ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ অনুমোদন দেওয়ার সময় আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিবিধি সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা উদ্বেগজনকই। তারা মনে করে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো খারাপ অবস্থায় আছে। অন্য তিনটি কারণ হলো কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতির প্রভাব, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে অব্যাহত চাপ।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটেনি। প্রশ্ন হলো গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার এই স্থবিরতা কাটাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না। আইএমএফ বলছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। সংস্থাটির মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। মূল্যস্ফীতিই জনজীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে, সেটা জানা গেল বিশ্বব্যাংকের আরেক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২২ সালে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা, যঁাদের দৈনিক আয় ২ ডলার ১৫ সেন্টের নিচে ছিল, তঁাদের সংখ্যা ৩০ লাখ হতে পারে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে হারে মানুষের আয় বাড়েনি। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা দিয়ে দরিদ্র মানুষ চিহ্নিত করা হয়। ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতিদরিদ্র হিসেবে ধরা হয়।
রাজনীতির সংস্কার ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছে আইএমএফ। অবশ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে বিনিময় হার আরও নমনীয় করা ও কর রাজস্ব বাড়াতে নেওয়া সংস্কারকাজের প্রশংসা করেছে তারা। এর পাশাপাশি সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ পুনর্গঠন ও মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সরকারি ভর্তুকি ধাপে ধাপে কমিয়ে একটি টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছে আইএমএফ।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যেসব সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছে, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হলে তার অনেকটাই কমে যাবে। এ জন্য কেবল বিদেশি সংস্থা নয়, দেশের অর্থনীতিবিদেরাও প্রাক্–প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে যে অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে, সেটা জানতে আইএমএফ বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের প্রয়োজন পড়ে না। দেশের সাধারণ মানুষ সাদাচোখেই সেটা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিষয়ে কতটা সজাগ আছে, সেই প্রশ্ন আছে। দিনের পর দিন আলোচনা করেও কেন তারা সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না? যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরস্পর বিপরীত মেরুতে, সেখানে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা কঠিনই বটে।
আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো অবিলম্বে ন্যূনতম বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করবে, যাতে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা যায়। কোনো দল যদি নিজের অবস্থানে অনড় থাকে এবং অন্যদের কথা শুনতে না চায়, তাহলে রাজনৈতিক ঐকমত্য কখনো হবে না। এই সরল সত্য কথাটি সংশ্লিষ্ট সবাই মনে রাখবে আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র অর থ সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কনটেইনার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সামিট অ্যালায়েন্স (এসএ) পোর্টের ব্যবসা তিন গুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মুনাফাও। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই–সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ১৫৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে ৯৯ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে কনটেইনার সেবাদাতা এই কোম্পানি।
গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা সাড়ে তিন কোটি টাকা বা প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের চেয়ে কোম্পানিটির ব্যবসা তিন গুণ বাড়লেও মুনাফা সেই অনুযায়ী বাড়েনি। এর প্রধান কারণ ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচালন খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির ৫৫ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে পরিচালন খরচ ছিল সাড়ে ২৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৫৫ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে পরিচালন খরচ ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির পরিচালন খরচ বেড়ে ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ১৫৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানিটির পরিচালন বাবদ ব্যয় হয় ১১৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রশাসনিক খরচও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির পরিচালন খরচ ছিল পাঁচ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিচালন ও প্রশাসনিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা যতটা বেড়েছে, মুনাফা ততটা বাড়েনি। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটির ব্যবসা ও মুনাফা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বছর বছর বাড়তে থাকায় কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সেবার ব্যবসাও বাড়ছে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ব্যবসাও বড় হচ্ছে। দেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে ১৯টি ডিপো থাকলেও সিংহভাগ ব্যবসা করছে ৬টি কনটেইনার ডিপো।
কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেসরকারি খাতের ১৯টি ডিপো আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ৮ লাখ ৩০ হাজার একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যে সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার একক কনটেইনার। সেই হিসাবে বেসরকারি এ খাতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। এ খাতের ব্যবসায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের অবস্থান তৃতীয়। সামিট গ্রুপ ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংসের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯২ হাজার ৬৭০ একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। এই ডিপোর বাজার হিস্যা ১১ শতাংশ।
সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। সর্বশেষ গত অক্টোবর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ৫৯ শতাংশই ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি ৪১ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ শেয়ার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৪ টাকা ৬০ পয়সা।