ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছেন শরীয়তপুরের ইমান
Published: 2nd, July 2025 GMT
প্রতিদিন ক্রেতাদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের খালি বোতল দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েন মুদিদোকানি ইমান ঢালী। কীভাবে এগুলোর পুনর্ব্যবহার করা যায়, তাঁর খোঁজ করেন ইউটিউবে। সেখানে ভিডিও দেখে জানতে পারেন, এসব খালি বোতলে বালু ভরে তা দেয়াল নির্মাণকাজে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এরপর স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে পরামর্শ করে বাড়ি নির্মাণে এসব বোতল ব্যবহার করছেন তিনি।
প্রায় এক বছর গ্রামের হাটবাজার ঘুরে ২৫০ ও ৫০০ মিলির ৪০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করেন ইমান ঢালী। এ সময় পরিবারের সদস্যরা মিলে এসব বোতলে বালু ভরেছেন। পরে বোতলগুলোর মুখ বন্ধ করে একটির ওপর আরেকটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বালু-সিমেন্টের প্রলেপে। বাড়িটির নির্মাণকাজ চলছে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী মাইঝারা গ্রামে। চরাঞ্চলটিতে বসবাস করেন ইমান ঢালী। সেখানে স্থানীয় বাজারে তাঁর একটি মুদিদোকান আছে।
মঙ্গলবার সকালে ইমান ঢালী বলেন, তাঁর দোকানসহ বাজারের বিভিন্ন দোকানে ব্যবহৃত খালি প্লাস্টিকের বোতলগুলো এলাকার ডোবা-নালা নোংরা করছিল দেখে মনে কষ্ট হতো। তখন তিনি বোতলগুলো জড়ো করে মজুত করতে শুরু করেন। পরে ইউটিউবে দেখতে পান, বোতল দিয়েও ঘরের দেয়াল নির্মাণ করা যায়। তখন আরও খালি বোতল সংগ্রহ করতে থাকেন। এখন বোতল দিয়ে ঘর নির্মাণই শুরু করে দিয়েছেন। ইটের তৈরি পিলারের পাশে বোতল সাজিয়ে এতে সিমেন্টের আস্তর দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ছাদসহ চার কক্ষের ঘরটির নির্মাণে ৮-৯ লাখ টাকা লাগতে পারে।
ইমান ঢালীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। বসবাসের টিনের ঘরটি ভেঙে সম্প্রতি সেখানে একতলা একটি পাকা দালান নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। চার কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটির সব কটি দেয়াল নির্মিত হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে। পাশের এলাকার ইব্রাহীম সরদার আরও তিনজন শ্রমিক নিয়ে নির্মাণকাজটি করছেন।
ইটের তৈরি পিলারের পাশে বোতল সাজিয়ে এতে সিমেন্টের আস্তর দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’ সক্রিয় করবে ডাকসু নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির হৃৎপিণ্ড’ উল্লেখ করে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, সেই হৃৎপিণ্ডকে সক্রিয় করার যে ঘটনাটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হলো ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন স্থির করবে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের কালপর্ব তরুণেরা অতিক্রম করতে পারবেন কি না। রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের কাজটি তরুণেরা করতে পারবেন কি না, তা–ও নির্ধারিত হবে আগামী ডাকসু নির্বাচনে।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার। ‘শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতি: আসন্ন ডাকসু নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিন্তাচর্চার সংগঠন ‘ভাববৈঠকী’।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন ফরহাদ মজহার। এক. সব ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চার একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবারের ডাকসু নির্বাচনের আগেই কিছু বিষয় সবাই মিলে নির্ধারণ করা। দুই. যদি কোনো শিক্ষক বছরে ন্যূনতম একটি গবেষণাপত্র ‘পিয়ার রিভিউড জার্নালে’ (যে জার্নালের প্রতিটি গবেষণাপত্র বিশেষজ্ঞরা মূল্যায়ন করেন) প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে সেই শিক্ষকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। তিন. মৌলিক বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া।
‘আপনাদের হুঁশ নেই’
তরুণদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ৮ আগস্ট (২০২৪ সাল) একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে, সংবিধানের নামে ছাত্র-তরুণ-সৈনিকদের পরাস্ত করা হয়েছে। তরুণদের যে শক্তি, ক্ষমতা ও গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের স্পৃহা ছিল, সেটাকে নস্যাৎ করা হয়েছে আইন ও সংবিধানের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান কায়েম করে। এখন তরুণদের ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রক্রিয়া চলছে। যদি জাতীয় নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের পরে এই সংবিধানের অধীনে সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকার তরুণদের বিচার করবে। তিনি বলেন, ‘যে জুলাই ঘোষণাপত্র শুনলাম সেখানে পরিষ্কার বলা আছে আপনাদের (তরুণদের) আইনি সাহায্য দেওয়া হবে, আর কিছু দেওয়া হবে না। অথচ এগুলো নিয়ে আপনাদের হুঁশ নেই।’
‘শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন নেই’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০ জন শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, এখন ৭ জন শিক্ষক দিয়ে তাঁর বিভাগ (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) চালানো হচ্ছে। এখানে শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ২০০ জন। এমন অবস্থায় কোনো শিক্ষকের পক্ষে গবেষণার কাজ করা সম্ভব নয়।
অভ্যুত্থানের পরও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রসঙ্গে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি দলের শিক্ষকেরা সহ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে গিয়ে বলেছেন যে তাঁদের দল থেকে নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে তো আমরা সেই আগের জায়গায় ফেরত গিয়েছি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগে আওয়ামী লীগ না করলে সব দরজা বন্ধ ছিল। অন্য কিছুর মূল্য দেওয়া হয়নি, একমাত্র যোগ্যতা ছিল রাজনৈতিক পরিচয়। ৫ আগস্টের পরে শুনলাম, যাঁদের বিভিন্ন পদে বসানো হবে, তাঁদেরও মূল যোগ্যতা রাজনৈতিক পরিচয়। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
ভাববৈঠকীর প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রোমেল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান, খোরশেদ আলম ও যোবায়ের আল মাহমুদ।
ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা দাবি
আলোচনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে ছাত্ররাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে আসে। তাঁরা বলেছেন, পুরোনো সন্ত্রাস-দখলদারির রাজনীতি ফিরতে দেওয়া যাবে না। ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের জন্য বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক শিক্ষার্থীকে পুনর্ভর্তির (লেখাপড়ায় বিরতির কারণে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ) সমালোচনা করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।
ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
গেস্টরুম-গণরুমকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে অনেকে পুরো ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল হক।
ডাকসু নির্বাচন ও সংগঠনভিত্তিক রাজনীতিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল এহসান বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। তাহলে ছাত্ররাজনীতিও ঠিক হয়ে যাবে।
আয়োজকেরা জানান, এই আলোচনায় বক্তব্য দিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক একজন নেত্রীকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিনিও আসেননি।