৫ জুলাই, ১৯৫৪। রোমানিয়ার ট্রানসিলভানিয়া।

অভিনেতাদের একটি দল যাত্রাপথে বিরতি নিয়েছে। জন্মভূমি হাঙ্গেরি ছেড়ে আসা মানুষের বসবাস সেখানে। অভিনেতাদের দলটি দেখতে পায়, সবার পরনে কালো পোশাক। তারা গ্রামবাসীর কাছে জানতে চাইল, ‘আপনারা শোক পালন করছেন কেন?’

ভিড়ের ভেতর থেকে এক বৃদ্ধা জবাব দিলেন, ‘আমরা গতকালের ম্যাচটি হেরেছি।’ অভিনেতাদের দলের ভেতর থেকে একজন সেই বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলেন, ‘জীবনে কখনো ফুটবল ম্যাচ দেখেছেন?’ বৃদ্ধা জবাব দিলেন, ‘না, দেখিনি।’

পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে এত শোক কীসের?

ঘটনাটি এ পর্যন্ত বলে হাঙ্গেরির কিংবদন্তি রেডিও ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক গিওর্গি সেপিসি চোখ মুছলেন। তারপর বললেন বাকিটা। কীসের শোক—এমন প্রশ্নের জবাবে সেই বৃদ্ধা সরল মনে বলেছিলেন, ‘এখানে সবাই বলাবলি করছিল, আমরা যদি আর একটি ম্যাচ জিতি, তাহলে হাঙ্গেরির সঙ্গে ট্রানসিলভানিয়া আবার মিলে যাবে; তখন আমরা হাঙ্গেরিতে ফিরে যেতে পারব।’

সেপিসির মুখে এই ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জার্মানির সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘স্টার্ন’–এ।

২.

সেদিন আরেকজনের গল্প বলেছিলেন সেপিসি।

গুলা গ্রোসিচ—কালো জার্সি পরে মাঠে নামার অভ্যাস ছিল তাঁর। সেপিসি ডাকতেন ‘দ্য ব্ল্যাক প্যান্থার’। পরে গোটা হাঙ্গেরি সেই নামে ডেকেছে গোলকিপার গ্রোসিচকে। ৮৪ মিনিটে পশ্চিম জার্মানির হেলমুট রানের বাঁ পায়ের শট ঠেকাতে পারেননি। ছয় মিনিট পর শেষ বাঁশি বাজলে ওই গোলটা হাঙ্গেরির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এরপর বলির পাঁঠা তো কাউকে না কাউকে বানাতে হবে! সে জন্য গ্রোসিচের চেয়ে আদর্শ (!) কে হতে পারেন! গ্রোসিচ নিজেও টের পেয়েছিলেন খড়্‌গ নেমে আসছে। ২০১৪ সালে মৃত্যুর আগে প্রায় প্রতিদিনই নাকি তিনি আত্মজিজ্ঞাসায় ডুবতেন, ‘বলটি কি ঠেকাতে পারতাম? ঠেকানো উচিত ছিল কি? (গোলটির পর) মাঠে সবচেয়ে নিঃসঙ্গ ব্যক্তিটি ছিলাম আমি। ম্যাচ শেষে বাকি জীবনেও সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। ওই একটি ম্যাচ আমার জীবনকে তছনছ করে দেয়।’

১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির স্ট্রাইকার হ্যানস শ্যাফারকে ঠেকাচ্ছেন হাঙ্গেরি গোলকিপার গ্রোসিচ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গোলে মেসিদের বিশ্বকাপকে পেছনে ফেলেছে ক্লাব বিশ্বকাপ

কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। ৩২ দল থেকে ৮ দলে নেমে এসেছে এই প্রতিযোগিতা। এখন কোয়ার্টার ফাইনালের ৪ ম্যাচ, সেমিফাইনালের ২ ম্যাচ, ফাইনালসহ আরও ৭টি ম্যাচ বাকি ক্লাব বিশ্বকাপে। তবে গোলসংখ্যায় এরই মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলকে পেছনে ফেলেছে ক্লাব বিশ্বকাপ।

যুক্তরাষ্ট্রে চলতি ক্লাব বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে খেলা হয়েছে ৪৮ ম্যাচ, আর শেষ ষোলোয় ৮ ম্যাচ—সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬ ম্যাচ খেলা হয়েছে। এই ৫৬ ম্যাচে গোলসংখ্যা ১৭৩টি। অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩.০৮টি করে গোল হয়েছে।

আরও পড়ুনবার্সেলোনার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার দুটি তারিখ পেল রিয়াল১২ ঘণ্টা আগে

১৯৩০ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরে খেলেছে ১৩ দল। চার বছর পরের আসরে ১৬ দল, মাঝে দুটি আসরে দলসংখ্যা কমলেও ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ১৬টি করে দল অংশ নিয়েছে। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলেছে ২৪ দল। এরপর ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ৩২ দল নিয়ে আয়োজিত হয় বিশ্বকাপ। এত দিন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৩২ দল দেখা গেলেও ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশ নেবে ৪৮টি দল।

এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে যেহেতু ৩২ দল অংশ নিয়েছে, তাই গোলের তুলনাটাও করা হয়েছে ৩২ দল নিয়ে আয়োজিত বিশ্বকাপের সঙ্গে। ১৭১ গোল হয়েছে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে, ২০১৪ বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত এটাই ছিল বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ব্রাজিলে আয়োজিত ২০১৪ বিশ্বকাপেও দেখা গেছে ১৭১টি গোল। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে এসেছে ভেঙেছে এই যৌথ রেকর্ড। আর্জেন্টিনার জেতা এই বিশ্বকাপে হয়েছে ১৭২ গোল।

অর্থাৎ লিওনেল মেসিদের জেতা কাতার বিশ্বকাপে ৬৪ ম্যাচ মিলিয়ে যত গোল হয়েছে, এবারের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ বাকি থাকতেই তার চেয়ে বেশি গোল হয়েছে।

আরও পড়ুনরিয়ালের কাছে হারে জুভেন্টাসের ১০ খেলোয়াড় যে কারণে মাঠ ছাড়তে চেয়েছেন১৫ ঘণ্টা আগে

২০০২ বিশ্বকাপে হয়েছে ১৬১ গোল, ২০০৬ বিশ্বকাপে ১৪৭ গোল, ২০১০ বিশ্বকাপে ১৪৫ গোল, ২০১৮ বিশ্বকাপে ১৬৯ গোল। সব কটি বিশ্বকাপই ছিল ৬৪ ম্যাচের। এর মধ্যে ম্যাচপ্রতি গোল গড়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই কাতার বিশ্বকাপ এগিয়ে। প্রতি ম্যাচে ২.৬৯টি করে গোল হয়েছে কাতার বিশ্বকাপে। তবে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা ও ম্যাচসংখ্যা হিসাবের বাইরে রাখলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ম্যাচপ্রতি গোলসংখ্যায় ১৯৫৪ বিশ্বকাপ এগিয়ে। সুইজারল্যান্ডে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচে হয়েছিল ১৪০ গোল। ম্যাচপ্রতি গোল ছিল ৫.৪৮!

এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে দেশের গোলসংখ্যা হিসাবে ব্রাজিলই এগিয়ে। শেষ ষোলোয় ৬টি গোল করেছেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। গ্রুপ পর্ব মিলিয়ে এবার ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ২৪ গোল দেখা গেছে। ১৯ গোল নিয়ে এ তালিকার দুইয়ে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। ১৩ গোল নিয়ে তৃতীয় ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। ফ্রান্স ও পর্তুগালের খেলোয়াড়দের গোলসংখ্যা সমান ১২টি করে। জার্মানি ও স্পেনের খেলোয়াড়েরা করেছেন ৯টি করে গোল।

মহাদেশ বিচারে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে গোলে ইউরোপ এগিয়ে। এই মহাদেশের খেলোয়াড়েরা করেছেন ৮২ গোল। ৫২ গোল নিয়ে দুইয়ে দক্ষিণ আমেরিকা। ১৫ গোল নিয়ে তৃতীয় আফ্রিকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোলে মেসিদের বিশ্বকাপকে পেছনে ফেলেছে ক্লাব বিশ্বকাপ