সরকারি স্কুলের গাছ কেটে বাড়ি নিলেন বিএনপির নেতা
Published: 29th, June 2025 GMT
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ কেটে বাড়ি নিয়ে গেছেন বিএনপির এক নেতা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গাছটি কেটে নেওয়া হলেও আজ রোববার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়।
উপজেলার বানিয়াজান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির গাছটি কেটে নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হুমায়ুন কবির শনিবার সন্ধ্যায় শাহানা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে থাকা একটি রেইনট্রিগাছ লোকজন দিয়ে কেটে বাড়ি নিয়ে যান। ঘটনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কেউ জানতে পারেননি। আজ রোববার সকাল থেকে বিষয়টি জানাজানি হয়।
বিদ্যালয়সংলগ্ন আটপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, এভাবে সরকারি জায়গা থেকে বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির গাছ কেটে নিয়ে যেতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল বাহার খান বলেন, ‘শনিবার স্কুল বন্ধ থাকায় বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরে সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা আমাকে জানালে আমি তা সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ছোট রেইনট্রিগাছটির কারণে স্কুলে সমস্যা হচ্ছিল, কিছু ডালপালা মরে যাচ্ছিল। তাই আমি গাছটির কিছু ডালপালা কেটে দিয়েছিলাম। এরপর একজন বললেন গাছটির জন্য বিদ্যালয়ের দেয়ালের সমস্যা হচ্ছে। তাই কেটে বাড়িতে নিয়ে যাই। এখন বুঝতে পারছি, এটা ভুল হয়েছে। এ কাজটি আমার করা ঠিক হয়নি।’
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘এভাবে তিনি সরকারি স্কুল থেকে গাছ কাটতে পারেন না। তিনি যদি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এ কাজ করে থাকেন, তবে দল তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব এনপ র সরক র উপজ ল ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে চালানো হামলায় তছনছ হচ্ছে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চল। রাতভর অঞ্চলটি কেঁপে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের শব্দে। গত সোমবার রাতে সেখানে হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে হত্যা করা হয়েছে ৮৯ ফিলিস্তিনিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। জুলাইয়ের শেষ দিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আলোচনা থেকে সরে যায় দুই পক্ষ। এরপর গাজা সিটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল সরকার। তখন থেকেই সেখানে তীব্র হামলা চলছে। কত দিন এই হামলা চলবে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরায়েল।
গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৯ জনের মধ্যে ৩১ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫১৩ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৫৯৯ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সবাই বেসামরিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে গাজা সিটির জাইতুন এলাকায় দুটি বাড়ি ও মধ্যাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১১ জন নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে হামলায় এক শিশু ও তার মা–বাবাসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। মাওয়াসি উপকূলে নিহত হয়েছেন চারজন।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, গাজার বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার সংখ্যা যতটা সম্ভব কমাতে চাচ্ছে তারা। গতকাল তারা বলেছে, আগের মাসে উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানও। তাঁর মতে, এতে গাজায় বেঁচে থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া এমন পরিকল্পনা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মি বন্দী আছেন। তাঁদের ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে খাবারের চরম সংকটের কারণে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় না খেতে পেয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুটি শিশু। এ নিয়ে সংঘাত শুরুর পর থেকে অনাহারে ২২৭ জনের মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে শিশু ১০৩।
কায়রোয় যাবেন হামাস নেতাএদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবার শুরু করতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় যাচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল–হায়া। আলোচনার বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছেন হামাস নেতারা।
তবে যুদ্ধবিরতির মূল শর্তগুলো নিয়ে এখনো হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং হামাসের অস্ত্র ত্যাগের মতো শর্তগুলো। তবে স্বাধীন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র না প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠনটি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরবের একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর এখনো আলোচনা আবারও শুরুর আশা ত্যাগ করেনি। আর গাজা সিটিতে ইসরায়েলের নতুন করে অভিযান শুরুর যে পরিকল্পনা, তা হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্যও হতে পারে।