গত ৫ আগস্টের পর শরীয়তপুরের রাজনীতির হালচাল পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এই জনপদে দেখা নেই দলটির নেতা-কর্মীর। রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কমিটি ও রাজনৈতিক তৎপরতা নেই।

পুরো রাজনীতির মাঠ দখলে থাকলেও বিএনপিতে কোন্দল আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জেলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন্দল মোকাবিলা করতে হচ্ছে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। দলটির নেতারা ঠিকাদারি, হাট-ঘাট, বালুর ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নিতেও তৎপর। আর তিনটি সংসদীয় আসন, ছয়টি উপজেলা পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভায় প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে ইসলামী মাঠ গোছানোর কাজ করছে।

বিএনপির হালচাল

বিএনপিতে কোন্দলের কারণে শরীয়তপুরে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। নেই যুবদলের কমিটি, ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে চলছে বিরোধ। বিএনপির নেতাদের জেলার নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ ও তিনটি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় চরম আকারে বিরোধ আছে।

১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি শরীয়তপুরের কোনো আসনে জয়ী হতে পারেননি। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য শরীয়তপুর-১ আসনে তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য সরদার নাসির উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক মজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাবুবুর রহমান তালুকদার ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিন্টু সওদাগর।

শরীয়তপুর-২ আসনে তৎপর আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম ফয়সাল ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন ঝিন্টু।

শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এপিএস মিয়া নুরুদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আহমেদ আসলাম। এই নেতারা মনোনয়ন চেয়ে মাঠপর্যায়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়েছেন। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ আছে। যাঁর যাঁর মতো আলাদাভাবে স্থানীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

২০১৭ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে। এরপর আর ওই কমিটি কোনো সম্মেলন করতে পারেনি। সম্প্রতি আবার জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে, এমন গুঞ্জন শুরু হয়। এর পর থেকে কমিটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মিয়া নুরুদ্দিন, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন শফিকুর রহমান ও সরদার নাসির উদ্দিন। জেলার অন্য নেতারা ওই দুই পক্ষর সঙ্গে বিভক্ত হয়ে বিরোধে আছেন।

৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতারা নদীর চরের বালু উত্তোলন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি, গরুর হাট ইজারা, হাটবাজার ইজারা, ফেরিঘাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। ফলে ব্যবসার আধিপত্য ও দখল নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিরোধ আছে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চালাতে পারছি না। আমাকে নীতিনির্ধারণী মহলের আদেশ ফলো করতে হয়। আর বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নেতৃত্বের নানা ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। তারপরও বলব, দীর্ঘ ১৭ বছরের মামলা-হামলা, দমন-নিপীড়ন মোকাবিলা করে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত রাখতে পেরেছি।’

মিয়া নুরুদ্দিনের বক্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

নির্বাচনমুখী কার্যক্রমে জামায়াত

শরীয়তপুরের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর শক্ত অবস্থান কখনোই ছিল না। মামলা-হামলায় জর্জরিত দলটির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকে চালাতেন কার্যক্রম। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাঁরা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছেন জোরেশোরে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির আমিরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে শরীয়তপুরে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ছয়টি উপজেলা পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি, যাঁরা মাঠপর্যায়ে নানা ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন শরীয়তপুর-১ আসনে মোশারফ হোসেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শিবিরের সাবেক সভাপতি। শরীয়তপুর-২ আসনে জাতীয় ডক্টর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন বকাউলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর শরীয়তপুর-৩ আসনে ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ আজহারুল ইসলামের নাম।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর শরীয়তপুর জেলার নায়েবে আমির কে এম মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমরা নির্বিঘ্নে স্বস্তিতে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছি। আমরা সব প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তাঁরা ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করছেন।’

অন্য দলের তৎপরতা নেই

শরীয়তপুরে এনসিপির জেলা কমিটি গঠন করা হয়নি। এর বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা জেলার কোথাও নেই।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখনো এ জেলায় শুরু হয়নি। সামাজিক কর্মকাণ্ড ও নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে নেই তৎপরতা

শরীয়তপুর বরাবরই আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা। সরকার পতনের পর দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা মামলার আসামি হয়ে এলাকা ছেড়েছেন। কর্মী-সমর্থকেরা থাকলেও তাঁরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেই। তবে রাতের আঁধারে জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি বেশ কিছু মিছিল করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব এনপ র ক র জন ত ক র জন ত র র রহম ন ইসল ম র র র জন য় কম ট কম ট র দল র ক র জন য ক ন দল ন র জন র কম ট গঠন ক দলট র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি গুপ্তচরদের সঙ্গে আরও যাঁরা ইরানকে দুর্বল করছেন

বহু বছর ধরে ইসরায়েলি গুপ্তচরেরা ইরানের ভেতর যে বিস্তৃত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটিরই ফলাফল ‘শত্রু দেশের’ ওপর এতটা নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো এভাবেই নিজেদের গুপ্তচরদের প্রশংসা করে খবর প্রচার করে।

ওই খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের নিরাপত্তা কাঠামোর বড় একটি অংশে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সেদিন ইসরায়েলের হামলায় ইরানের শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন।

ইসরায়েলের হয়ে ইরানে শুধু ইসরায়েলি গোয়েন্দারাই গুপ্তচরের কাজ করছেন না; বরং অনেক ইরানি তাঁদের দোসর হিসেবে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনটাই বলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তার।

হামজা আত্তার লুক্সেমবার্গ থেকে আল–জাজিরাকে বলেন, সম্ভবত ইরানের ভেতর ইসরায়েলের ৩০ থেকে ৪০টি গুপ্তচর সেল সক্রিয় রয়েছে।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘তাঁদের অধিকাংশই সরাসরি ইসরায়েলের গোয়েন্দা নন; বরং তাঁদের স্থানীয় সহযোগী। তাঁরাও ইসরায়েলকে দুর্বল করছেন। এসব দলের মধ্যে কেউ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র পাচারের দায়িত্বে থাকেন, কেউ হামলার কাজে নিয়োজিত এবং অন্যরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেন।’

ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইরান এখন পর্যন্ত তেল আবিবের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছে। তাঁদের মধ্যে ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রসুল আহমদ নামের তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে।

ইরানের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে তাঁরা দেশটির ভেতর সরঞ্জাম প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জায়নবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর উরমিয়ায় ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তুরস্কের সীমান্তের কাছে উরমিয়ার অবস্থান।

ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১২ দিনে ৭ শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী।

এ ছাড়া ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১২ দিনে ৭ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

এই সন্দেহভাজনদের মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশ থেকে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতার ধরন

১৩ জুন ইরানে হামলার পরপরই, ‘নজিরবিহীন’ এ হামলার পেছনে থাকা ইসরায়েলি গোয়েন্দা অভিযানের নানা বিবরণ দেশটির সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা মহলের শীর্ষ সদস্যরা একাধিক সাক্ষাৎকারে কীভাবে এ হামলা পরিচালনায় একসঙ্গে মানব গোয়েন্দা (হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)  ব্যবহার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, এর মাধ্যমে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বড় অংশ অকার্যকর করে দেওয়া সম্ভব হয়।

১৭ জুন, হামলার কয়েক দিন পর, সংবাদ সংস্থা এপি ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক বাহিনীর অন্তত ১০ জন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে, যাঁরা ওই হামলার বিষয়ে জানতেন।

মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক সিমা শাইন এপিকে বলেন, ‘এ হামলা মোসাদের বহু বছরের পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফল।’

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা। তেহরান, ইরান, ১৩ জুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলি গুপ্তচরদের সঙ্গে আরও যাঁরা ইরানকে দুর্বল করছেন