বার্নের সেই অলৌকিক ফাইনাল শেষ হয়নি আজও
Published: 4th, July 2025 GMT
৫ জুলাই, ১৯৫৪। রোমানিয়ার ট্রানসিলভানিয়া।
অভিনেতাদের একটি দল যাত্রাপথে বিরতি নিয়েছে। জন্মভূমি হাঙ্গেরি ছেড়ে আসা মানুষের বসবাস সেখানে। অভিনেতাদের দলটি দেখতে পায়, সবার পরনে কালো পোশাক। তারা গ্রামবাসীর কাছে জানতে চাইল, ‘আপনারা শোক পালন করছেন কেন?’
ভিড়ের ভেতর থেকে এক বৃদ্ধা জবাব দিলেন, ‘আমরা গতকালের ম্যাচটি হেরেছি।’ অভিনেতাদের দলের ভেতর থেকে একজন সেই বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলেন, ‘জীবনে কখনো ফুটবল ম্যাচ দেখেছেন?’ বৃদ্ধা জবাব দিলেন, ‘না, দেখিনি।’
পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে এত শোক কীসের?
ঘটনাটি এ পর্যন্ত বলে হাঙ্গেরির কিংবদন্তি রেডিও ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক গিওর্গি সেপিসি চোখ মুছলেন। তারপর বললেন বাকিটা। কীসের শোক—এমন প্রশ্নের জবাবে সেই বৃদ্ধা সরল মনে বলেছিলেন, ‘এখানে সবাই বলাবলি করছিল, আমরা যদি আর একটি ম্যাচ জিতি, তাহলে হাঙ্গেরির সঙ্গে ট্রানসিলভানিয়া আবার মিলে যাবে; তখন আমরা হাঙ্গেরিতে ফিরে যেতে পারব।’
সেপিসির মুখে এই ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জার্মানির সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘স্টার্ন’–এ।
২.
সেদিন আরেকজনের গল্প বলেছিলেন সেপিসি।
গুলা গ্রোসিচ—কালো জার্সি পরে মাঠে নামার অভ্যাস ছিল তাঁর। সেপিসি ডাকতেন ‘দ্য ব্ল্যাক প্যান্থার’। পরে গোটা হাঙ্গেরি সেই নামে ডেকেছে গোলকিপার গ্রোসিচকে। ৮৪ মিনিটে পশ্চিম জার্মানির হেলমুট রানের বাঁ পায়ের শট ঠেকাতে পারেননি। ছয় মিনিট পর শেষ বাঁশি বাজলে ওই গোলটা হাঙ্গেরির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এরপর বলির পাঁঠা তো কাউকে না কাউকে বানাতে হবে! সে জন্য গ্রোসিচের চেয়ে আদর্শ (!) কে হতে পারেন! গ্রোসিচ নিজেও টের পেয়েছিলেন খড়্গ নেমে আসছে। ২০১৪ সালে মৃত্যুর আগে প্রায় প্রতিদিনই নাকি তিনি আত্মজিজ্ঞাসায় ডুবতেন, ‘বলটি কি ঠেকাতে পারতাম? ঠেকানো উচিত ছিল কি? (গোলটির পর) মাঠে সবচেয়ে নিঃসঙ্গ ব্যক্তিটি ছিলাম আমি। ম্যাচ শেষে বাকি জীবনেও সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। ওই একটি ম্যাচ আমার জীবনকে তছনছ করে দেয়।’
১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির স্ট্রাইকার হ্যানস শ্যাফারকে ঠেকাচ্ছেন হাঙ্গেরি গোলকিপার গ্রোসিচউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত