে শুরু করতে পারেন না। তাই স্বপ্ন পূরণে নির্ভর করেন ঋণের ওপর। এ দিক বিবেচনায় প্রাইম ব্যাংক পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। ব্যাংকটির ক্রেডিট পলিসি ও এমএসএমই লোন প্রক্রিয়া সহজলভ্য ও উদ্যোক্তাবান্ধব। তাঁরা সহজ শর্ত ও কম জটিলতায় সাত দিনের মধ্যে ঋণ পেতে পারেন। ন্যূনতম ডকুমেন্টশন আর স্বল্প অভিজ্ঞতায় কোনো বাড়তি চার্জ বা ফি ছাড়াই পাচ্ছেন এ সুবিধা। যা এমএসএমইদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ যাত্রায় প্রাইম ব্যাংকের আন্তরিক সহযোগিতাকে প্রমাণ করে।

এমএসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং সেবার ডিজিটালাইজেশন বা আধুনিকায়ন। এটি উদ্যোক্তাদের সময় ও খরচ কমাতে সাহায্য করছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও নিজেদের উদ্যোগে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করছেন। এখানেও পিছিয়ে নেই প্রাইম ব্যাংক। কারণ ব্যাংকটিতে ঋণ আবেদন, হিসাব খোলা এবং লেনদেনে রয়েছে ডিজিটাল সুবিধা। এ ছাড়া ‘মাই প্রাইম’ ও ‘প্রাইম পে’ দিয়ে ঘরে বসেই প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন এমএসএমইরা।

বিশ্ব এমএসএমই দিবস উপলক্ষে এ খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে প্রাইম ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. নাজিম এ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের শরীরে হৃৎপিণ্ড যেমন জরুরি অঙ্গ, তেমনি দেশের অর্থনীতির টেকসই ও উৎপাদশীল উন্নয়নে এমএসএমইর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাই মিলে যদি এমএসএমইদের যত্ন নিই, তাহলে আমরা এবং দেশ-সবাই ভালো থাকবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এমএসএমই খ ত ফ ইন য ন স ট কসই ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন উদ্যোক্তার ঋণ পাওয়া এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং

অনেক সময় উদ্যোক্তারা ঋণের শর্তাবলি ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না।  যার ফলে সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেন না। রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এ ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হতো


বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এম. নাজিম এ. চৌধুরী মনে করেন, বাংলাদেশে এসএমই উদ্যোক্তা বিশেষত ক্ষুদ্র এবং নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার বাস্তব চিত্র এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং। যদিও এ খাতে ঋণের চাহিদা অনেক, তবে অনেক উদ্যোক্তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঋণ পাওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। বিশেষ করে অনেকেরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স কিংবা ট্রানজেকশন রেকর্ড নেই, যা ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার অন্যতম শর্ত। ব্যাংকের প্রথাগত ঋণ প্রক্রিয়া এবং জটিল কাগজপত্রের কারণে নতুন বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজেই পিছিয়ে পড়েন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য চিত্রটি আরও কঠিন, কারণ তারা পরিবার বা সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রয়োজনীয় সাহায্যটুক অনেক ক্ষেত্রে পান না। 
আন্তর্জাতিক এসএমই দিবস উপলক্ষে সমকালের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও জানান, অনেক সময় উদ্যোক্তারা ঋণের শর্তাবলি ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না।  যার ফলে সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেন না। রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এ ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হতো। এ বাস্তবতায় জামানতবিহীন বা আংশিক জামানতভিত্তিক ঋণ, প্রশিক্ষণ ও হ্যান্ডহোল্ডিং সার্ভিস এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সহজ আবেদন প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করা জরুরি। উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে এসএমই খাতে ঋণপ্রাপ্তি সহজতর করা গেলে এ খাত দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
সিএমএসএমই খাতে প্রাইম ব্যাংকের সম্পৃক্ততা বিষয়ে নাজিম এ. চৌধুরী বলেন, প্রাইম ব্যাংক সিএমএসএমই খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে এ খাতে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি এবং সাড়ে ১১ হাজারের বেশি সক্রিয় ঋণগ্রহীতা রয়েছেন। ব্যাংকের মোট সিএমএসএমই গ্রাহকের সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি, যা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ। প্রাইম ব্যাংক এ খাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, সহজতর ঋণপ্রাপ্তি এবং উদ্যোক্তা সক্ষমতা বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে সিএমএসএমই খাত দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসএমই খাত অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তবে এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় তারা ব্যাংকিং সুবিধা ও সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসএমই খাতকে আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। যেমন– সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানতবিহীন ঋণ প্রদান বাধ্যতামূলক করা, ঋণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করা, নীতিগতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা চালু করা, ডিজিটাল রেকর্ড ও ক্রেডিট স্কোরিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সেবাগুলোকে সহজসাধ্য ও কার্যকর করা। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসএমই খাত দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সুদহার বেড়ে যাওয়ায় এসএমই খাতের ওপর প্রভাব প্রসঙ্গে প্রাইম ব্যাংকের ডিএমডি বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার মূলত বাজারভিত্তিক হওয়ায় এটি সময় ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সুদহার বৃদ্ধিতে ব্যবসায়িক খরচ বাড়লেও এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের খরচ কমাতে কর্মীদের দক্ষতা বাড়িয়ে ব্যবসা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা আরও পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। ভবিষ্যতে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথকে আরও মসৃণ করে তুলবে। 
ঋণ বিতরণ পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, দেশের সার্বিক বিবেচনায় ঋণ বিতরণে কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে ভালো, পরিচ্ছন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কযুক্ত ক্লায়েন্টদের ঋণ অনুমোদন চলছে। খেলাপি নির্ণয়ে নতুন নিয়ম পরিপালন করার জন্য ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রামের সহায়তায় এসএমই খাত তুলনামূলক নমনীয় ও টিকে থাকার চেষ্টা করছে। তবে চাহিদা হ্রাস, মূল্যস্ফীতি ও সম্পদের সংকট এ খাতেও ধাক্কা দিচ্ছে। যারা প্রযুক্তি বা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায় এসেছে, তারা তুলনামূলকভাবে ভালো করছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস
  • ব্র্যাংক ব্যাংকের বেশির ভাগ এসএমই ঋণ জামানতবিহীন
  • ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহজে ব্যবসার সুযোগ দরকার
  • অর্থনীতির প্রাণ ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ
  • এক বছরে এসএমই ঋণ বিতরণ ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা
  • নতুন উদ্যোক্তার ঋণ পাওয়া এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং