ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে কুকি জনজাতি অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুর জেলায় গতকাল সোমবার চারজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একটি গাড়িতে তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি মৃতদেহে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া একজন নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

মণিপুর পুলিশ আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্ত শুরুর পাশাপাশি আততায়ীদের খুঁজে বের করতে দক্ষিণ মণিপুরের ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এই খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে।

মণিপুরে প্রায় দুই বছর ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় এবং কুকি-জো আদিবাসীদের মধ্যে সংঘাত চলছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারের ঘটনা তার ব্যতিক্রম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, চূড়াচাঁদপুর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত যাঁদের মৃতদেহ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন জেলার মাতেজাং অঞ্চলের থেনখোথাং হাওকিপ ওরফে থাহপি (৪৮), তেসেং গ্রামের সেইখোগিন (৩৫) এবং চেংকোন অঞ্চলের লেঙ্গোহাও (৩৫)। এ ছাড়া কোয়েট গ্রামের ফলহিং নামে ৭২ বছরের এক নারীর দেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি বিদ্রোহী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপপ্রধান ছিলেন থেনখোথাং হাওকিপ। বাকি দুজন সেইখোগিন ও লেঙ্গোহাও কেএনএর সাধারণ সদস্য ছিলেন। মণিপুরের ১৭টি উপজাতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত বিদ্রোহী কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের অন্যতম সদস্য কেএনএ। ২০০৭-০৮ সালে কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করে সংঘর্ষে বিরতি ঘোষণা করে।

কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের বিরোধী হচ্ছে ইউনাইটেড কুকি ন্যাশনাল আর্মি (ইউ-কেএনএ)। ইউ-কেএনএ সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষ বিরতিতে যায়নি। তাদের বক্তব্য, কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন সংগঠন (যেমন কেএনএ) সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে, অনেক সময় তাদের সদস্যদের হত্যাও করছে। যাঁরা তাঁদের হেনস্তা এবং হত্যা করতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন থেনখোথাং হাওকিপ। তিনি ও তাঁর দলের লোকজন ইউ-কেএনএর ৩০ জনের বেশি সদস্যকে গত কয়েক বছরে হত্যা করেছেন। এঁদের মধ্যে ইউ-কেএনএর শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন।

ইউ-কেএনএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ কারণে হাওকিপসহ কেএনএর তিন সদস্যকে সোমবার হত্যা করা হয়েছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর পুলিশ জানায়, একটি হুন্দাই গাড়িতে করে সোমবার বেলা দুইটার দিকে হাওকিপ ও তাঁর সংগঠনের দুই সদস্য যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মংজ্যাং নামের এক গ্রামে তাঁদের ওপরে গুলি চালানো হয় এবং সম্ভবত ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। তিনজনের দেহ গাড়ির ভেতরেই পাওয়া যায়, নারীর দেহ পাওয়া যায় কিছুটা দূরে। তিনি সম্ভবত কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যখন গুলি চলছিল, তখন তিনি ওই অঞ্চল দিয়ে অন্যত্র যাচ্ছিলেন, অতর্কিতে তাঁর গায়ে গুলি লাগে।

মণিপুরের দক্ষিণ, মধ্য ও অন্যান্য অঞ্চলের মতোই কুকি-জো আদিবাসী অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুরে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সহিংসতা চলছে। তবে চূড়াচাঁদপুরে সহিংসতার তীব্রতা বেশি। মণিপুরে গত দুই বছরের সংঘর্ষে ২৫০ জনের বেশি মানুষ সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

পুলিশ বিবৃতিতে জানায়, দুই কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে যাতে চূড়াচাঁদপুরের মতো স্পর্শকাতর জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মণ প র র স ঘর ষ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

মণিপুরে গুলিতে কুকি জনগোষ্ঠীর চারজন নিহত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে কুকি জনজাতি অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুর জেলায় গতকাল সোমবার চারজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একটি গাড়িতে তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি মৃতদেহে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া একজন নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

মণিপুর পুলিশ আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্ত শুরুর পাশাপাশি আততায়ীদের খুঁজে বের করতে দক্ষিণ মণিপুরের ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এই খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে।

মণিপুরে প্রায় দুই বছর ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় এবং কুকি-জো আদিবাসীদের মধ্যে সংঘাত চলছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারের ঘটনা তার ব্যতিক্রম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, চূড়াচাঁদপুর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত যাঁদের মৃতদেহ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন জেলার মাতেজাং অঞ্চলের থেনখোথাং হাওকিপ ওরফে থাহপি (৪৮), তেসেং গ্রামের সেইখোগিন (৩৫) এবং চেংকোন অঞ্চলের লেঙ্গোহাও (৩৫)। এ ছাড়া কোয়েট গ্রামের ফলহিং নামে ৭২ বছরের এক নারীর দেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি বিদ্রোহী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপপ্রধান ছিলেন থেনখোথাং হাওকিপ। বাকি দুজন সেইখোগিন ও লেঙ্গোহাও কেএনএর সাধারণ সদস্য ছিলেন। মণিপুরের ১৭টি উপজাতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত বিদ্রোহী কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের অন্যতম সদস্য কেএনএ। ২০০৭-০৮ সালে কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করে সংঘর্ষে বিরতি ঘোষণা করে।

কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের বিরোধী হচ্ছে ইউনাইটেড কুকি ন্যাশনাল আর্মি (ইউ-কেএনএ)। ইউ-কেএনএ সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষ বিরতিতে যায়নি। তাদের বক্তব্য, কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন সংগঠন (যেমন কেএনএ) সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে, অনেক সময় তাদের সদস্যদের হত্যাও করছে। যাঁরা তাঁদের হেনস্তা এবং হত্যা করতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন থেনখোথাং হাওকিপ। তিনি ও তাঁর দলের লোকজন ইউ-কেএনএর ৩০ জনের বেশি সদস্যকে গত কয়েক বছরে হত্যা করেছেন। এঁদের মধ্যে ইউ-কেএনএর শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন।

ইউ-কেএনএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ কারণে হাওকিপসহ কেএনএর তিন সদস্যকে সোমবার হত্যা করা হয়েছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর পুলিশ জানায়, একটি হুন্দাই গাড়িতে করে সোমবার বেলা দুইটার দিকে হাওকিপ ও তাঁর সংগঠনের দুই সদস্য যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মংজ্যাং নামের এক গ্রামে তাঁদের ওপরে গুলি চালানো হয় এবং সম্ভবত ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। তিনজনের দেহ গাড়ির ভেতরেই পাওয়া যায়, নারীর দেহ পাওয়া যায় কিছুটা দূরে। তিনি সম্ভবত কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যখন গুলি চলছিল, তখন তিনি ওই অঞ্চল দিয়ে অন্যত্র যাচ্ছিলেন, অতর্কিতে তাঁর গায়ে গুলি লাগে।

মণিপুরের দক্ষিণ, মধ্য ও অন্যান্য অঞ্চলের মতোই কুকি-জো আদিবাসী অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুরে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সহিংসতা চলছে। তবে চূড়াচাঁদপুরে সহিংসতার তীব্রতা বেশি। মণিপুরে গত দুই বছরের সংঘর্ষে ২৫০ জনের বেশি মানুষ সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

পুলিশ বিবৃতিতে জানায়, দুই কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে যাতে চূড়াচাঁদপুরের মতো স্পর্শকাতর জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ