এলাকায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তিনি পরিচিত ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। অথচ তিনিই পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়কের পদ। এতে বিক্ষুব্ধ দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁরা।

এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরে। পদ পাওয়া ওই ব্যক্তির নাম শহীদুল ইসলাম। নগরের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আহ্বায়ক করা হয়েছে তাঁকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও অনুমোদন করা হয়। এতে ২১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৪৮ জনকে সদস্য করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান কমিটি অনুমোদন করেন। একই সঙ্গে নগরের চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন ১৫ থানার পূর্ণাঙ্গ ও ১২টি ওয়ার্ডের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়, যার মধ্যে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডও রয়েছে।

শহীদুল ইসলামকে ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে পরদিন শুক্রবার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন দলের কিছু নেতা-কর্মী। এ সময় তাঁরা ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। আজ সোমবার বিকেলেও উত্তর পাহাড়তলীতে এ–বিষয়ক কর্মসূচি রয়েছে।

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড নগরের আকবর শাহ থানার আওতাধীন। জানতে চাইলে আকবর শাহ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, কারাগারে ছিলেন, সেই ত্যাগীদের বাদ দিয়ে যাঁকে দলীয় কোনো মিছিল-সমাবেশে এলাকায় কেউ দেখেননি, তাঁকে করা হয়েছে আহ্বায়ক। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের নিষ্ক্রিয় কর্মীকে আহ্বায়ক করলেও মনকে বোঝানো যেত; এমন একজনকে করা হয়েছে, যাঁকে সবাই চেনেন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। যাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অসংখ্য ছবি-ভিডিও রয়েছে।’ ওয়ার্ড কমিটির মতো থানা কমিটিও দায়সারাভাবে করা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে নিজে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরাও চেনেন না ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুলকে। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রেহান উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে যাঁকে, তাঁকে কখনো দলের মিছিল সমাবেশে দেখিনি। সবাই তাঁকে চেনেন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। নাম আসার পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি দলের নগর ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে।’

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন মোহাম্মদ রনি। দলের ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়কের পদপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে মোহাম্মদ রনি বলেন, ‘যখন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ ছিল না, তখন মিছিল-সমাবেশে লোক নিয়ে যেতাম। নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-আপ্যায়ন সম্পাদক ছিলাম, তিন মামলার আসামি হয়েছি। অথচ যখন কমিটি ঘোষণা করা হয়, তখন নাম দেখি ছাত্রলীগ কর্মীর। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দল আমাকে যোগ্য মনে না করলে পদ না দিলেও কোনো অসুবিধা নেই। দলের অন্য কাউকে দিক। কিন্তু ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত কাউকে পদ দেওয়া দলের জন্য কতটুকু সমীচীন?’

শহীদুলকে ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে গত শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম র এল ক য় নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনে মুক্ত ৩ পুলিশ সদস্য, পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিহতের মায়ের

সিলেটে পুলিশ হেফাজতে নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার আসামিদের একে একে জামিন হওয়ায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছে পরিবার। রায়হানের মা সালমা বেগমের দাবি, এতে করে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মামলাটি থেকে সর্বশেষ গত রোববার প্রধান আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আকবরের জামিনের পর একই মামলায় আরও দুই পুলিশ সদস্য জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তাঁরা হলেন কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস (৩৮) ও হারুন অর রশিদ (৩২)। ২০ ফেব্রুয়ারি টিটু এবং ১৭ এপ্রিল হারুন অর রশিদ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

আরও পড়ুনসিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরের জামিন১১ আগস্ট ২০২৫

এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুন জামিন পেয়ে পলাতক আছেন এসআই হাসান উদ্দিন (৩২)। এ ছাড়া মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই দেশের বাইরে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ আল নোমান নামের আরেক আসামি। তিনি সম্পর্কে আকবরের আত্মীয়।
সালমা বেগম গতকাল সোমবার বিকলে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার অভিযুক্তরা একে একে জামিনে বের হয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার আকবর হোসেন জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। বিষয়টি তিনি গতকাল আদালতে গিয়ে জানতে পেরেছেন। এর আগে জামিন পাওয়া দুজন মামলার তারিখে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। আসামিরা উল্টো বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আবুল ফজল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ৬৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বর্তমানে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত আগামী ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করেছেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন।

আরও পড়ুনএসআই আকবরের হুমকি—বুকে গুলি করব, পিঠ দিয়ে বের হবে২৪ অক্টোবর ২০২০

এই আইনজীবী বলেন, মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩)।

এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২–এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, উচ্চ আদালত থেকে আকবর হোসেনের জামিন মঞ্জুরের পর নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে এ–সংক্রান্ত তথ্যের নথি কারাগারে পাঠানো হলে গত রোববার সন্ধ্যায় তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল একই কারাগার থেকে হারুনুর রশীদ জামিনে বের হয়েছেন। গত ২৫ মার্চ থেকে তাঁরা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।

আরও পড়ুন‘আমার রায়হানই যেন পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর শেষ নাম হয়’২৩ অক্টোবর ২০২০

অভিযোগ আছে, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। পরে ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর অভিযোগের সত্যতা পায় সিলেট মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ওই বছরেই ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।

আরও পড়ুন‘টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আসো, আমাকে বাঁচাও’১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনপুলিশের দাবি করা গণপিটুনির চিত্র মেলেনি সিসি ক্যামেরায় ১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনইনচার্জসহ বরখাস্ত ৪, প্রত্যাহার ৩ পুলিশ১২ অক্টোবর ২০২০আরও পড়ুনপুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু: আসামি উল্লেখ না করে মামলা১২ অক্টোবর ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামিনে মুক্তির পরই ভারতে পালিয়েছেন এসআই আকবর, দাবি নিহতের মায়ের
  • জামিনে মুক্ত ৩ পুলিশ সদস্য, পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা নিহতের মায়ের