জন্মের পর হাসপাতালে নবজাতককে রেখে পালিয়ে যান দম্পতি, অতঃপর
Published: 6th, August 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের পর কন্যাসন্তানকে রেখে পালিয়ে যান এক দম্পতি। টানা ১৬ দিন শিশুটির কোনো খোঁজ না পেয়ে শেষমেশ পুলিশের সহায়তা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ ওই দম্পতির ঠিকানা খুঁজে বের করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। আজ বুধবার বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্তানকে বুকে তুলে নেন মা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকার এশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক রিদুয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠায় চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দেন। কিন্তু মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য অন্য মায়েদের সাহায্য নেওয়া হয়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার এক সিএনজি অটোরিকশাচালক স্ত্রীকে ১৮ জুলাই এশিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করান। সেদিন রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। শিশুটি জন্মের পর অসুস্থ থাকায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়। চার দিন পর ২২ জুলাই মাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার টাকার বিলের মধ্যে তাঁরা ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপর নবজাতককে হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে যান তাঁরা।
পরবর্তী সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১ আগস্ট চকবাজার থানায় লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির বাবা-মায়ের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার ঠিকানায় গিয়ে তাঁদের খুঁজে বের করে পুলিশ। পরে পরিবারের জন্য গাড়িভাড়া দিয়ে চট্টগ্রামে আনা হয়।
ওসি বলেন, ১৯ দিনে হাসপাতালের মোট বিল হয়েছিল ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। পরিবারের পক্ষে এই টাকা পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না বলে তাঁরা হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছিলেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে এক ব্যক্তি বিলের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা দেন। বাকি বিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মওকুফ করে দেয়।
হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন শিশুটির মা, নানি ও নানা। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, সামর্থ্য না থাকায় তাঁরা কোনোভাবেই খরচ মেটাতে পারছিলেন না। কোথাও সাহায্যও পাননি। বিল কমানো বা মওকুফ করার সুযোগ আছে, তা জানতেন না।
শিশুটির মা বলেন, ‘প্রতিদিন কেঁদেছি। মেয়েকে ফেলে থাকতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু টাকা না থাকায় আসতে পারিনি।’
শিশুটির বাবা এ দিন হাসপাতালে আসেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ত্রীর অস্ত্রোপচারে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এরপর আর কোনো টাকা ছিল না। তাই হাসপাতালে যাইনি।’
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন বলেন, গরিব রোগীদের ক্ষেত্রে বিল যতটা সম্ভব মওকুফ করা হয়। আগে জানালে এ ক্ষেত্রেও তা করা হতো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম চেম্বারে ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের অভিযোগ
চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অতীতের ফ্যাসিবাদী পরিবারতন্ত্র পুনর্বহালের অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (আইবিডব্লিউএফ)।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক, আইবিডব্লিউএফের সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ নন প্যাকার্স ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুব রানা প্রমুখ। এতে বক্তারা বলেন, টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের পুনর্বহাল করে; অতীতে চেম্বারকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংগঠন হিসেবে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র আবারও সংগঠনটি দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এস এম নুরুল হক বলেন, প্রাথমিক ভোটার তালিকা থেকে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের বাদ পড়ার পরও বানোয়াট কাগজপত্র দিয়ে আপিল করে আপিল বোর্ডকে অনেকটা বাধ্য করেছেন তাদের ভোটার করতে। আর এ কাজে সক্রিয় রয়েছেন চেম্বারের একজন সাবেক সভাপতি। তিনি চেষ্টা করছেন যাতে এসব সদস্যকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নির্বাচন। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আগ্রহী ১৬ জন প্রার্থী। এ বছর চেম্বারের মোট ভোটার ৬ হাজার ৭৮০। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য ৪ হাজার ১ জন, সহযোগী সদস্য ২ হাজার ৭৬৪ জন, ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি ১০ এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি ৫ জন।
মূলত টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি নিয়ে সাবেক সভাপতি এম এ লতিফের সময় থেকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চেম্বারে ২০০৮-০৯ মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেম্বারে তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। চেম্বারে সর্বশেষ সরাসরি ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। ওই নির্বাচনে এম এ লতিফ সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়। এরপর এক দশকের বেশি সময় বিনা ভোটে চট্টগ্রাম চেম্বার লতিফের পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের দখলে ছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের ১২ জন পরিচালক সাধারণ সদস্যদের ভোটে, ৬ জন সহযোগী সদস্যদের ভোটে, ৩ জন টাউন অ্যাসোসিয়েশন থেকে ও ৩ জন পরিচালক ট্রেড গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হন। ব্যবসায়ীদের এক পক্ষের দাবি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ থেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এম এ লতিফ ও তাঁর ছেলেও ট্রেড গ্রুপ থেকেই চেম্বারের নেতৃত্বে এসেছিলেন।
গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তার আগে চেম্বারের বেশির ভাগ পরিচালক পদত্যাগ করেন। শুরুতে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক করা হয় তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর প্রশাসক নিয়োগের পর টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপকে বাদ দেওয়ার জন্য সে বছরের ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন এস এম নুরুল হক। চলতি বছরের ২০ আগস্ট তাঁদের ভোট প্রদানে সুযোগ না দিতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ। এরপর চারটি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও চারটি ট্রেড গ্রুপকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স গ্রুপ, চিটাগাং ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার গ্রুপ ও চিটাগাং মিল্ক ফুড ইমপোর্টার্স গ্রুপ।
এই দুই শ্রেণিকে বাদ দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ অভিযোগ করে, যে আটটি সংগঠনকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি কিসের ভিত্তিতে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তাই এই দুই গ্রুপকে বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণে গ্রুপ দুটিকে অন্তর্ভুক্ত করার আপিল করা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক ও চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম বলেন, গ্রুপ দুটি আপিল বোর্ডে আবেদন করেছে, যাচাই-বাছাই শেষে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।