সুনামগঞ্জের শতকোটি টাকার যাদুকাটা বালুমহাল ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বিএনপির দু’পক্ষ। এই দ্বন্দ্বে গোয়েন্দা পুলিশকেও (ডিবি) জড়ানো হয়েছে। ডিবির সদস্যরা ঢাকায় ইজারাদারকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে পৌনে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। 
এই বালুমহাল বিগত সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা ভোগ করতেন। সরকার পতনের পর মহালের দখলে নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বাংলা বছরেও যৌথভাবে ইজারা পান বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা। ইজারা কার্যক্রম নিয়ে এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ও দলীয় সমর্থক ব্যবসায়ী নাছির মিয়া দ্বন্দ্বে জড়ান। এই দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতা তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলের নামও উঠে এসেছে।

শনিবার বিকেলে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে চাপ দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগের কথা জানান যাদুকাটা বালুমহালের ইজারাদার ও ভুক্তভোগী নাছির মিয়া। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, যাদুকাটা বালুমহাল বৈধভাবে ইজারা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইজারাদার রতন মিয়ার ঘনিষ্ঠ খোরশেদ মিয়া ৫ মার্চ হাইকোর্টে মামলা করেন। পরে ইজারা কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন আদালত। মাহবুবুর রহমান যাদুকাটায় এর আগে অংশ দেওয়ার দাবি করলে অন্য পক্ষের মধ্যস্থতায় ৩০ শতাংশ শেয়ার দিতে রাজি হই। তবুও কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা তাদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন।
নাছির মিয়া জানান, গত ২৫ জুন এ বিষয়ে হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ের জন্য যান তারা। সেখানে রতন মিয়া ও মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজন ডিবি সদস্য তাঁকে মিন্টো রোডের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যান। সেখানে মানসিকভাবে নির্যাতন এবং মামলা না চালানোর জন্য চাপ দেওয়া হয় তাঁকে। পরে অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান ডিবি অফিসে গিয়ে তাঁর কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে ডিবির সদস্যরা তাঁর কাছে থাকা ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা আদায় করেন। পরে সাজানো মুচলেকায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি। 
এই বিষয়ে ডিবি বা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কাউকে জানিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই ভুক্তভোগী ইজারাদার বলেন, রোববার ঢাকায় গিয়ে পুলিশ প্রধানকে জানাব এবং একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে মামলাও করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, যাদুকাটা ইজারা নেওয়ার জন্য আমি শিডিউল কিনিনি। আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কারও কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তারা স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় মহাল ইজারা নিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করতে চায়। 
ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলনে বলা সবকিছুই সাজানো দাবি করে যুবদল নেতা বলেন, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল এই নাটক সাজিয়েছেন। তিনি এই আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব কাজ করাচ্ছেন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সহজ-সরল ব্যবসায়ীকে ডিবি অফিসে অমানুষিক নির্যাতন করিয়েছে– ব্যবসায়ী নিজেই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। যাদুকাটা ইজারাবিহীন থাকায় হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন জানান, কোন ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ কোথাও নিয়ে নির্যাতন করেছে, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তারা পাননি। 
জেলার তাহিরপুর উপজেলার আলোচিত বালুমহাল যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ চলতি সালে ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়। যাদুকাটা-১-এর ইজারা নাছির মিয়া এবং যাদুকাটা-২-এর ইজারা পান শাহ্‌ রুবেল আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় ও জেলা নেতাদের অনেকে শরিক রয়েছেন বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা রয়েছে। 
সংবাদ সম্মেলনের পর যাদুকাটা-২-এর ইজারাদার শাহ রুবেল জানান, সরকারকে বৈধভাবে রাজস্ব দিয়ে ইজারা পাওয়ার পরও তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় তাঁর ওপর হামলা হতে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ দ বন দ ব ইজ র দ র ব এনপ র ব যবস য় র ইজ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পরামর্শ এবি পার্টির

রাষ্ট্র সংস্কার ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতারা। পাশাপাশি এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচার ও সংগঠন বিস্তারেও আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দিকনির্দেশনা দেন নেতারা। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও উপদেষ্টা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রাজনীতি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। আপনাদের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবি পার্টিই নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করতে সক্ষম হবে। দেশ পরিবর্তনে এবি পার্টির ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের সব উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে এবি পার্টির সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনকে ভোটারদের কাছে প্রধান বিবেচ‍্য ইস‍্যু হিসেবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের জনগণ যেন বুঝতে পারে এবি পার্টি সত্যিই নতুন রাজনীতি নিয়ে এসেছে। এদের পক্ষেই নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব। এলাকায় গিয়েই সবাইকে নির্বাচনী প্রচারণা ও সংগঠন বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ঐকমত্যের বাইরে দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার সম্ভব নয় উল্লেখ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ‘সরকার ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে সব দল একমত হলেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এর বাইরে গিয়ে সংবিধান নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়োগ নিয়েও রয়েছে তীব্র মতবিরোধ। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমাদের রাজনীতি করতে হবে।’

নির্বাচনী প্রচারে নানা পরামর্শ দিয়ে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনীতি করছি, এটা জনগণকে বোঝাতে হবে। এলাকার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান বি এম নাজমুল হক, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, নাসরীন সুলতানা, সানী আবদুল হক, আমিনুল ইসলাম, আলতাফ হোসাইন, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ এবি পার্টির সারা দেশের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পরামর্শ এবি পার্টির