তিন কারণে হঠাৎ বরখাস্ত হলেন চট্টগ্রামের কাস্টম কমিশনার
Published: 3rd, July 2025 GMT
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম স্থবির করে দেওয়া এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে কাস্টম কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো.
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি হওয়া পণ্য শুল্কায়ন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। প্রতি কর্ম দিবসে গড়ে ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। গত শনি ও রোববার টানা শাটডাউন কর্মসূচির কারণে এই রাজস্ব আহরণ করতে পারিনি এনবিআর। আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সোমবার কাস্টম হাউজে যোগদান করলেও সেদিন ছিল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ কর্মদিবস। তাই দুই দিনের ক্ষতি আর পোষাতে পারেনি কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে কাস্টম হাউজ। আগের অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ দশমিক ৭ কোটি টাকা। এই হিসেবে এক অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৩ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে যা ৯ দশমিক ৭১। তবে টার্গেটের তুলনায় আবার কম ছিল এই রাজস্ব। এবারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, গত ২১ ও ২৮ জুন সরকার ঘোষিত বিশেষ নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কমিশনার মো. জাকির হোসেন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে ২৮ জুনের সাপ্তাহিক ছুটি পূর্বঘোষিতভাবে বাতিল করা হলেও তিনি দায়িত্ব পালন না করে কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখেন। এর ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে এবং সরকারের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে এনবিআর জানিয়েছে। এ ঘটনাকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা) বিধিমালার ৩৯ (১) ধারা অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া পণ্য শুল্কায়ন করে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ। তাদের ছাড়পত্র ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোন পণ্য খালাস করা যায় না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার পণ্যভর্তি কন্টেইনার খালাস করে ব্যবসায়ীরা। শাটডাউন কর্মসূচীর কারণে এই কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ ছিল বন্দরে। এজন্য বন্দরে বেড়ে যায় পণ্যভর্তি কনটেইনারে সংখ্যা। ১৫ হাজার রপ্তানি কনটেইনারেরও জট তৈরি হয় ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।