সুনামগঞ্জে শতকোটির বালুমহাল নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষে দ্বন্দ্ব
Published: 28th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের শতকোটি টাকার যাদুকাটা বালুমহাল ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বিএনপির দু’পক্ষ। এই দ্বন্দ্বে গোয়েন্দা পুলিশকেও (ডিবি) জড়ানো হয়েছে। ডিবির সদস্যরা ঢাকায় ইজারাদারকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে পৌনে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই বালুমহাল বিগত সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা ভোগ করতেন। সরকার পতনের পর মহালের দখলে নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বাংলা বছরেও যৌথভাবে ইজারা পান বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা। ইজারা কার্যক্রম নিয়ে এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ও দলীয় সমর্থক ব্যবসায়ী নাছির মিয়া দ্বন্দ্বে জড়ান। এই দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতা তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলের নামও উঠে এসেছে।
শনিবার বিকেলে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে চাপ দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগের কথা জানান যাদুকাটা বালুমহালের ইজারাদার ও ভুক্তভোগী নাছির মিয়া। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, যাদুকাটা বালুমহাল বৈধভাবে ইজারা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইজারাদার রতন মিয়ার ঘনিষ্ঠ খোরশেদ মিয়া ৫ মার্চ হাইকোর্টে মামলা করেন। পরে ইজারা কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন আদালত। মাহবুবুর রহমান যাদুকাটায় এর আগে অংশ দেওয়ার দাবি করলে অন্য পক্ষের মধ্যস্থতায় ৩০ শতাংশ শেয়ার দিতে রাজি হই। তবুও কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা তাদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন।
নাছির মিয়া জানান, গত ২৫ জুন এ বিষয়ে হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ের জন্য যান তারা। সেখানে রতন মিয়া ও মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজন ডিবি সদস্য তাঁকে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যান। সেখানে মানসিকভাবে নির্যাতন এবং মামলা না চালানোর জন্য চাপ দেওয়া হয় তাঁকে। পরে অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান ডিবি অফিসে গিয়ে তাঁর কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে ডিবির সদস্যরা তাঁর কাছে থাকা ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা আদায় করেন। পরে সাজানো মুচলেকায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
এই বিষয়ে ডিবি বা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কাউকে জানিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই ভুক্তভোগী ইজারাদার বলেন, রোববার ঢাকায় গিয়ে পুলিশ প্রধানকে জানাব এবং একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে মামলাও করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, যাদুকাটা ইজারা নেওয়ার জন্য আমি শিডিউল কিনিনি। আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কারও কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তারা স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় মহাল ইজারা নিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করতে চায়।
ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলনে বলা সবকিছুই সাজানো দাবি করে যুবদল নেতা বলেন, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল এই নাটক সাজিয়েছেন। তিনি এই আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব কাজ করাচ্ছেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সহজ-সরল ব্যবসায়ীকে ডিবি অফিসে অমানুষিক নির্যাতন করিয়েছে– ব্যবসায়ী নিজেই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। যাদুকাটা ইজারাবিহীন থাকায় হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন জানান, কোন ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ কোথাও নিয়ে নির্যাতন করেছে, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তারা পাননি।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার আলোচিত বালুমহাল যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ চলতি সালে ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়। যাদুকাটা-১-এর ইজারা নাছির মিয়া এবং যাদুকাটা-২-এর ইজারা পান শাহ্ রুবেল আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় ও জেলা নেতাদের অনেকে শরিক রয়েছেন বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের পর যাদুকাটা-২-এর ইজারাদার শাহ রুবেল জানান, সরকারকে বৈধভাবে রাজস্ব দিয়ে ইজারা পাওয়ার পরও তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় তাঁর ওপর হামলা হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ দ বন দ ব ইজ র দ র ব এনপ র ব যবস য় র ইজ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।