ভর্তুকি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে রেশমশিল্প
Published: 12th, July 2025 GMT
জনবল, অর্থ বরাদ্দসহ নানা সংকটের মধ্যে কোনোমতে টিকে আছে দেশের রেশমশিল্প। গবেষণার মাধ্যমে রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনে কিছু সফলতা থাকলেও কুমিল্লার ময়নামতি রেশমকেন্দ্র ধুঁকছে। গত দুই অর্থবছরে এ কেন্দ্র থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনামূল্যে ৬৬ হাজার রেশম ডিম সরবরাহ করা হয়েছে। বিনামূল্যে চাষিদের ডিম সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিয়েও রেশম চাষে তাদের আগ্রহী করা যাচ্ছে না। ফলে এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে জনবল ও উৎপাদন খরচে সরকারকে প্রতিবছর দিতে হচ্ছে বিপুল ভর্তুকি।
‘সাড়া জেগেছে রেশম চাষে, দেখে যা ভাই ঘরে এসে’– রেশম নিয়ে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের এমন স্লোগান থাকলেও জিআই পণ্যের খ্যাতি পাওয়া এ শিল্পের মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ভর্তুকি দিয়ে সরকারের একটি প্রকল্পের অধীন চলছে ময়নামতিসহ দেশের ২৩টি রেশম উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়নামতি রেশমশিল্পের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। লালমাই পাহাড়ি অঞ্চলের লাল মাটি ও আবহাওয়া রেশম চাষের উপযোগী হওয়ায় ১৯৬২ সালে ৪৮ বিঘা ভূমিতে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে প্রায় ২৮ বিঘা জমিতে রেশম গাছ (তুঁত পাতা) উৎপাদন করা হয়। অবশিষ্ট পাহাড়ি ভূমিতে অফিস, গবেষণা, ল্যাবরেটরি, আবাসিক ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এক সময় এখানে রেশম গুটি থেকে সুতা তৈরির যন্ত্রপাতি থাকলেও তা আর নেই। সরেজমিন দেখা যায়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অফিস, আবাসিক, ল্যাবরেটরি, প্রশিক্ষণার্থীদের ডরমিটরিসহ অন্যান্য ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা।
বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ রেশম কেন্দ্রে এখন জনবল মাত্র দুইজন। এর মধ্যে একজন ম্যানেজার, অপরজন টেকনিক্যাল সুপারভাইজার। এ ছাড়া একজন সহকারী পরিচালক আছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে। তুঁত গাছের চারা রোপণ, পরিচর্যা, রেশম কীট লালনপালনে দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরিতে রয়েছেন ৮ শ্রমিক।
পাঁচ উন্নত রেশম কীট
বিন্দু আকৃতির ডিম, ডিম থেকে রেশম কীট। বগুড়ার রেশম বীজাগার থেকে সংগ্রহ করা হয় উন্নত জাতের রেশম ডিম। পরে এসব ডিম নারী-পুরুষ জাতের ক্রসের মাধ্যমে প্রজনন প্রক্রিয়ায় উন্নত জাতের রেশম ডিম ও বাচ্চা (রেশম কীট) উৎপাদন করা হয়। ময়নামতিতে এফটিবি, বিএনএমসহ ৫টি উন্নত জাতের রেশম কীট আছে। শুরু থেকে পূর্ণাঙ্গ গুটি তৈরি হতে সময় লাগে ৩ সপ্তাহ। এ কেন্দ্রের টেকনিক্যাল সুপারভাইজার তাহমিনা আক্তার সীমা বলেন, একটি ডিম ফুটালে ৪০০ রেশম কিটের বাচ্চা পাওয়া যায়। এ রকম ১০০ ডিমের সরকারি দাম মাত্র ২০৫ টাকা, যা থেকে ৪০ হাজার রেশম কীট পাওয়া যায়। ১০০ ডিম ও কীটের মাধ্যমে ৪০/৫০ কেজি গুটি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি গুটি ৬-৭শ টাকায় বিক্রি করা যায়।
তিনি বলেন, একটি উন্নতমানের শাড়ি তৈরিতে ২ কেজি গুটিই যথেষ্ট। এখানকার রেশম কীট দেশের বিভিন্ন শিল্প ইউনিটে বিশেষ করে ঢাকা ও রাজশাহীতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয়। এখানে শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতে উন্নত দেশি ও বিদেশি জাতের রেশম উৎপাদন করা হয়।
রেশম গুটি বিক্রি ও বিনামূল্যে ডিম সরবরাহ
ময়নামতি রেশম কেন্দ্রের ম্যানেজার হায়দার আলী বলেন, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ রেশম কেন্দ্রে ৩৫ হাজার এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩১ হাজার রেশম ডিম উৎপাদন করা হয়েছে। এসব রেশম ডিম ঢাকা, বগুড়া, রাঙামাটি, কুমিল্লা, গাজীপুর এলাকায় রেশম চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে ৬৬ হাজার রেশম ডিম সরবরাহ করা হয়েছে। এসব ডিমের বাজারমূল্য ১৩ লাখ টাকার বেশি।
রেশম চাষে সংশ্লিষ্টরা জানান, রেশমশিল্পকে বাঁচাতে ও লাভজনক করতে বিদেশি সুতা ও বস্ত্রের আমদানি শুল্ক বাড়ানোসহ কঠোর নীতিমালা করা জরুরি। রেশম চাষিদের বেশির ভাগ প্রান্তিক ভূমিহীন। তাদের উৎপাদিত সুতা ও গুটি বাজারজাত করায় প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
আয় লাখ টাকা, ব্যয় ১০ লাখ
দীর্ঘ দিন বড় ধরনের ভর্তুকিতে চলছে দেশের বিভিন্ন রেশমকেন্দ্র। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচাতে জনবল, বেতন, উৎপাদন খরচ, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খাতে বছরে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ‘বাংলাদেশ রেশমশিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি মূলত রেশমশিল্পের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে সরকারের সেবামূলক প্রকল্প। ময়নামতি রেশমকেন্দ্র থেকে গত দুই অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। কিন্তু এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া জনবল, দৈনিক শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে বছরে ১০ লক্ষাধিক টাকা।
আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়-ঢাকার উপপরিচালক (ময়নামতির সহকারী পরিচালক) আব্দুল মালেক সমকালকে বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের অধীনে দেশের ২৩ জেলায় রেশমকেন্দ্র আছে। প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ সংকটের মাঝেও রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনে ময়নামতিসহ দেশের অন্যান্য রেশমকেন্দ্রের সফলতা আছে বলা যায়।
তিনি বলেন, দেশে রেশমি সুতার এখনও যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও বিদেশি সুতা ও নকল সুতা বাজার দখল করে আছে। এ কারণে এ শিল্পে সুদিন ফিরতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভর ত ক ড ম সরবর হ র শমশ ল প সরক র র প রকল প ভর ত ক থ কল ও উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেমেছে ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ। তবে শান্তি ফেরেনি। একে তো ফিলিস্তিনিরা নিজ ঠিকানায় ফিরে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছেন না, এরপর আবার চুক্তি অনুযায়ী এখনো গাজায় নির্ধারিত পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে উপত্যকাটিতে খাবারের সংকট কাটছে না।
বুধবার ছিল যুদ্ধবিরতির ষষ্ঠ দিন। আগের পাঁচ দিনে চুক্তি অনুযায়ী বন্দিবিনিময় করেছে হামাস ও ইসরায়েল। তবে হামাস মৃত জিম্মিদের ফেরত পাঠাতে দেরি করছে—এমন অজুহাত তুলে ইসরায়েল জানায়, গতকাল থেকে নির্ধারিত পরিমাণের অর্ধেক অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করতে দেবে তারা। দক্ষিণ গাজার রাফা সীমান্ত ক্রসিংও আপাতত চালু না করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে ক্রসিংটি খুলে দেওয়া হয়।
যদিও যুদ্ধবিরতির পর থেকেই দিনে নির্ধারিত ৬০০ ট্রাকের অনেক কম ত্রাণ গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, এদিন তাদের মাধ্যমে মাত্র ১৩৭ ট্রাক ত্রাণ উপত্যকাটিতে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব ট্রাকে ময়দা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। তবে পানির পরিমাণ ছিল কম। জ্বালানি তো ছিলই না।
যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত যেসব মানুষ গাজা নগরীতে ফিরেছেন, তাঁরা পানি নিয়ে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। নগরীর বাসিন্দা গাদা আল কুর্দ বলেন, প্রায় সব এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনো পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। আর দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা মাহমুদ এমাদ রোস্তম বলেন, কিছু ত্রাণ প্রবেশ করায় খাবারের সরবরাহ বেড়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা এখনো ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে নিজ ভিটেমাটিতে ফিরতে পারছেন না বাসিন্দারা। এসব এলাকায় ফিরতে যাওয়া ৬ জনসহ মোট ৯ ফিলিস্তিনিকে মঙ্গলবার হত্যা করেছেন ইসরায়েলি সেনারা। বুধবারও সুজাইয়া এলাকায় দুই ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই বছরের বেশি সময়ে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৯৩৮।
নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস২০০৭ সালে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে ছয় দিনের সংঘর্ষের পর থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছিল হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সে নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এখন কিছু এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর আবার নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহর এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটে হামাসের সশস্ত্র সদস্যদের উপস্থিতি বেড়েছে।
গাজার এসব এলাকায় এখন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের হামলা না থাকলেও বিগত কয়েক দিনে হামাসের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সবশেষ মঙ্গলবার সকালে হামাস নিরাপত্তা বাহিনীর এবং হিল্লেস পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।
এরই মধ্যে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, পিছমোড়া করে হাত বাঁধা সাতজনকে টেনেহিঁচড়ে গাজা নগরীর একটি চত্বরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের বসিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে হামাসের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, ভিডিওটি গত সোমবার ধারণ করা। আর সাতজনকে হামাসের সদস্যরাই গুলি করে হত্যা করেন।
গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণের ট্রাক। বুধবার খান ইউনিসে