Prothomalo:
2025-08-12@09:22:50 GMT

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

Published: 28th, June 2025 GMT

ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ অনুমোদন দেওয়ার সময় আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিবিধি সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা উদ্বেগজনকই। তারা মনে করে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো খারাপ অবস্থায় আছে। অন্য তিনটি কারণ হলো কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতির প্রভাব, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে অব্যাহত চাপ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটেনি। প্রশ্ন হলো গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার এই স্থবিরতা কাটাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না। আইএমএফ বলছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। সংস্থাটির মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। মূল্যস্ফীতিই জনজীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে, সেটা জানা গেল বিশ্বব্যাংকের আরেক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২২ সালে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা, যঁাদের দৈনিক আয় ২ ডলার ১৫ সেন্টের নিচে ছিল, তঁাদের সংখ্যা ৩০ লাখ হতে পারে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে হারে মানুষের আয় বাড়েনি। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা দিয়ে দরিদ্র মানুষ চিহ্নিত করা হয়। ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতিদরিদ্র হিসেবে ধরা হয়।

রাজনীতির সংস্কার ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছে আইএমএফ। অবশ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে বিনিময় হার আরও নমনীয় করা ও কর রাজস্ব বাড়াতে নেওয়া সংস্কারকাজের প্রশংসা করেছে তারা। এর পাশাপাশি সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ পুনর্গঠন ও মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সরকারি ভর্তুকি ধাপে ধাপে কমিয়ে একটি টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছে আইএমএফ। 

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যেসব সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছে, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হলে তার অনেকটাই কমে যাবে। এ জন্য কেবল বিদেশি সংস্থা নয়, দেশের অর্থনীতিবিদেরাও প্রাক্‌–প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন।  

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে যে অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে, সেটা জানতে আইএমএফ বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের প্রয়োজন পড়ে না। দেশের সাধারণ মানুষ সাদাচোখেই সেটা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিষয়ে কতটা সজাগ আছে, সেই প্রশ্ন আছে। দিনের পর দিন আলোচনা করেও কেন তারা সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না? যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরস্পর বিপরীত মেরুতে, সেখানে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা কঠিনই বটে। 

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো অবিলম্বে ন্যূনতম বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করবে, যাতে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা যায়। কোনো দল যদি নিজের অবস্থানে অনড় থাকে এবং অন্যদের কথা শুনতে না চায়, তাহলে রাজনৈতিক ঐকমত্য কখনো হবে না। এই সরল সত্য কথাটি সংশ্লিষ্ট সবাই মনে রাখবে আশা করি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র অর থ সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যাগরিষ্ঠরা কেন ন্যায্য হিস্যা পাবে না

জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা সামনের মুখ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের প্রান্তিক করে তোলার একটি চেষ্টা প্রবলভাবে দৃশ্যমান। নারীর অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। সংসদে নারী আসন ও নারীর মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যে অবস্থান নিয়েছে, সেটা শুধু দুঃখজনকই নয়, সমাজের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বিকাশের পথেও বড় একটি ধাক্কা। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের জন্য আগের মতোই ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রাখার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশের জন্মের ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও রাজনীতিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব একেবারে তলানিতে রয়ে গেছে, আর সেই প্রতিনিধিত্বটাও আবার মোটাদাগে আলংকারিক। মুখে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বললেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে চিন্তার দিক থেকে চরম রক্ষণশীল ও পুরুষতান্ত্রিক—এই বাস্তবতা তারই প্রতিফলন। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক কম।

রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণীর জায়গায় যে নিরঙ্কুশ পুরুষ আধিপত্য চলে আসছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একটা বড় সুযোগ ও পরিসর তৈরি করে দিয়েছিল চব্বিশের অভ্যুত্থান। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, নারীদের কথা না শুনেই নারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে যে কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, সেখানে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা নগণ্য। এমনকি ঐকমত্য কমিশনে কোনো নারী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এই দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপদ্ধতি কোনো অর্থেই গণতান্ত্রিক নয়। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এটা ঠিক যে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে এই হতাশাজনক অবস্থানের মূল দায় রাজনৈতিক দলগুলোর পশ্চাৎপদ ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং প্রথাগত চর্চা। তারা কোনোভাবেই নারীর জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে নারাজ। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন কেন রাজনৈতিক দলের অবস্থানকেই শেষ কথা বলে মনে করবে? আমরা মনে করি, এখানে ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল এবং সেই সুযোগ এখনো আছে।

আমরা দেখছি যে রাজনীতি ও সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন আলাদা প্রস্তাব দিয়েছিল। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজের পরিধিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন পৃথক প্রস্তাবে নারীর জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসন ও সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সরাসরি ভোটে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে।

সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য বলছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫১ শতাংশ নারী। সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও নারী কেন ক্ষমতার ন্যায্য হিস্যা পাবে না? গণতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দলগুলো আসলে কী চর্চা করছে, সেই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? গত শনিবার প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে বয়েজ ক্লাব হিসেবে পার করে দেব, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা যথার্থ বলে মনে করি।

গোলটেবিল বৈঠকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা শুধু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই জানাননি, তাঁরা সুস্পষ্টভাবে নারী আসন ও মনোনয়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কথাও বলেছেন। তাঁরা আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আমরাও মনে করি, নারী আসন ও নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে অধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের মধ্যে যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে তা নিরসন করতে হবে। নারী প্রতিনিধিদের যুক্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনকে আবারও আলোচনায় বসতে হবে। নীতিনির্ধারণীতে নারীকে বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণ থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি—কোনোটাই টেকসই হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে পুরুষতান্ত্রিক চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাম তেলের দাম কমল ১৯ টাকা, নতুন দাম ১৫০ টাকা
  • ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
  • ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো ১ মাস বাড়ল
  • আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে
  • মঞ্জুর হওয়া গৃহঋণও আটকে গেছে 
  • কর আদায়ে কেসিসির টার্গেট পূরণ, তবে...
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ আরও বাড়ল
  • সংখ্যাগরিষ্ঠরা কেন ন্যায্য হিস্যা পাবে না
  • ইবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন
  • স্বস্তিতে বিদ্যুৎ, সংকটে গ্যাস সরবরাহ