বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করে এবং এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আজ বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

আজকের বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, কাঠামো এবং এই সরকার কত দিন থাকবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আলোচনায় বিভিন্ন রকম মতামত এসেছে। এ বিষয়ে দুটি সুপারিশ ছিল, সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে ছিল ৯০ দিনের, আর নির্বাচন কমিশন সংস্কারবিষয়ক কমিশন সুপারিশ করেছিল ১২০ দিনের।

সুপারিশকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই দুই সময় এবং এই সরকারের পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও আজ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আলোচনায় এ বিষয়েও উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আশু এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আশু ব্যবস্থা হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষায়িত কমিটি গঠন। যদি কমিটি গঠন হয়ে থাকে, তাহলে পরিবর্তন সাধন করে সেই কমিটি দ্বারা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা। বর্তমান যে কমিটি করা, সেটা যাতে পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটে। তাঁরা এ বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন।

আর দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে যে ঐকমত্য হয়েছে, তা হলো প্রতি আদমশুমারি বা অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯–এর দফা ১–এর (গ) এর শেষে উল্লেখিত ‘এবং’ শব্দটির পর ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিধান’ যুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১, যা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে, তার ৮(৩) সঙ্গে যুক্ত করে ওই কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সংবিধানে কিছু বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছি। তার পাশাপাশি সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আইনের মধ্য দিয়ে কমিটির পরিধি ও কার্যপরিধি গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন যেন থাকে, তা বলেছি। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধানের জন্য এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।’

খুব দ্রুত এসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জুলাই সনদ তৈরি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আলোচনার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঐকমত য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ: আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আলোচনার দিনক্ষণ আজ মঙ্গলবার ঠিক করা হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করা হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।

বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দিন আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্য হয়নি। আপাতত আলোচনা মুলতবি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা কমিশনকে ইতিমধ্যে বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

গতকাল সোমবার কমিশন সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার কমিশনে নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। সেখানে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হতে পারে। আগামী ৪ বা ৫ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা করার পরিকল্পনা আছে। কমিশনের লক্ষ্য হলো আর এক দিন আলোচনা করে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করা। আগামী ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যেই কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চায়।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে, ব্যর্থতা সবার: আলী রীয়াজ১৫ জুলাই ২০২৫

বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি ও পরবর্তী সময়ে এর ভিত্তিতে গণভোট, গণপরিষদ গঠন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়াসহ একাধিক বিকল্প পদ্ধতি আলোচনায় আছে। এগুলো নানাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে একাধিক সুপারিশ দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বিশেষজ্ঞরা কমিশনকে ইতিমধ্যে বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে একাধিক সুপারিশ দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ কার্যকর হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কার অধীনে২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি আগামী সংসদের মাধ্যমে সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে দলটি।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।

জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ জারি এবং গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদ। দলটি মনে করে, গণপরিষদ একই সঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।

জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে ও পরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে
  • ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
  • ১১ দিনের নতুন কর্মসূচি ইসলামী আন্দোলনের
  • কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখলেন লাদাখের নেতারা
  • গাজায় নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু
  • জুলাই সনদ: আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন