দেওয়ানগঞ্জে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও দুটি কাজ শুরুই করা হয়নি। অথচ চেয়ারম্যান প্রকল্প বরাদ্দের অর্ধেক টাকা অগ্রিম নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেওয়ানগঞ্জের আটটি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে (কাবিটা) ৪১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এতে মোট বরাদ্দ ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩২২ টাকা ৮১ পয়সা। ৭৪টি টিআর প্রকল্পে বরাদ্দ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে খাদ্যশস্যের ১১টি সংস্কার প্রকল্পে ১১৭ দশমিক ৬৮০ টন গম এবং ২২টি প্রকল্পে ১১৭ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণে প্রকল্পগুলো দেওয়া হয়েছে। যাতে পথচারীদের ভোগান্তি নিরসন হয়।
গত বৃহস্পতিবার ‘আকন্দপাড়া আজিজলের বাড়ি থেকে ওছিউজ্জামানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, পাকা সড়ক থেকে রাস্তাটি নেমে গেছে গ্রামের ভেতরে। পাকা রাস্তা থেকে ৫০ ফুট দূরে রাস্তাটির কিছু অংশ ভাঙা। বাকি স্থানেও ছোট-বড় গর্ত। চলাচল করা কঠিন। গত বছর বর্ষায় ভেঙে গেছে রাস্তাটি।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটিতে কোনো কাজ হয়নি। ওই প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭ টাকা। প্রকল্পটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম। প্রকল্পটি অনুমোদন হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। কাজের সময়সীমা ৩০ জুন। শুরুতে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজই শুরু হয়নি।
আকন্দপাড়া গ্রামের হযরত আলীর ভাষ্য, এ বছর আজিজলের বাড়ি থেকে ওছেউজ্জামানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় চেয়ারম্যান কোনো কাজ করেনি। গত বছর বর্ষায় রাস্তাটির বেশ কিছু স্থানে ভেঙে গেছে। কিছু কিছু স্থানে খানাখন্দ। এ রাস্তায় চলাফেরা করা কঠিন। দ্রুত রাস্তাটি পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন।
একই গ্রামের আব্দুল মোতালেব বলেন, আজিজলের বাড়ি থেকে দক্ষিণে বয়ে যাওয়া রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী। রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরি। এ রাস্তা দিয়ে গ্রামবাসী সব সময় চলাচল করে। রাস্তাটির কিছু অংশে ভেঙে গেছে। এখন বর্ষাকাল, ডোবা নালায় পানি। মাটি পাওয়া কঠিন হবে। আগেই রাস্তাটি সংস্কার করা উচিত ছিল।
একই দিন সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া আজিজুর ডাক্তারের বাড়ির উত্তর পাশে রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, কিছুটা ফাঁকা স্থানে অর্ধভাঙা বক্স কালভার্ট। দু’পাশে সংযোগ সড়ক নেই। কিছুটা দূর দিয়ে ক্ষেত ঘুরে চলাচল করছেন পথচারী। তারা জানান, গত বছর বর্ষায় কালভার্টটির কিছু অংশসহ দু’পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। এ কারণে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কালভার্টটির ফলকে লেখা সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে বক্স কালভার্ট স্থাপন। নির্মাণ করেছে সানন্দবাড়ীর মেসার্স মমতাজ এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা তহবিল থেকে বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, কালভার্টটি ইউপি চেয়ারম্যান নিজ দায়িত্বে নির্মাণ করেছেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া আজিজুর ডাক্তারের বাড়ির উত্তর পাশের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বরাদ্দ হয় তিন লাখ টাকা। তার ৫০ শতাংশ অর্থ প্রকল্পের শুরুতেই দেওয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে ওই প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, প্রকল্পটি মূলত চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলামের দায়িত্বে রয়েছে। তাকে নামেমাত্র সভাপতি রাখা হয়েছে। অগ্রিম টাকাও নিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি জানান, প্রকল্পটির কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। ৩০ জুন কাজ শেষ করার সময়সীমা শেষ হয়েছে।
সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ভাষ্য, গত বর্ষায় কালভার্টটি ভেঙে গেছে। এতে দুটি গ্রামের মানুষের চলাফেরা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বন্যার সময় সড়কের এই স্থানে পানি জমে থাকে। তখন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দ্রুত কালভার্টটি পুনর্নির্মাণের দাবি তাঁর।
একই গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, ‘এই রাস্তায় একটি সেতু দিছিল সরকারে। তা এক বছরেই ভাইঙা গেছে। এহন আবার ব্রিজ নির্মাণ করা হইব বলে শুনতাছি। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণ হইতেছে না। যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাইতে হইতেছে।’
চরআমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলামের দাবি, তাঁর মিস্ত্রি অন্য জায়গায় কাজ করছেন। তাই কাজ করা হয়নি। এখন কাজ করবেন তিনি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, সময় শেষ হোক, সমস্যা নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খবিরুজ্জামান খান জানান, কাজ না করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণে প্রকল্পগুলো দেওয়া হয়েছে। যাতে পথচারীদের যাতায়াতে ভোগান্তি নিরসন হয়। প্রকল্প দুটির চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প প রকল প র ম য় দ শ ষ ন র ম ণ কর বর ষ য় ক ল ইসল ম ক জ কর বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি দপ্তরে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফর বন্ধ
গত কয়েক বছরের মতো চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি নিয়েছে সরকার। এর আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। এমনকি পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। পরিচালন বাজেটে সব ধরনের থোক ব্যয়ও বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে বেশকিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো হয়েছে।
১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট। আর বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ পরিপত্র জারি করে এসব নির্দেশনা দিয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে।
তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া স্কলারশিপ, ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য বিদেশ যাওয়া যাবে। বাধা থাকবে না অন্যান্য দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশযাত্রা।
সেই সঙ্গে প্রিশিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্টের (এফএটি) আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির ২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। তবে একান্ত অপরিহার্য হলে পিএসআই বা এফএটির আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
পরিপত্রে সব ধরনের গাড়ি, জাহাজ ও বিমান কেনা বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হলেও পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের বেশি পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
চলতি অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের থোক বরাদ্দ হতে ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে জিওবি (সরকারি অর্থায়ন) বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণাল বা বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবি’র সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থবিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। পরিচালন বাজেটে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ বন্ধের কথা বলা হলেও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এ খাতে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে অর্থ বিভাগের পূর্ব অনুমতি নিয়ে ব্যয় করা যাবে।