বছরে শ্রমবাজারে ২২ লাখের প্রবেশ, প্রশিক্ষণ পায় ১.৯%
Published: 28th, June 2025 GMT
দেশে প্রতিবছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ২২ লাখ নতুন কর্মক্ষম মানুষ। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ আনুষ্ঠানিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পায়। বাকি সবাই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই সরাসরি শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ঝরে পড়া শিশুদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা (স্কিলফো) প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) এবং ইউনিসেফ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রণীত এই পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। কক্সবাজারে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের আওতায় উপকৃত হয়েছে প্রায় সাত হাজার কিশোর-কিশোরী। প্রকল্পটি এখন ১৬ জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে এক লাখেরও বেশি এনইইটি (যারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয়) শ্রেণির কিশোর-কিশোরী প্রাথমিক সাক্ষরতা ও শ্রমবাজারের চাহিদাভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবে।
স্কিলফো মডেলের লক্ষ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্কিলফো প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের কার্যকর সাক্ষরতা, গণনাজ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা, ডিজিটাল ও আর্থিক সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে। এসবই বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর (বিএনকিউএফ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্প এলাকার নির্বাচন করা হয়েছে স্থানীয় যুব জনসংখ্যা, দক্ষতা চাহিদা, চাকরির সম্ভাবনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিবেচনায়।
উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, স্কিলফো মডেল অনুসরণে দেশের ১৬ জেলায় প্রকল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে। এই মডেলে সামান্য পরিবর্তন এনে ভবিষ্যতে দেশের ৬৪ জেলায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে আমাদের শিক্ষা নিয়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা হবে নেতৃত্বের মূল ভিত্তি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। একটি হলো, ব্যক্তির সম্ভাবনার বিকাশ এবং অপরটি তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনায় এই উভয় দিকের সমন্বয় অপরিহার্য।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, স্কিলফোর সফলতা প্রমাণ করে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কম সাক্ষরতাসম্পন্ন এবং ‘এনইইটি’ যুব সমাজকেও কার্যকরভাবে ক্ষমতায়িত করা সম্ভব। এটি অপরাধ, বাল্যবিয়েসহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রবণতার ঝুঁকিও হ্রাস করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী কিশোরীদের (৮৩.১%) চাকরিপ্রাপ্তির হার ছেলেদের (৮১.৩%) চেয়ে বেশি।
জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পের সাফল্য এবং প্রমাণভিত্তিক ফলাফল পর্যালোচনার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো স্কিলফো মডেলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করবে। স্কিলফোকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি এবং জাতীয় প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র শ রমব জ র অন ষ ঠ ন স ক ষরত
এছাড়াও পড়ুন:
সফলভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুধু দায়িত্ব নয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনের ফলাফল ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে আগামী দিনে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে—গণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ নাকি অতীতের পুনরাবৃত্তি। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে ইসির সংলাপে এই বাস্তবতা উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে ইসিকে শক্তিশালী, স্বাধীন ও সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংলাপে অংশ নেওয়া নাগরিকেরা ইসিকে প্রথমেই সতর্ক করেছেন জনগণের আস্থার সংকটের বিষয়ে। কারণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা জনগণের আস্থার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। অতীতে ভোট নিয়ে অভিযোগ ও অনিয়ম সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ইসির প্রতি সেই আস্থা ক্ষয়ে গেছে। এবার যদি ইসি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, তবে ইতিহাসে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে ফলাফল সবাই জানে—গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন হবে।
আধুনিক নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশাল ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারের ৮০ শতাংশই হবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। সেখানে মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার ও এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসৃষ্ট বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এসব মোকাবিলায় ইসিকে এখনই কার্যকর কৌশল নিতে হবে। তা না হলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে, ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর বক্তব্যে উঠে এসেছে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের অপরিহার্যতা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ৫ থেকে ৭ শতাংশ নারী প্রার্থিতা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? দীর্ঘ সংগ্রামের পরও যদি নারীরা সংসদে ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব না পান, তবে সেটি কেবল প্রতীকী অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ থাকবে। তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি প্রবীণ, দরিদ্র, নারী ও সংখ্যালঘুদের যেন পিছিয়ে না দেওয়া হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতা প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর যথার্থই বলেছেন, দেড় দশক ধরে সহিংসতা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই প্রবণতা রোধ করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। শুধু তা-ই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকা রাখার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন সংলাপে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে, মৃত ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে, আইন সংস্কার করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে জনগণের দৃষ্টিতে এসবের চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ইসি কি রাজনৈতিক চাপমুক্ত থেকে নিজস্ব স্বাধীনতায় কাজ করতে পারবে? নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন, নিরপেক্ষ রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটকেন্দ্রে সঠিক সময়ে ব্যালট পাঠানো—এসব বাস্তবায়নেই প্রমাণ মিলবে ইসির নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার।
আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য একটি মাইলফলক। সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল বাংলাদেশ তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবে। সঠিক পথে হাঁটতে পারলে নির্বাচন কমিশন ইতিহাসে উজ্জ্বল স্থান পাবে; ব্যর্থ হলে আরও গভীর সংকটে পড়বে রাষ্ট্র ও সমাজ। নির্বাচন কমিশনের সামনে এখন একটাই পথ—নিরপেক্ষ, সাহসী ও স্বাধীন ভূমিকা পালন করে সফলভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।