লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে: চরমোনাই পীর
Published: 2nd, July 2025 GMT
লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যে উদ্দীপনা ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল, এখন তাতে ভাটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। তারা একমত না হলে সেই প্রস্তাব আর অগ্রসর হচ্ছে না। পিআরের মতো একটি বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও কেবল একটা দলের জন্য বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অথচ স্বৈরতন্ত্র রোধে পিআর একটি পরীক্ষিত ও উত্তম পদ্ধতি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে তার প্রতিজ্ঞা ও দায় পূরণে অবিচল ও কঠোর হতে হবে। স্বৈরতন্ত্রের রাস্তা খোলা রেখে কারও চাপে যদি এই সরকার নির্বাচন আয়োজন করে, তাহলে ইতিহাসে তারা চির অপরাধী হয়ে থাকবে। কারণ, জুলাই রাষ্ট্র সংস্কারের যে মহাসুযোগ তৈরি করেছে, তা জাতির জীবনে পুনরাবৃত্তি হবে, এমন আশা করা যায় না।’
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুষ্ঠু ও সুন্দর হতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী হতে হবে। এরপর নির্বাচন নিয়ে কথা বলা যাবে। রাষ্ট্রকে ভঙ্গুর করে কোনো দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য যেনতেন নির্বাচন আয়োজন করা হলে তার পরিণতি ভালো হবে না।’
জুলাইয়ে তরুণদের আত্মত্যাগ প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ ছিল মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন বিগত পনেরো বছর ধরে চলা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না, বরং জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসা অনিয়মকে দূর করা, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এবং দেশ থেকে চিরতরে স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করা। যে তরুণেরা অকাতরে জীবন দিয়েছে, তাদের অধিকাংশই প্রচলিত রাজনীতি করত না। কারণ, তারা প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অপছন্দ করত। তাদের আত্মত্যাগ প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও একটি বিক্ষোভ ছিল।’
নির্বাচন নির্বাচন করে সংস্কারের দাবি আড়াল করা হয়েছে মন্তব্য করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির এই ক্ষণে দাঁড়িয়ে বেদনা ও দায় অনুভব করছি। জুলাই ঘোষণা এখনো দেওয়া যায় নাই, রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক জায়গায় একমত হওয়া যায় নাই, বিচার নিশ্চিত করা যায় নাই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা প্রকট হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি এখনো চলমান। চাঁদার দাবিতে রাতভর নির্যাতন করা, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো বর্বরতা এখনো বিদ্যমান। অথচ নির্বাচন নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচারের দাবিকে আড়াল করে দেওয়া হয়েছে। যে চাওয়া নিয়ে আমাদের তরুণেরা গত জুলাইয়ে প্রাণ দিয়েছে, এক বছর পরে এসে মনে হচ্ছে তাদের চাওয়া হতে আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক স স ক ত স ব রতন ত র প রস ত ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা গাজার জন্য একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন। রবিবার হোয়াইট হাউজে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নতুন নেতা এই ঘোষণা দেন।
বিবিসি জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনায় গাজায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এর আওতায় হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং দুই ডজনেরও বেশি জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করবে, যাদের মৃত বলে মনে করা হচ্ছে এবং ইসরায়েলে শত শত আটক গাজার নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হবে।
আরো পড়ুন:
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়াল
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল ইউরোপের আরেক দেশ
যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি ফিলিস্তিনি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া ২০-দফা শান্তি প্রস্তাব হামাস কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং একটি চূড়ান্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দরজা খোলা থাকবে।
হোয়াইট হাউজে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প নতুন এই পদক্ষেপকে ‘শান্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন’ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে তিনি বলেছেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনায় সম্মত না হয় তাহলে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
এরপর নেতানিয়াহু বলেন, যদি হামাস এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে অথবা গ্রহণ করে পরে পিছু হটে তাহলে ইসরায়েল একাই কাজটা শেষ করে দেবে।
ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক এবং দৃঢ়’ বলে অভিহিত করেছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, তারা ট্রাম্পের নেতৃত্ব এবং গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
দেশগুলো জানিয়েছে, তারা চুক্তিটি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, যা তাদের মতে ‘একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে পরিচালিত করবে, যার অধীনে গাজা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পশ্চিম তীরের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে একীভূত হবে’।
যে হামাস যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বা তা অনুসরণ না করে তবে ইসরায়েল "কাজ শেষ করবে"।
ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মার্কিন রাষ্ট্রপতির প্রচেষ্টাকে "আন্তরিক এবং দৃঢ়" বলে অভিহিত করেছে।
তাদের ওয়াফা সংবাদ সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করতে, গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং জিম্মি ও বন্দীদের মুক্তি দিতে "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আঞ্চলিক রাষ্ট্র এবং অংশীদারদের সাথে কাজ করার জন্য তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণ করছে"।
এক যৌথ বিবৃতিতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন যে তারা ট্রাম্পের "নেতৃত্ব এবং গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার আন্তরিক প্রচেষ্টা"কে স্বাগত জানিয়েছেন।
তারা বলেছে যে তারা চুক্তিটি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ করতে প্রস্তুত, যা তাদের মতে "একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে পরিচালিত করবে, যার অধীনে গাজা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পশ্চিম তীরের সাথে সম্পূর্ণরূপে একীভূত হবে।"
ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে, হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং তাদের সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করা হবে।
পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই প্রস্তাবে সম্মত হলে ‘পূর্ণ সাহায্য অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পাঠানো হবে’।
যুক্তরাষ্ট্র গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার জন্য তাদের পরিকল্পনার রূপরেখাও প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, গাজার শাসন ব্যবস্থা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যান্য নেতারা পরিচালনা কমিটিতে থাকবেন। টনি ব্লেয়ার এই পরিকল্পনাকে ‘সাহসী এবং বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা সকল পক্ষকে একত্রিত হয়ে মার্কিন প্রশাসনের সাথে কাজ করার আহ্বান জানাই যাতে তারা এই চুক্তি চূড়ান্ত করে এবং এটি বাস্তবে রূপ দেয়।
তিনি আরো বলেন, হামাসের এখন এই পরিকল্পনায় সম্মত হওয়া উচিত এবং অস্ত্র ছেড়ে ও অবশিষ্ট সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে দুর্দশার অবসান ঘটানো উচিত।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রস্তাবের প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, সব পক্ষকে শান্তির জন্য একটি প্রকৃত সুযোগ দেওয়ার জন্য এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রস্তাবটির প্রশংসা করে বলেছেন, যুদ্ধের অবসান এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টায় ফ্রান্স অবদান রাখতে প্রস্তুত।
মার্কিন পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে যে, হামাসের ‘প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে বা কোনোভাবেই’ শাসনব্যবস্থায় কোনো ভূমিকা থাকবে না।
এতে আরো বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল করবে না বা তাদের সাথে সংযুক্ত করবে না এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের বাহিনী পর্যায়ক্রমে এই অঞ্চল থেকে সরে যাবে।
এই পরিকল্পনাটি একটি চূড়ান্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দরজাও উন্মুক্ত রেখেছে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি ফিলিস্তিনি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কাতার এবং মিশরের কর্মকর্তারা গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনা দোহার হামাস কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ