এ অর্জন দেশের সাংবাদিকতার মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে
Published: 1st, July 2025 GMT
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর সময় সাহসী সাংবাদিকতা, তরুণ পাঠকদের যুক্তকরণ এবং পরবর্তী সময়ে গৃহীত নানামুখী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড–২০২৫’ অর্জন করায় প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমানকে সংবর্ধনা দিয়েছে নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টাইমস মিডিয়া ভবনে আজ মঙ্গলবার এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ, নোয়াবের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ খান বাদল, যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের পরিচালক শামীম ইসলাম, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, সমকাল সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী এবং সাপ্তাহিক কাউন্টার পয়েন্ট পত্রিকার সম্পাদক জাফর সোবহান।
লিখিত বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, মতিউর রহমান বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় একজন প্রধান ব্যক্তি। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে সমাজ বদলের কাজে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সাল থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন।
এ কে আজাদ আরও বলেন, মতিউর রহমান ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বেসরকারি পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনার ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে মতিউর রহমান শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশীয় সাংবাদিকতার পক্ষেও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রথম আলোর মতো একটি সংবাদপত্র গড়ে তোলা এবং তা সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া একটি বড় কীর্তি। মতিউর রহমান সাহস, সততা ও পেশাদারত্বের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা দেশের সংবাদপত্রশিল্পের জন্য গর্বের বিষয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ অর্জন বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মর্যাদা বাড়িয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের সব পত্রিকাই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রেখেছে। আমরা অনেক কঠিন সময় পার করেছি, সেই সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। বর্তমানে গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে। পাঠকের অভ্যাস বদলেছে, আমাদেরও সেই অনুযায়ী বদলাতে হবে।’
‘মতিউর রহমান সাহস, সততা ও পেশাদারত্বের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা দেশের সংবাদপত্রশিল্পের জন্য গর্বের বিষয়।’এ কে আজাদ, সভাপতি, নোয়াবপ্রথম আলোর যাত্রাটা শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জিং ছিল উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘পাঠকের জন্য ভালো কিছু করতে পারলে, ভালো মানের সাংবাদিকতা উপহার দিতে পারলে ছাপা পত্রিকাও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। অনেকেই বলেন, ছাপা পত্রিকার দিন শেষ হয়ে আসছে, তবে আমি মনে করি, মানসম্পন্ন কনটেন্টই সব মাধ্যমেই টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।’
শহীদুল্লাহ খান বাদল বলেন, ‘মতিউর রহমান আসলে আমাদের মাথার ওপর বটগাছের মতো। তিনি নিজের পথচলাতেই আমাদের জন্য দিশা তৈরি করেন। আমরা ভাগ্যবান যে তাঁর মতো একজন আমাদের ছায়া হয়ে আছেন।’
শামীম ইসলাম বলেন, মতিউর রহমান যা করে দেখিয়েছেন, তা এককথায় অসাধারণ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সাহস, দূরদৃষ্টি ও দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি শুধু প্রথম আলো নয়, পুরো সাংবাদিকতাকেই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
আরও বক্তব্য দেন শামসুল হক জাহিদ, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও শাহেদ মুহাম্মদ আলী। এ সময় ‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ অর্জন করায় নোয়াবের পক্ষ থেকে মতিউর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ‘ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’ প্রদত্ত এই পুরস্কার বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্য থেকে উদ্ভাবনী উদ্যোগ, পাঠক সম্পৃক্ততা ও সমাজসচেতন সাংবাদিকতার জন্য প্রদান করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ব দ কত র কর ছ ন র জন য আম দ র অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫