জ্বালানি এবং সামাজিক সুরক্ষা ড্যাশবোর্ড চালু
Published: 30th, June 2025 GMT
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ উদ্যোগে এক গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালানি এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে দুটি ড্যাশবোর্ডের উদ্বোধন করা হয়েছে।
পলিসি এক্সজেঞ্জ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার রাজধানীর এমসিসিসিআই কনফারেন্স রূমে ‘বাংলাদেশে নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে সরকারি তথ্যের ব্যবহার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মীরা একত্রিত হয়ে সরকারি তথ্য ব্যবস্থায় উদ্ভাবন এবং তথ্যনির্ভর নীতিনির্ধারণে তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে দুটি প্রোটোটাইপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ এনার্জি ড্যাশবোর্ড এবং বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন ড্যাশবোর্ড নামে দুটি প্ল্যাটফর্ম বাস্তবসম্মত ও নীতিনির্ধারণ উপযোগী উপাত্তের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে নীতি ও গবেষণা সংযোগের পরিবেশ আরও শক্তিশালী করা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উৎসাহিত করা।
আইজিসি বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি বাংলাদেশ এনার্জি ড্যাশবোর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানির খরচ, উৎপাদন সক্ষমতার সদ্ব্যবহার এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিজুয়ালাইজেশন ও ডাউনলোডযোগ্য ডেটাসেট সরবরাহ করবে। এটি জ্বালানি খাতে কৌশলগত পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রাপ্তি বাড়াতে সহায়তা করবে।
আইজিসি এবং বিআইজিডির যৌথ উদ্যোগে তৈরি বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন ড্যাশবোর্ডে (স্থানীয় পর্যায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত উপাত্ত পাওয়া যাবে। এ প্ল্যাটফর্ম জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্থানীয় চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেবা প্রদান এবং হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড.
আইজিসি গবেষণা কার্যক্রম প্রধান শাহিদ ভাজিরালি বলেন, তথ্য হচ্ছে নীতিনির্ধারণের জন্য দরকারি অবকাঠামো। এজন্য তথ্যকে একটি ‘সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ হিসেবে ভাবা উচিত। তথ্য জ্ঞান পরিবহন করে এবং নীতিনির্ধারকদের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার সাথে যুক্ত করে। যদি একজন নীতিনির্ধারক না জানেন কোথায় শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে বা কোথায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছায়নি, তাহলে তা এমন যেন কেউ নদীভাঙ্গন কোথায় হচ্ছে তা না জেনেই বাঁধ বানাতে চায়।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি বক্তব্য দেন আইজিসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. রবিন বার্জেস। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়রাম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। আলোচনায় উঠে আসে , তাৎক্ষণিক, বিশ্লেষণযোগ্য ও সহজলভ্য তথ্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি অংশীজনদের কার্যকর সমন্বয় এবং সরকারি সেবার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাঙালি মুসলিমদের নিশানা করেই কি আসামে আদিবাসীদের অস্ত্র দিচ্ছে রাজ্য সরকার
ভারতের আসাম রাজ্যের বিজেপি সরকার তীব্র বিতর্ক সত্ত্বেও গতকাল বৃহস্পতিবার আদিবাসীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ওই দিনই জানানো হয়েছে, অনলাইনে আবেদন করে রাজ্যের ‘অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত’ এলাকায় বসবাসকারী ‘মূল নিবাসী উপজাতি গোষ্ঠীর’ মানুষ আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
ভারতের সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, বিজেপিশাসিত রাজ্যের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অতীতের একাধিক ভাষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে ‘অরক্ষিত’ এলাকা বলতে এমন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে বাঙালি-বংশোদ্ভূত মুসলিমরা বসবাস করেন।
রাজ্যের একাংশের মানুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে শুক্রবার বলেন, এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতে সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিল।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নাগরিকের হাতে অস্ত্র থাকা প্রয়োজন: মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত
অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বৃহস্পতিবার পোর্টাল চালু করার সময় মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘যদি আমি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বা আন্তরাষ্ট্রীয় সীমানা অঞ্চলের কাছাকাছি থাকি, অথবা আমি এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করি, যেখানে আমার সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা খুবই কম। যদি সেখানে একটি সম্প্রদায়ের হার ৯০-৯৫ শতাংশ হয় এবং অপর সম্প্রদায় ৫ শতাংশ হয়, তবে সেখানে উত্তেজনা থাকবে। ঐতিহাসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক—সব স্তরেই উত্তেজনা থাকবে। একটি ছোট ঘটনা এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে পারে যেখানে ৯৫ শতাংশের সম্প্রদায় ৫ শতাংশকে আক্রমণ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে।’
আসামের আদিবাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর আরও যুক্তি, সাধারণভাবে একটি থানায় ৬ থেকে ১২ জন কনস্টেবল থাকেন। কোনো সংঘাত হলে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
বিজেপির এই উগ্রবাদী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই দুই-তিন ঘণ্টা আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। এবং যদি লোকেরা (আক্রমণকারীরা) এটা জানে, আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত বাড়িতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে, তাহলে এটিই একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের ‘প্রথম প্রতিরক্ষক’ বলেও উল্লেখ করেন হিমন্ত।
কারা পেতে পারেন আগ্নেয়াস্ত্র
আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের জন্য ‘সেবা সেতু’ নামে একটি পোর্টালে আবেদন করা যাবে। সেবা সেতু ওয়েবসাইটে এত দিন আসাম সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পরিষেবার ঘোষণা দেওয়া হতো। সেসবের পাশাপাশি এখন জানানো হয়েছে, কারা আগ্নেয়াস্ত্র পেতে পারেন।
ওয়েবসাইটে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদনকারীকে আসামের আদিবাসী হতে হবে, তার বয়স কমপক্ষে ২১ হতে হবে এবং ‘অরক্ষিত ও প্রত্যন্ত’ অঞ্চলে বসবাস করতে হবে। আবেদনকারীর অপরাধমূলক কোনো ব্যক্তিগত ইতিহাস থাকা চলবে না এবং তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও থাকা চলবে না।
সেবা সেতু ওয়েবসাইটে শর্তে আরও বলা হয়, আবেদনকারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। ২০১৬ সালের অস্ত্র আইন মোতাবেক উপযুক্ত প্রশিক্ষণও থাকতে হবে।
তবে প্রচারমাধ্যমের বক্তব্য অনুসারে, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ‘অরক্ষিত অঞ্চল’ বলতে বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলকে বোঝালেও সেবা সেতুতে অরক্ষিত অঞ্চলের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। বন্দুক সংগ্রহ করার আগে আরও একাধিক বিষয়—যেমন কেন তার আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োজন—এ বিষয়ে আবেদনকারীকে লিখিতভাবে তার বক্তব্য রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।
ভারতের বর্তমান অস্ত্র আইন অনুসারে একজন সাধারণ বেসামরিক নাগরিকের পক্ষে আইনগতভাবে অস্ত্র কেনা বা সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। আসাম সরকারের এই নতুন নির্দেশনা অস্ত্র সংগ্রহ করাকে অনেক সহজ করে দেবে বলে আসামের সাধারণ মানুষই মনে করছেন।
নাগরিক সমাজের বিরোধিতা
আজ শুক্রবার প্রথম আলোর সঙ্গে এই বিষয়ে আসামের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি আসামে তৈরি হতে চলেছে।’
ওই ব্যবসায়ী বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে আসামে এই মুহূর্তে প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলিম রয়েছেন, যাঁদের বড় অংশই বাঙালি মুসলমান। আসামে যে জনবিন্যাসের একটা পরিবর্তন হচ্ছে তা–ও অনস্বীকার্য। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, সমাজের একটি বৃহৎ অংশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে।
আসামের ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, যে রাজ্যে বা দেশে সাধারণ মানুষের হাতে বেশি অস্ত্র থাকে, সেখানে সাধারণভাবেই বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে মাঝেমধ্যেই স্কুল-কলেজে গুলি চলে। আসামে সুকৌশলে পরিস্থিতিকে সেই দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুনআসামে কাদের লক্ষ্য করে আদিবাসী, মূল নিবাসীদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দিল হিমান্তের সরকার৩০ মে ২০২৫উত্তর-পূর্ব ভারতে একসময় কর্মরত এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার মতে, এর ফলে আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশেও সহিংসতা বাড়বে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্দুক এমন এক জিনিস, যা এক জায়গায় থেমে থাকে না। একেকটি বন্দুকের বিরাট আয়ু হয়, যত্নে রাখলে একেকটি বন্দুক দীর্ঘদিন কাজ করে। ফলে এই আগ্নেয়াস্ত্র ধীরে ধীরে কালোবাজারে বিক্রি হবে এবং তা গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও ঢুকে পড়বে। আসামের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত রয়েছে।’
সাবেক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা, যার সীমান্তের মাত্র ২ শতাংশ রয়েছে ভারতের সঙ্গে। বাকি ৯৮ শতাংশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে।
অবসরপ্রাপ্ত ওই পুলিশ কর্তা বলছিলেন, ‘সেসব দেশের সঙ্গে নানা কারণে ভারতের সম্পর্ক বেশ খানিকটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা ঈশ্বরই জানেন।’
উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের কথায়, এর ফলে শুধু আসামে নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সহিংসতা বাড়বে। কারণ, এই বন্দুক সেখানেও পৌঁছবে।
ওই গবেষক বলেন, ‘আমার মনে হয় এই কাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হলো। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হয়তো এভাবে নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে তুলে ধরতে চাইছেন। কারণ, তিনি দেখেছেন, মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের রাজনৈতিক জীবনে চরম উন্নতি করেছেন।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে হিমন্তের বিতর্কিত মন্তব্য, নিন্দা জানাল বিরোধীরা১৮ মে ২০২৪