আগামী ৬ মাস রপ্তানিতে প্রণোদনা আগের হারে
Published: 13th, July 2025 GMT
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে আগে দুই ধাপে রপ্তানি প্রণোদনার হার কমানোর পর এবার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে পুরো অর্থবছরের জন্য না করে আগামী ছয় মাসের জন্য নগদ সহায়তার হার ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থবছরের বাকি সময়ে কী হারে প্রণোদনা দেওয়া হবে পরে জানানো হবে। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হওয়ার কথা রয়েছে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই ধাপে প্রণোদনার হার কমানো হয়। এবারও কমানোর কথা ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক, ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি বন্ধ এবং গত বছর আকস্মিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতার কারণে রপ্তানিমুখী শিল্প চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় নগদ সহায়তা অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা হবে দেড় শতাংশ। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতে অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা থাকবে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। নিট, ওভেন, সোয়েটারসহ তৈরি পোশাকের সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ বহাল থাকছে। বস্ত্র খাতে নতুন পণ্য বা নতুন বাজার সম্প্রসারণ সুবিধা ২ শতাংশ এবং তৈরি পোশাকের বিশেষ নগদ সহায়তা শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ এবং পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্যে ৫ এবং পাটের সুতায় নগদ সহায়তা ৩ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে। চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানির প্রণোদনা ১০ এবং ফিনিশড ও ক্রাস্ট লেদারে ৬ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। ওষুধের কাঁচামালে ৫ এবং হালাল মাংসে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা মিলবে। হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে বরফ আচ্ছাদনের হার অনুযায়ী ৪ শতাংশ থেকে ৮ এবং অন্যান্য মাছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ ও সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ দেওয়া হবে। কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য এবং আলু, হালকা প্রকৌশলে ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। গত অর্থবছরের মতোই ৬ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবে মোটরসাইকেল, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য, রেজার ও রেজার ব্লেড, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক দ্রব্য। এ ছাড়া হাতে তৈরি পণ্য যেমন– হোগলা, খড়, আখ বা নারকেলের ছোবড়া, দেশে উৎপাদিত কাগজ, গার্মেন্টের ঝুট, গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া-কুঁচিয়াতে ৬ শতাংশই থাকছে।
ফার্নিচার, সিনথেটিক ও ফেব্রিক্সের মিশ্রণে তৈরি পাদুকা ও ব্যাগ, পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন ও জুট পার্টিকেল বোর্ড, শস্য ও শাকসবজির বীজ, আগর ও আতরে ৮ শতাংশ নগদ সহায়তা থাকবে। সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যারে ৬ শতাংশ এবং ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের সফটওয়্যার ও আইটিএসে আড়াই শতাংশ। বিশেষায়িত অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ। দেশে উৎপাদিত চা, এমএস স্টিলে ২ শতাংশ। চাল, বাইসাইকেল ও এর পার্টস এবং সিমেন্টে ৩ শতাংশ। কেমিক্যাল পণ্যে ৫ এবং টুপিতে ৭ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কোন খাতে কত প্রণোদনা
নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।
কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’