মধুবাগের একটি বাসা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
Published: 27th, June 2025 GMT
রাজধানীর মধুবাগের একটি বাসা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আকবর হোসেন ওরফে অপু (৫০) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পূর্ণ চিসিম বলেন, খবর পেয়ে গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মধুবাগের পঞ্চম তলায় একটি ফ্ল্যাটের খাটের ওপর থেকে আকবর হোসেনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরে মরদেহটি আজ শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এসআই পূর্ণ চিসিমের করা সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আকবর হোসেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যেতে পারেন। এ ছাড়া মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে।
আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আকবর হোসেনের ভগ্নিপতি আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছরের প্রতিবন্ধী এক মেয়েকে নিয়ে আকবরের স্ত্রী মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ফুলগাছিতে থাকেন। আর আকবর হোসেন তাঁর বোনের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে থাকতেন। আকবর তাঁর ভগ্নিপতির একটি ওষুধের দোকানে কাজ করতেন। গতকাল রাতের খাবার খেয়ে আকবর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যান। গভীর রাতে আকবরকে ডেকে কোনো শব্দ পাননি তাঁর বোন। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে খাটের ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় হাতিরঝিল থানায় জানালে পুলিশ এসে আকবরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আকবর হ স ন র একট
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্রান্সে পত্রিকার ‘সর্বশেষ’ হকার আলী আকবরকে জাতীয় সম্মাননা দিচ্ছেন মাখোঁ
নাম আলী আকবর। থাকেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। শহরটির পুরোনো অধিবাসীদের কাছে তিনি খুব পরিচিত মুখ। আকবর প্রতিদিনের পত্রিকা বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন। মুখে বলতে থাকেন দৈনিক পত্রিকার তরতাজা শিরোনামগুলো। এভাবেই পত্রিকা পৌঁছে দেন পাঠকের হাতে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করছেন তিনি।
এটুকু পড়েই বোঝা যাচ্ছে আলী আকবর একজন সংবাদপত্রের হকার। পাঠকের হাতে ছাপা পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া তাঁর কাজ। তবে আকবরের আলাদা বিশেষত্ব আছে। হারিয়ে যেতে বসা পেশা পত্রিকার হকারি প্যারিসে এখন একমাত্র তিনিই ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ প্যারিস তথা পুরো ফ্রান্সে পত্রিকার সর্বশেষ হকার তিনি। সম্ভবত ইউরোপেও।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দেশটির অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় সম্মাননা ‘অর্ডার অব মেরিট’–এর জন্য আলী আকবরকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননারও একটি। আগামী মাসে আলী আকবরকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। ফরাসি সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম আলী আকবরের। ষাটের দশকের শেষ ভাগে ইউরোপে পাড়ি জমান। শুরুতে যান নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। সেখানে তিনি একটি ক্রুজ জাহাজে কাজ পান। পরে ১৯৭২ সালে ফ্রান্সে আসেন। বছরখানেক পর থিতু হন প্যারিসে। পত্রিকার হকারির কাজ নেন।মজার বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজেও ছাত্রজীবনে আলী আকবরের কাছ থেকে পত্রিকা কিনতেন।
স্মৃতি হাতড়ে আলী আকবর বলেন, ‘১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।’
দিন বদলের স্রোতে ছাপা পত্রিকা ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময়ের এই বাঁকবদলে পত্রিকার হকাররাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন, পেশা বদলে ফেলছেন।
আলী আকবর বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। এখন সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে চলে। মানুষ শুধু নিজের টেলিফোন (মুঠোফোন) দেখতে চায়।’
১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।আলী আকবর, প্যারিসে পত্রিকার হকারকেতাদুরস্ত ফ্যাশনশিল্পের জন্য পরিচিত প্যারিসের সেইন্ট জার্মেই এলাকার ক্যাফেগুলো ঘুরে আলী আকবর এখন বিখ্যাত ফরাসি পত্রিকা লা মঁদের মাত্র ৩০ কপি বিক্রি করতে পারেন। তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রির টাকার অর্ধেক তিনি পান। তবে অবিক্রীত পত্রিকাগুলো ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।
অথচ একসময় দৃশপট ছিল পুরো উল্টো। আলী আকবর জানান, ইন্টারনেট জমানার আগে পত্রিকার সন্ধ্যাকালীন মুদ্রণের পর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কপি বিক্রি হয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘সেসব দিনে পাঠকেরা দৈনিক পত্রিকা কেনার জন্য আমার চারপাশে ভিড় করতেন। আর এখন এক কপি পত্রিকা বিক্রি করতে আমাকেই পাঠকের পিছে পিছে ছুটতে হয়।’
পথে ঘুরে ঘুরে পাঠকের হাতে দৈনিক পত্রিকা পৌঁছে দেন আলী আকবর