পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ উদ্যোগে এক গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালানি এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে দুটি ড্যাশবোর্ডের উদ্বোধন করা হয়েছে। 

পলিসি এক্সজেঞ্জ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার রাজধানীর এমসিসিসিআই কনফারেন্স রূমে ‘বাংলাদেশে নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে সরকারি তথ্যের ব্যবহার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মীরা একত্রিত হয়ে সরকারি তথ্য ব্যবস্থায় উদ্ভাবন এবং তথ্যনির্ভর নীতিনির্ধারণে তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকে দুটি প্রোটোটাইপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ এনার্জি ড্যাশবোর্ড এবং বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন ড্যাশবোর্ড নামে দুটি প্ল্যাটফর্ম বাস্তবসম্মত ও নীতিনির্ধারণ উপযোগী উপাত্তের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে নীতি ও গবেষণা সংযোগের পরিবেশ আরও শক্তিশালী করা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উৎসাহিত করা।

আইজিসি বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি বাংলাদেশ এনার্জি ড্যাশবোর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানির খরচ, উৎপাদন সক্ষমতার সদ্ব্যবহার এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিজুয়ালাইজেশন ও ডাউনলোডযোগ্য ডেটাসেট সরবরাহ করবে। এটি জ্বালানি খাতে কৌশলগত পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রাপ্তি বাড়াতে সহায়তা করবে। 

আইজিসি এবং বিআইজিডির যৌথ উদ্যোগে তৈরি বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন ড্যাশবোর্ডে (স্থানীয় পর্যায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত উপাত্ত পাওয়া যাবে। এ প্ল্যাটফর্ম জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্থানীয় চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেবা প্রদান এবং হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে।

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড.

ইমরান মতিনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একাধিক প্রেজেন্টেশন ও প্যানেল আলোচনার হয়। জ্বালানি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে হালনাগাদ ও সহজলভ্য তথ্যের গুরুত্ব নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত হয়

আইজিসি গবেষণা কার্যক্রম প্রধান শাহিদ ভাজিরালি বলেন, তথ্য হচ্ছে নীতিনির্ধারণের জন্য দরকারি অবকাঠামো। এজন্য তথ্যকে একটি  ‘সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ হিসেবে ভাবা উচিত। তথ্য জ্ঞান পরিবহন করে এবং নীতিনির্ধারকদের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার সাথে যুক্ত করে। যদি একজন নীতিনির্ধারক না জানেন কোথায় শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে বা কোথায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছায়নি, তাহলে তা এমন যেন কেউ নদীভাঙ্গন কোথায় হচ্ছে তা না জেনেই বাঁধ বানাতে চায়। 

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি বক্তব্য দেন আইজিসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. রবিন বার্জেস।  অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়রাম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।  আলোচনায় উঠে আসে , তাৎক্ষণিক, বিশ্লেষণযোগ্য ও সহজলভ্য তথ্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি অংশীজনদের কার্যকর সমন্বয় এবং সরকারি সেবার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স রক ষ সরক র আইজ স

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ