জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিষয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের কাছে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লিখতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ নিয়ে তখন বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। সে জন্য ইতিবাচক প্রতিবেদন লিখলে সুবিধা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ বুধবার রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথাগুলো বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থনীতিবিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো.

মুসফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ইআরএফের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম।

এসএমই ফাউন্ডেশন ও ইআরএফের যৌথ উদ্যোগে এই প্রথম আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৮২টি প্রতিবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ১০টি শ্রেণিতে মোট ২১টি প্রতিবেদন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক প্রতিবেদন করলে একটু সুবিধা হয়; নেতিবাচক প্রতিবেদন করলে একটু ঝামেলা হয়। যেমন এনবিআর–বিষয়ক প্রতিবেদনে (নেতিবাচক) আমাদের অনেক ঝামেলা হয়েছে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইএমএফের ও বিশ্বব্যাংকের সভার আগে তাঁকে (এনবিআরের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে) চিঠি লিখতে হয়েছে। প্রথমে সচিব (অর্থসচিব) চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, সচিবের চিঠি তিনি আমলে নেবেন না। চূড়ান্ত নীতিনির্ধারক হিসেবে অর্থ উপদেষ্টাকেই চিঠি লিখতে হবে। এ নিয়ে তখন ঝামেলা তৈরি হয়েছিল।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যাহোক, ঝামেলা মিটেছে, এখন তো সব টাকা আসছে। এ টাকা আমরা মোটামুটিভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আমরা চেষ্টা করছি, যতটুক পারি অর্থের সৎ ব্যবহার করতে। অনেকে বলেন বাজেটের আকার ছোট। কিন্তু আগের বাজেটগুলোয় বরাদ্দ ফুলিয়ে দেখানো হতো।’

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়েও কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা স্বল্প সময়ের জন্য আছি। এই সময় আরও কমে গেছে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যেভাবেই হোক ডিসেম্বরের মধ্যে মৌলিক কিছু সংস্কার আমরা করবই। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গেছে; যদিও ব্যাংক খাতের সংস্কারে কিছু সময় লাগতে পারে। আশা করছি, পরবর্তী সরকার এসব ভালো কাজ অব্যাহত রাখবে। আর যদি তারা ভালো কাজ অনুসরণ না করে, বেআইনি কিছু করে, তাহলে মানুষই তাদের টেনে নামাবে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমি দেখি যে অনেকে বলেন, সরকারের কার্যক্রমে ইতিবাচক কিছুই দেখছি না। তাঁদের বেশির ভাগই আমার ছাত্র। দেশে এত কিছু হচ্ছে, কিন্তু তাঁরা চিহ্নই দেখতে পাচ্ছেন না। বিশেষ কিছু মানুষকে সুবিধা দেওয়া হলে তাঁরা ঠিকই চিহ্ন দেখতে পেতেন। এগুলো আমাদের প্রতিনিয়ত শুনতে হয়।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এসএমইর অবদান ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। সেখানে আমাদের জিডিপিতে এসএমইর অবদান ২৫ শতাংশ। অন্তত ৪০ শতাংশ হওয়া উচিত ছিল। দুঃখজনকভাবে তা অর্জন করা না গেলেও আগামী ৫ বছরের মধ্যে জিডিপিতে এসএমইর অবদান অন্তত ৩৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের।’

পুরস্কার পেলেন যাঁরা

এ বছর এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পেয়েছেন ২১ জন সাংবাদিক। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন এসএমই খাতে বিনিয়োগ, অর্থায়নের সংকট ও সমাধানের উপায় শ্রেণিতে দৈনিক আমাদের সময়ের জিয়াদুল ইসলাম ও যমুনা টেলিভিশনের রিমন রহমান। এসএমই পণ্যের রপ্তানির সম্ভাবনা, সমস্যা ও উত্তরণে করণীয় শ্রেণিতে ডেইলি সানের রফিকুল ইসলাম ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রাকিব হোসেন। এসএমই খাতের উন্নয়নে অপ্রতুল নীতি সহায়তা: বাজেটে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ শ্রেণিতে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ফারহান ফেরদৌস ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের দিনার সুলতানা। এসএমই পণ্য বাজারজাতকরণের চ্যালেঞ্জ ও তা দূর করার উপায় শ্রেণিতে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রেজাউল করিম ও বাণিজ্য প্রতিদিনের গিয়াস উদ্দিন।

আরও পুরস্কার পেয়েছেন এসএমই খাতের উন্নয়নে গবেষণা ও সঠিক পরিসংখ্যানের গুরুত্ব শ্রেণিতে বাংলাভিশনের মো. গোলাম মইনুল হাসান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের রহিম শেখ। এসএমই খাতের ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়নের তাৎপর্য: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শ্রেণিতে জাগোনিউজের নাজমুল হোসেন ও দৈনিক সমকালের জসিস উদ্দিন। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন: উন্নত ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তুলনা ও করণীয় শ্রেণিতে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের জেসমিন মলি। বেকারত্ব দূরীকরণ, নতুন কর্মসংস্থানে এসএমই খাতের গুরুত্ব শ্রেণিতে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের এফএইচএম হুমায়ুন কবির ও দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের হাসান আরিফ। নারী উন্নয়নে এসএমই খাতের গুরুত্ব শ্রেণিতে ঢাকা পোস্টের শফিকুল ইসলাম ও আজকের দৈনিকের মরিয়ম সেঁজুতি। এসএমই খাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার: ৪র্থ শিল্পবিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আইওটি শ্রেণিতে ডেইলি সানের মৌসুমী ইসলাম ও আজকের পত্রিকার শাহ আলম খান।
জুরি সদস্য হিসেবে ছিলেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) মো. তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ এসএমই খ ত র ল ইসল ম ও ইআরএফ র প রস ক র অন ষ ঠ ন আম দ র ব শ বব রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

সমকালের জসিম উদ্দিন বাদলসহ ২১ সাংবাদিক পেলেন এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

এসএমই খাতের ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়নের তাৎপর্য: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শ্রেণিতে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন–ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছেন সমকাল সাংবাদিক জসিম উদ্দিন বাদল। 

বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জসিম উদ্দিন বাদলের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননার চেক তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

এ বছর এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পেয়েছেন ২১ জন সাংবাদিক। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- এসএমই খাতে বিনিয়োগ, অর্থায়নের সংকট ও সমাধানের উপায় শ্রেণিতে দৈনিক আমাদের সময়ের জিয়াদুল ইসলাম ও যমুনা টেলিভিশনের রিমন রহমান। এসএমই পণ্যের রপ্তানির সম্ভাবনা, সমস্যা ও উত্তরণে করণীয় শ্রেণিতে ডেইলি সানের রফিকুল ইসলাম ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের রাকিব হোসেন। এসএমই খাতের উন্নয়নে অপ্রতুল নীতি সহায়তা: বাজেটে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ শ্রেণিতে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ফারহান ফেরদৌস ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের দিনার সুলতানা। এসএমই পণ্য বাজারজাতকরণের চ্যালেঞ্জ ও তা দূর করার উপায় শ্রেণিতে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রেজাউল করিম ও বাণিজ্য প্রতিদিনের গিয়াস উদ্দিন।

আরও পুরস্কার পেয়েছেন- এসএমই খাতের উন্নয়নে গবেষণা ও সঠিক পরিসংখ্যানের গুরুত্ব শ্রেণিতে বাংলাভিশনের মো. গোলাম মইনুল হাসান, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের রহিম শেখ। এসএমই খাতের ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়নের তাৎপর্য: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শ্রেণিতে জাগোনিউজের নাজমুল হোসেন ও দৈনিক সমকালের জসিম উদ্দিন বাদল। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন: উন্নত ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তুলনা ও করণীয় শ্রেণিতে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের জেসমিন মলি। বেকারত্ব দূরীকরণ, নতুন কর্মসংস্থানে এসএমই খাতের গুরুত্ব শ্রেণিতে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের এফএইচএম হুমায়ুন কবির ও দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের হাসান আরিফ। নারী উন্নয়নে এসএমই খাতের গুরুত্ব শ্রেণিতে ঢাকা পোস্টের শফিকুল ইসলাম ও আজকের দৈনিকের মরিয়ম সেঁজুতি। এসএমই খাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার: ৪র্থ শিল্প বিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আইওটি শ্রেণিতে ডেইলি সানের মৌসুমী ইসলাম ও আজকের পত্রিকার শাহ আলম খান।

জুরি সদস্য হিসেবে ছিলেন ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) মো. তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সরকারি মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম।

এসএমই ফাউন্ডেশন ও ইআরএফের যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৮২টি প্রতিবেদন জমা পড়ে। এরমধ্যে ১০টি শ্রেণিতে মোট ২১টি প্রতিবেদন পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএমই অ্যাওয়ার্ড পেলেন ২১ সাংবাদিক
  • সমকালের জসিম উদ্দিন বাদলসহ ২১ সাংবাদিক পেলেন এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড
  • এসএমই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার
  • এনবিআর নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বড় ঝামেলা হয়েছিল: অর্থ উপদেষ্টা