বেশিরভাগ মানুষই মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন।  কেউ কেউ আবার মিষ্টি খাওয়ার পরপরই পানি খান। এটা কি ঠিক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিষ্টি খাওয়ার পর অবশ্য়ই পানি খাওয়া দরকার। এতে শরীরের অনেক উপকার হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিষ্টি খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে অনেকখানি বেড়ে যায়। একে বলে সুগার স্পাইক। যারা আগে থেকেই ব্লাড সুগারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদেরই শুধু এই সমস্য়া হয় না। এ কারণে মিষ্টি খাওয়ার পর পানি খেলে, এই সুগার স্পাইকের সমস্যা হয় না। 

পানি যেকোনও খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে। এ কারণে মিষ্টিজাত খাবার সঠিকভাবে হজম করতে পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

মিষ্টি খেলে দাঁতের ব্যাকেটেরিয়া আরও বেশি সক্রিয় হতে পারে। পানি খেলে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

যারা মাড়ির ব্যথা সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই মিষ্টি খাওয়ার পর পানি খাবেন। তা না হলে ব্যথা আরও বাড়তে পারে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গণমানুষের পক্ষে পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্বাধীনতা–উত্তর গ্রুপ থিয়েটার

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যাঁরা নাট্যচর্চা শুরু করেছিলেন তাঁরা বললেন, শিল্পের জন্য শিল্প নয়। তাঁরা বলতে চাইলেন, শিল্প হবে উদ্দেশ্যমুখী। শিল্প বাঁধনছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত, স্বতঃপ্রণোদিত নয়। যেকোনো শিল্পে একটি উপযোগিতা থাকতে হবে। তাঁরা বললেন, শিল্প হোক জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার। নাটক হোক রাজনীতিমুক্ত (Let us depoliticise theatre), এই স্লোগানের প্রবক্তা ফরাসি অ্যাবসার্ড নাটকের নাট্যকার ইউজিন আয়োনেস্কো। এই মতের সঙ্গে মিল রেখে থিয়েটার চর্চাকারীরা বললেন, শিল্পের জন্য শিল্প। 

গত শতকের থিয়েটারের প্রধানতম বিকাশ হলো রাজনীতিকে ঘিরে এর ব্যাপক সম্প্রসারণ। বিশ শতকে নাটকের বিষয়ে, প্রযোজনা ভঙ্গিমায়, মঞ্চের নকশায় ও নাট্য নির্মাণশৈলীতে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যায়। জনগণের থিয়েটারের ভাবনা নানাভাবে, নানা চিন্তায় আবর্তিত-বিবর্তিত হতে থাকে। সব ভাবনার শুরু, থিয়েটারকে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 

কেউ কেউ এ সময় খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, একটা রাজনৈতিক দর্শনকে সামনে রেখেই নাট্যকর্ম পরিচালিত হবে আর সে দর্শন হবে মার্ক্সবাদ। সেই বিশ্বাস থেকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতে ছড়াতে থাকে অ্যাজিটপ্রপ (agitprop) নাট্যভাবনা। গণজাগরণ বা অ্যাজিটেশন এবং প্রপাগান্ডা বা প্রচার শব্দ দুটি মিলে জন্ম নেয় অ্যাজিটপ্রপ নাট্যধারা। এই নাট্যভাবনার উদ্দেশ্য ছিল শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিসংঘর্ষ, শ্রেণিসংগ্রামের কথা তুলে ধরা এবং শ্রমিকশ্রেণিকে সংগঠিত করা। যদিও মার্ক্সবাদীদের ভাবনা শুধু অ্যাজিটপ্রপ ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সে ক্ষেত্রে বলা যায় অ্যাজিটপ্রপ ছিল মূলত রাজনৈতিক নাট্যভাবনার একটি প্রথম ও বিশেষ ধাপ। আমরা এখানে রাজ্যশাসন–সম্পর্কিত নীতিকেই রাজনীতি হিসেবে দেখছি। যেমনটা বলেছে বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান—রাষ্ট্র শাসন বা পরিচালনার নীতি।

স্বাধীনতার পরপরই গণমানুষের পক্ষে কথা বলার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছিল গ্রুপ থিয়েটারগুলোর মধ্যে। তবে সেই নাটকে কোনো সামাজিক বিশ্লেষণ দেখা যায়নি। রাজনৈতিক ভাবনা বাদ দিয়ে, রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে দাঁড়িয়ে থেকে নাটককে জনগণের বিষয় করে তুলতে চাওয়া হয়েছিল।

স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার বারবার দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বলেছিল, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ার কর্মসূচি নিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়েছে। শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার সেদিনের জনগণের মধ্যে ছিল, তা থেকে কোনোভাবেই মুক্ত ছিলেন না নাট্যকর্মীরা। তবে এ কথাও সত্য যে সত্যিকার অর্থে শোষণমুক্তির রাজনীতি কী, সে সম্পর্কে তাঁরা বড় একটা সচেতন ছিলেন, এমনটিও মনে হয় না। স্বাধীনতার পর নানা রকম রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাতের কারণে বাংলাদেশের নাট্যধারায় নতুন এক ভাবনার উন্মেষ ঘটে। এই ভাবনায় সম্পৃক্ত ছিলেন রাজনৈতিক দল–বহির্ভূত, সমাজ বিশৃঙ্খলায় বিক্ষুব্ধ, নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার তাড়নায় উদ্‌গ্রীব একদল তরুণ। যাঁরা মঞ্চের আগের সব রীতিনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, নতুন নাট্যধারা গড়ে তোলার কথা বলেন, নতুন বিষয় নিয়ে নাটককে জনগণের বিষয় করে তুলতে চান। যাঁরা চেয়েছিলেন নতুন করে কিছু করতে। নিজেরাই তাঁরা নাটক লিখেছেন, নিজেরাই তা মঞ্চস্থ করেছেন, কোনো সুনির্দিষ্ট চিন্তা বা মতবাদ ছাড়াই। আর সে পথ ধরেই জন্ম নেয় বাংলাদেশের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন।

স্বাধীনতার পরপরই গণমানুষের পক্ষে কথা বলার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছিল গ্রুপ থিয়েটারগুলোর মধ্যে। তবে সেই নাটকে কোনো সামাজিক বিশ্লেষণ দেখা যায়নি। রাজনৈতিক ভাবনা বাদ দিয়ে, রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে দাঁড়িয়ে থেকে নাটককে জনগণের বিষয় করে তুলতে চাওয়া হয়েছিল। নতুন এই নাট্যধারার প্রবক্তারা সবাই ছিলেন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। মার্ক্সবাদীদের মতে, মধ্যবিত্ত মানেই পাতিবুর্জোয়ার অংশ। পাতিবুর্জোয়া ভাবনার মধ্যে থাকে ভাববাদী ঝোঁক। যার ফলে নানা বিভ্রান্তির জন্ম হয়। পাতিবুর্জোয়ার মানসিকতায় ভাববাদী চিন্তার প্রভাব যে কত রকম নতুন নতুন চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে, সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতা–পরবর্তী নাট্যচর্চার মধ্যে, মধ্যবিত্তের দোদুল্যমানতা নানাভাবে ধরা পড়ে। তখনকার নাটকগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সামাজিক অঙ্গীকারের প্রশ্নে লক্ষ্যহীনভাবেই বাংলাদেশের নাট্যচর্চা শুরু হয়েছিল। সামাজিক অঙ্গীকারবদ্ধ নাটক বলতে আমরা এমন নাটকের কথা বলছি, যা সামাজিক দ্বন্দ্বগুলোকে তুলে ধরে এবং জনগণকে জড় অবস্থা বা জড়িমার বিরুদ্ধে ভাবতে শেখায়।

গ্রুপ থিয়েটার উৎসব ’৭৯

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণমানুষের পক্ষে পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্বাধীনতা–উত্তর গ্রুপ থিয়েটার
  • ১৭০০০ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চাকরিবিধি চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই