দেশে প্রতিবছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ২২ লাখ নতুন কর্মক্ষম মানুষ। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ আনুষ্ঠানিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পায়। বাকি সবাই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই সরাসরি শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ঝরে পড়া শিশুদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা (স্কিলফো) প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) এবং ইউনিসেফ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বিশেষ অতিথি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম এবং সম্মানিত অতিথি ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাখাওয়াত হোসেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রণীত এই পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। কক্সবাজারে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের আওতায় উপকৃত হয়েছে প্রায় সাত হাজার কিশোর-কিশোরী। প্রকল্পটি এখন ১৬ জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে এক লাখেরও বেশি এনইইটি (যারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয়) শ্রেণির কিশোর-কিশোরী প্রাথমিক সাক্ষরতা ও শ্রমবাজারের চাহিদাভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবে।

স্কিলফো মডেলের লক্ষ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্কিলফো প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের কার্যকর সাক্ষরতা, গণনাজ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা, ডিজিটাল ও আর্থিক সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে। এসবই বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর (বিএনকিউএফ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্প এলাকার নির্বাচন করা হয়েছে স্থানীয় যুব জনসংখ্যা, দক্ষতা চাহিদা, চাকরির সম্ভাবনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিবেচনায়।

উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, স্কিলফো মডেল অনুসরণে দেশের ১৬ জেলায় প্রকল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে। এই মডেলে সামান্য পরিবর্তন এনে ভবিষ্যতে দেশের ৬৪ জেলায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে আমাদের শিক্ষা নিয়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা হবে নেতৃত্বের মূল ভিত্তি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। একটি হলো, ব্যক্তির সম্ভাবনার বিকাশ এবং অপরটি তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনায় এই উভয় দিকের সমন্বয় অপরিহার্য।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, স্কিলফোর সফলতা প্রমাণ করে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কম সাক্ষরতাসম্পন্ন এবং ‘এনইইটি’ যুব সমাজকেও কার্যকরভাবে ক্ষমতায়িত করা সম্ভব। এটি অপরাধ, বাল্যবিয়েসহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রবণতার ঝুঁকিও হ্রাস করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী কিশোরীদের (৮৩.১%) চাকরিপ্রাপ্তির হার ছেলেদের (৮১.৩%) চেয়ে বেশি।
জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পের সাফল্য এবং প্রমাণভিত্তিক ফলাফল পর্যালোচনার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো স্কিলফো মডেলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করবে। স্কিলফোকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি এবং জাতীয় প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র শ রমব জ র অন ষ ঠ ন স ক ষরত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় আসছে না আর্জেন্টিনা, ট্রফি উন্মোচন যমুনায়

সোমবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় নারী বিশ্বকাপ কাবাডি। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে হবে খেলা। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হচ্ছে কাবাডির কোনো বিশ্বকাপ।

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশসহ ১৪টি দল অংশ নেবে বলে কাবাডি ফেডারেশন জানিয়েছিল আগেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ১১টি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। দলগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, চাইনিজ তাইপে, জার্মানি, ইরান, কেনিয়া, নেপাল, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, উগান্ডা ও জাঞ্জিবার (তানজানিয়া)।

নিজস্ব সমস্যায় আসছে না আর্জেন্টিনা। আসছে না হল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও। হল্যান্ডের জায়গায় পোল্যান্ড ঢুকেছে, যারা স্টান্ডবাই ছিল। পাকিস্তান স্ট্যান্ডবাই তালিকায় থাকলেও তারা বিশ্বকাপ খেলার জন্য তৈরি নয় বলে জানিয়েছে।

টুর্নামেন্টের ফরম্যাট ঠিক হবে আগামীকাল ম্যানেজার্স মিটিংয়ে। তবে দলগুলোকে দুই গ্রুপে ভাগ করে খেলার সম্ভাবনাই বেশি। ‌১১টি দলের অধিনায়ককে নিয়ে আগামীকাল ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান হবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনায়।

টুর্নামেন্টের বাজেট ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ছিল। তবে সরকার ১০ কোটি ২৬ লাখ অনুমোদন করেছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দিচ্ছে ৫ কোটি টাকা। সব দলের টিকিট দিচ্ছে আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন। বাকি অর্থ পৃষ্ঠপোষকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আজ ঢাকায় বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাবাডি ফেডারেশনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল ঘোষণা করেন বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগ। দল ঘোষণা অনুষ্ঠানে কোচ-অধিনায়ক কাউকে আনা হয়নি। অধিনায়ক করা হয়েছে রুপালী আক্তার সিনিয়রকে, বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক কাবাডি থেকে বিদায় নিতে চলেছেন তিনি।

গতকাল ঢাকায় এসেছে নারী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারত ও জাঞ্জিবার। আজ এসেছে উগান্ডা, জার্মানি, ইরান নারী কাবাডি দল। সব দলকেই রাখা হয়েছে একই হোটেলে।
বাংলাদেশ এখন নারী, পুরুষ আর জুনিয়র সব বিভাগেই র‌্যাঙ্কিংয়ে পঞ্চম । বাংলাদশের লক্ষ্য কী? ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নারীদের র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে পঞ্চম স্থানে আছে। এই বিশ্বকাপ দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করা সম্ভব মনে করি আমরা, আমাদের সামনে সেই সুযোগ রয়েছে। দলের কাছে আমাদের মূল প্রত্যাশাও এটি।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রথম বাংলাদেশ নারী কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। আয়োজক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা সফলভাবে আয়োজন সম্পন্ন করা। এখানে বিভিন্ন দেশের কোচ, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, রেফারিসহ আরও অনেকে আসবেন। আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে কাবাডি বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হবে।’

খেলা পরিচালনার জন্য প্রতিটি দেশ থেকে রেফারি আনা হয়েছে। ভারত থেকে এসেছেন পাঁচজন রেফারি। বাংলাদেশের ১০ থেকে ১২ জনের একটি টেকনিক্যাল কমিটি আছে, যাতে রেফারিংয়ের মান আরও উন্নত হয় এবং এ নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, জানিয়েছেন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।

বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল

শ্রাবণী মল্লিক, বৃষ্টি বিশ্বাস, রুপালী আক্তার (সিনিয়র), স্মৃতি আক্তার, রেখা আক্তারী, মেবী চাকমা, রুপালী আক্তার, আঞ্জুয়ারা রাত্রি, সুচরিতা চাকমা, খাদিজা খাতুন, লোবা আক্তার, ইয়াসমিন খানম, ইসরাত সাদিকা ও তাহরিমা।

স্ট্যান্ডবাই: আফরোজা, লুম্বিনী চাকমা। কোচ শাহনাজ পারভীন মালেকা ও আরদুজ্জামান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় আসছে না আর্জেন্টিনা, ট্রফি উন্মোচন যমুনায়