বার্লি দিয়ে তৈরি এই পানীয় খেলে পাবেন ৫টি বিশেষ উপকার
Published: 6th, August 2025 GMT
শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে বলে একসময় জ্বর হলে বার্লি খাওয়ার চল ছিল। বার্লির বাংলা ‘যব’, কোথাও কোথাও ‘পায়রা’ নামেও পরিচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিগুণে ভরপুর এই শস্যের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। অথচ গবেষণায় মিলেছে চমকপ্রদ তথ্য, বার্লিতে থাকা রাসায়নিক উপাদান ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
বার্লিতে আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-গ্লুকান ফাইবার। শস্যটিতে আরও থাকে ভিটামিন বি, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়াম। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শস্যগুলোর একটি। স্বাস্থ্যগুণ বিবেচনা করে আজকাল অনেকেই নতুন করে বেছে নিচ্ছেন বার্লি দিয়ে তৈরি পানীয়।
১.
কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
বার্লি বিটা-গ্লুকানের একটি ভালো উৎস। বিটা-গ্লুকান একটি দ্রবণীয় ফাইবার বা আঁশ, যা আমাদের অন্ত্রের খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত লো–ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের (এলডিএল) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত বার্লির পানীয় খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।
২. হজমে সাহায্য করে
আগেই বলেছি, বার্লিতে থাকে প্রচুর ফাইবার। এই ফাইবার হজমপ্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া বার্লি পেটফাঁপা কমায় এবং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে
একটি খাদ্য কত দ্রুত শরীরে চিনিতে (গ্লুকোজে) রূপান্তরিত হয়, তার পরিমাপই হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। এই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হওয়া শরীরের জন্য খারাপ। বার্লির পানিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে এবং এটি রক্তে চিনি শোষণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অথবা যাঁরা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁদের জন্য এটি আদর্শ পানীয়।
৪. শরীরকে বিষমুক্ত করে
বার্লি দিয়ে তৈরি পানীয় প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, যা কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে সাহায্য করে। যাঁদের মূত্রনালিতে সংক্রমণ আছে, তাঁদের জন্য এটি বেশ উপকারী। এ ছাড়া বার্লির পানীয় শরীর ঠান্ডা রাখে।
৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে
পেট ভরা থাকলে আমরা নিজে থেকেই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকি। বার্লির পানীয়তে থাকা ফাইবার পেট ভরা রাখে। ফলে কম ক্ষুধা পায়। বার্লি স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স হ য য কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রাম ও শহর: বৈষম্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া যেখানে চলমান
তথ্যে-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, আর্থসামাজিক সূচকে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ‘স্টেট অব দ্য রিয়েল ইকোনমি’ শীর্ষক জাতীয় সমীক্ষায় দেখা যায়, গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্ভবত এ অগ্রগতির মূল উপাদান পাকা সড়ক নেটওয়ার্ক এবং দেশব্যাপী বিদ্যুৎ-সংযোগ। সেই সঙ্গে মানুষের মনে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা।
পিপিআরসির ওই সমীক্ষায় উল্লেখিত অগ্রগতি মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যোগ প্রমাণ করেছে। এই অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। জুলাই-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাজনৈতিক সংস্কার যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, অর্থনৈতিক সংস্কার ততটা পায়নি। জুলাই আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক ছিল না, এর গভীরে ছিল অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।
ব্যবসায় ভীতিকর অবস্থাদেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল বা মালিকানার হাতবদল বৃহৎ, মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিয়েছেন বা সংকুচিত করেছেন। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে টাকার প্রবাহ কমেছে। দ্বিতীয়ত, কিছুসংখ্যক ব্যাংকের নাজুক অবস্থার কারণে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। তৃতীয়, সরকারি অনেক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে, নতুন প্রকল্পের সংখ্যা কমে এসেছে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে শ্রমজীবী মানুষের কাজের সুযোগ কমেছে।
পিপিআরসির সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে অর্থাৎ টাকার দাম কমেছে। সার্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাপে পড়েছে, গ্রামের মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে এসে অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত হচ্ছেন। গ্রাম-শহরের মধ্যে নানা সূচকের বৈষম্য কমলেও গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের অভাবে সেই অগ্রগতি পেছনের দিকে ফিরতে শুরু করেছে। যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭। আর পিপিআরসির ২০২৫-এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সে হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে।
পিপিআরসির সমীক্ষায় পরিলক্ষিত গ্রাম-শহর বৈষম্যের বিশেষ কয়েকটির দিকে নজর দেওয়া যাক। গৃহ ক্যাটাগরিতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের ১৬ দশমিক ৬ এবং শহরের ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা পাকা বাড়িতে বাস করেন। গ্রামের ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও শহরের ২৯ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা টিনশেড বাড়িতে বাস করেন। গ্রাম এলাকার ৯১ দশমিক ৫ ভাগ উত্তরদাতা ও শহরের ৫৯ দশমিক ৮ ভাগ উত্তরদাতা নিজগৃহে বাস করেন। এসব তথ্য থেকে সম্পদের মালিকানা বৃদ্ধির একটি বিশেষ দিক উঠে এসেছে।
সুপেয় পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে শহরের তুলনায় গ্রাম সামান্য এগিয়ে আছে। গ্রামের উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ সুপেয় পানি পান, অন্যদিকে শহরে এই হার ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ–সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগের হার ৯৮ দশমিক ৩, শহরের ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংযোগ শেষ কথা নয়। বিদ্যুৎ থাকা ও না-থাকার (লোডশেডিং) ক্ষেত্র গ্রাম ও শহরের চিত্র এক নয়।
শহর ও গ্রামে চিকিৎসা ব্যয় বেশিমাসিক আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের উত্তরদাতাদের মধ্যে পার্থক্য হলো যথাক্রমে ২৯,২০৫: ৪০,৫৭৮ টাকা। শহরের উত্তরদাতাদের মধ্যে আয়ের চেয়ে ব্যয় করার প্রবণতা বেশি; গ্রামের উত্তরদাতারা সঞ্চয়প্রবণ। উত্তরদাতাদের আয়ের বেশির ভাগ ব্যয় হয় খাবারের পেছনে। শহরবাসী ও গ্রামবাসী উভয় শ্রেণির উত্তরদাতাদের চিকিৎসার ব্যয় বেড়েছে। জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ বেড়েছে উভয় শ্রেণিতেই—ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদ্রোগের বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। শিক্ষার ব্যয় শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি।
পিপিআরসির ওই সমীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের হার গ্রামে ৭১ শতাংশ, আর শহরে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ। কম্পিউটার/ল্যাপটপ রয়েছে গ্রামের ২ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার। শহুরে উত্তরদাতাদের মধ্যে এর হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। গ্রামের ৭৬ দশমিক ৮ এবং শহরের ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ খানার যুবকদের স্মার্টফোন রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন গ্রামের ৬৫ দশমিক ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা; শহরে এই হার ৭৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এসব তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির এক নতুন দিকের সন্ধান দিচ্ছে। ব্যয় ও ভোগের ধরনের ক্ষেত্রে বৈষম্য গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি।
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত সম্পদের মালিকানা বাড়ছে। সিংহভাগ অর্থ পুঞ্জীভূত হচ্ছে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে। বৈষম্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান। বিদ্যমান আইন, নীতি-পরিকল্পনা জনগণের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় অধিকতর কার্যকর। এ জটিল অর্থনৈতিক সমীকরণের মধ্যে গ্রাম-শহর সমতা বা অসমতার চিত্র কীভাবে দেখা হবে, তা এক কঠিন প্রশ্ন।
কৃষি অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হলেও প্রান্তিক কৃষক বৈষম্যের শিকার