বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। দলটির সাম্প্রতিক চীন সফর বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে চীনের সমর্থনের বিষয়টি উঠে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব কেমন দেখা গেছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) দেখেছি।’
পাঁচ দিনব্যাপী এই সফরে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর নেতৃত্বে চীনের বিস্ময়কর উন্নতি, আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধি এবং তাঁর ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এর ইতিবাচকতার কথা মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে।
এই বৈঠকে লি-হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদানের কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দেশটিকে অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে আমরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও তাঁদের সহায়তা চেয়েছি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।'
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সঙ্গে সফরের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবেশ ও প্রযুক্তি উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমশক্তির সক্ষমতা, উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টিও উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চীন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও রপ্তানি সুযোগ বৃদ্ধির বাস্তব পদক্ষেপ, কুনমিংয়ে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সহজতর করা এবং চীন-বাংলাদেশের মাঝে স্থলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগও আলোচ্য সূচিতে ছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল।
চীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলেও জানান দলের মহাসচিব।
সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফরে গিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার। আজ তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফখর ল ইসল ম ব এনপ র ন ব এনপ আলমগ র র আহ ব
এছাড়াও পড়ুন:
‘মাতৃভাষা ও শিক্ষা : শতবর্ষের ভাবনা’ বই নিয়ে আলোচনা
প্রবন্ধ সংকলন ‘মাতৃভাষা ও শিক্ষা: শতবর্ষের ভাবনা’ বই নিয়ে বইবিষয়ক পত্রিকা ‘এবং বই’ ও ‘শিক্ষালোক’-এর যৌথ উদ্যোগে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে ঢাকার শেখেরটেকের সিদীপ মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়।
আলোচ্য বইটি প্রকৃতি প্রকাশনী ও সিদীপ যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। অক্ষয়কুমার দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৈয়দ মুজতবা আলী থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের অধ্যাপক শহিদুল ইসলামসহ প্রথিতযশা লেখকদের আটটি লেখা নিয়ে প্রকাশিত সংকলনটি সম্পাদনা করেছেন আলমগীর খান।
সিদীপের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ শহিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘এবং বই’ সম্পাদক ও লেখক ফয়সাল আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষালোকের নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর খান।
আয়োজনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও অনুবাদক জাভেদ হুসেন, ইউল্যাব শিক্ষক খান মো. রবিউল আলম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কুদরতে খোদা, কথাসাহিত্যিক আহমদ বশীর, এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক ফাতিহুল কাদির সম্রাট, কবি শামসেত তাবরেজী ও শিল্পী শিশির মল্লিক প্রমুখ।
‘এবং বই’ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, আজ আলোচনার জন্য আমরা একটি গুরত্বপূর্ণ বই নির্বাচন করেছি। যে বইটির প্রধান বিষয় মাতৃভাষা ও শিক্ষা। আমরা এবং বই ও শিক্ষালোক যৌথভাবে এ ধরনের কাজ আরও করতে চাই।
জাভেদ হুসেন ‘মাতৃভাষা ও শিক্ষা’ বইটি নিয়ে তার আলোচনায় রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রাজার ১০০০ চোখ থাকলেও যখন শিক্ষার ব্যাপার আসে, তখন তার ৯৯০টি চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রধান অতিথি শিক্ষাবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে পরনির্ভরশীল, সেজন্য আমরা ভাষাসহ সবকিছুতেই পরনির্ভরশীল। তিনি বলেন, আমাদের বাংলা ভাষার চর্চা যেমন বাড়াতে হবে, ঠিক তেমনি প্রযুক্তিতেও নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।