দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। মাঝে ২০ ফুট প্রশস্ত একটি খাল। তা পাড়ি দিতে কৃষকদের ঘুরতে হয় অন্তত ৫ কিলোমিটার পথ। ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের জনবহুল গ্রাম দৌলতপুর। গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল।
ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের বন্যা কিংবা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয় এই খাল দিয়ে। বর্ষা মৌসুমে খাল থাকে পানিতে টইটম্বুর। দুই পাশেই রয়েছে ফসলি জমি। প্রতিদিনই কৃষককে লাঙল নিড়ানিসহ কৃষিকাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে খালের এ পার থেকে ওপার যেতে হয়। খালটির শিলালগাড়ী থেকে পাড়োলাপাড়া বড় খাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে কোনো সেতু না থাকায় তাদের ভোগান্তি নিত্যদিনের।
সেতু না থাকায় ওই খালের দুই পাশের মাঠে কৃষিকাজ করার জন্য কৃষকরা ভারী যন্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম পারাপার করতে পারেন না। ফলে ২০ ফুটের খালের জন্য তাদের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে জমিতে যেতে হয়। এতে ওই দুই মাঠের কৃষক-শ্রমিক ও বাসিন্দাদের অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে উৎপাদিত ফসল বাড়িতে নিতেও কৃষকদের বাড়তি সময় লেগে যায়। শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও দ্বিগুণ দিতে হয়।
দৌলতপুর গ্রামের খাড়ির দুই পাশে থাকা জমির মালিক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মাত্র ২০ ফুট প্রশস্ত খালে একটি সেতু না থাকার কারণে কৃষিকাজের হাল-কোদাল, গরু পারাপার করতে ৫ কিলোমিটর পথ ঘুরতে হয়। ফলে আমরাসহ এলাকার বাসিন্দারাও ভোগান্তির শিকার হন।’
আলমপুর ইউপির সাবেক সদস্য ও দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু সরদার লেবু বলেন, ‘শিলালগাড়ী- পাড়োলাপাড়া বড় খাড়ির মাঝখানে রামকির্শ্বা পুকুরের পূর্ব পাশে সোতারী নামক স্থানে খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদ সমন্বয় সভায় তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি।
আলমপুর ইউনিয়নের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান হোসনে আরা বলেন, জনগণের সুবিধার্থে আগে ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম তালুকদার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে রামকির্শ্বা পুকুরের পূর্ব পাশে সোতারী নামক স্থানে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এখন নতুন করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, প্রস্তাবনা পেলে দেখা হবে ওই স্থানে সেতুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা। থাকলে তা সমন্বয় সভায় অনুমোদন করিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদে স্বাক্ষর শুক্রবার, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন হবেই বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা এই যে ঐকমত্য কমিশনের যে সনদ, এটা সনদেরই অংশ এখন। এটার সঙ্গে এটা জড়িত। এই যে ঘোষণা আমরা করলাম এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এটা এমন না যে কথার কথা বলে ফেলেছি। ওই রকম না। এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং ওই যে বারবার বলেছি, এটা উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।”
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
পাসপোর্ট সূচকে তিন ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ
৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আপনারা যেমন সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন। আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো সবাই মিলে উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া। তাহলেই আমাদের কাজ পরিণত হলো।”
রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনকে একান্তভাবে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য তিনি আজ এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, কঠিন কঠিন বিষয়ে আলোচনা করা এবং সন্তোষজনকভাবে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন মিলে এর সমাপ্তি হয়েছে।”
তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধন্যবাদ জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন এটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর পলিটিক্যাল সিস্টেমের (রাজনৈতিক ব্যবস্থার) ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।”
জুলাই সনদ রচনাকে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থান, এই অভ্যুত্থানের এটাই আমার মনে হয় পরবর্তী অধ্যায় সঠিকভাবে রচিত হলো।… যে সংষ্কারের কথা আমরা মুখে বলে যাচ্ছিলাম, আপনারা সেই সংষ্কার, প্রকৃতপক্ষে যে সংস্কার হবে তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। কাজেই আমরা এই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সারা জাতি বড় রকমের উৎসবের মধ্যে আমরা শরিক হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যে কলম দিয়ে স্বাক্ষর করা হবে সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। মানুষ তাদের ভুলতে পারবে না। এটা এমন একটা ঘটনা যে ঘটনার ভেতরে থেকে এর বিশালত্ব বোঝা যাচ্ছে না। মাসের পর মাস বৈঠক করে হতাশা এসেছে, মনে হয়েছে এটা হয়তো অসমাপ্ত থেকে যাবে। তবে এটা অসমাপ্ত থেকে যায়নি।”
তিনি বলেন, “জুলাই সনদ জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ হয়ে রইল।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যে দলিলগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলো হারিয়ে যাবে না। এগুলো জনসাধারণের মধ্যে সহজ ভাষায় প্রচার করা হবে। যাতে করে সবার মনের মধ্যে থাকে কেন একমত হয়েছি। সরকার হিসেবে জুলাই সনদ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাদের।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যে বিতর্কগুলো হয়েছে সেগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে ও বই করে রাখা হবে। যেন এগুলো সম্পদ হিসেবে থাকে, হারিয়ে না যায়। যাতে করে সবাই জানতে পারে কেমন জাতি গড়ার জন্য এগুলো করা হয়েছে।”
সনদ এবং নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কোনো জিনিস নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “উত্তরণটা কীভাবে হবে এটা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সেটার উত্তরও জুলাই সনদে দেওয়া আছে। এই উত্তর নিয়ে যেন সন্তোষভাবে উত্তরণটা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেভাবে রূপান্তরটি হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের পরিপূর্ণ প্রচেষ্টা হবে আপনারা যত কষ্ট করে এগুলো রচনা করছেন… সেটা যেন আমরা বাস্তবে রূপান্তর করতে পারি। নির্বাচনের মাধ্যমে এবং আমাদের দৈনন্দিন রাজনৈতিক মাধ্যমে যেন আমরা সেটাকে রূপান্তর করতে পারি। এই হলো আমাদের আশা। আগামী শুক্রবারে আমরা সেই আশাকে সারা জাতির সামনে নিয়ে আসবে।”
১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা উৎসবমুখরভাবে সেখানে যাব এবং এই দলিলে সই করব এবং উৎসব করব। সবাই, সারা জাতি এটায় শরিক হবে। আপনারা তাদের সামনের সারির মানুষ যারা প্রকৃত সই করছেন। সারা দেশের মানুষ চিন্তার মধ্যে, তাদের ভাবনার মধ্যে আপনাদের সঙ্গে সই করছে।…জাতির জন্য এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
ঢাকা/এসবি