২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে দেশব্যাপী চলছিল তুমুল আন্দোলন। বাদ যায়নি কুষ্টিয়া শহরও। ছাত্র-জনতা এদিন সকাল থেকে রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে তারা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। পুরো শহর পরিণত হয় রক্তাক্ত জনপদে। 

পুলিশের গুলিতে নিভে যায় ছয়টি তাজা প্রাণ। এছাড়া তাদের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের আঘাতে একজন ও যুবলীগের হামলায় আরও একজন নিহত হন। মোট আটজন নিহতের ঘটনা ঘটে আন্দোলনকে ঘিরে। তবে সেই ঘটনার এক বছর পার হলেও কোনো বিচার না হওয়ায় নিহতদের পরিবারে হতাশা তৈরি হয়েছে।

তাদের সবার দাবি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবে দোষ না করেও যারা মামলার আসামি হয়েছেন, তাদের প্রতি সুবিচারের দাবিও তোলা হয়েছে। পাশাপাশি তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়ায় আট শহিদ হলেন- মো.

ইউসুফ, আবদুল্লাহ, ওসামা, বাবলু ফারাজী, সুরুজ আলী, আশরাফুল ইসলাম, সবুজ আলী ও মাহিম হোসেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সামনে নূর টেইলার্স গলির ভেতরে আন্দোলনকারী মো. ইউসুফকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার কপাল ও শরীরের বিভিন্ন স্থান গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার মামলায় আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ মোট ৭৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়। 

মামলার বাদী ও নিহত ইউসুফের মেয়ে সীমা খাতুন বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে এসআই সাহেব আলী ও এসআই মুস্তাফিজ গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। পরে পুলিশের নামে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। হত্যার ১০ দিন পরে মামলা করা হয়। কিন্তু এ মামলায় অনেক নির্দোষ ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুবিধাবাদীরা এ মামলা নিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছে। তারা তাদের মনমতো মামলা সাজিয়েছে। নাম ঢুকিয়েছে। এরপর কয়েকজনের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তারা বাণিজ্য করেছে। এ জন্য বিভিন্ন সময় তারা আমার সই নিয়েছে। এই এক বছরে আমরা বাবার হত্যার বিচার পাইনি। হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। শহিদ পরিবারে চাকরি দেওয়া হোক, পুনর্বাসন করা হোক।”

পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সুরুজ আলী বাবু। তিনি পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ছিলেন। ৫ আগস্ট বিকেল ৪ টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার বার্মিজ গলির সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওইদিন তার লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় রাইসুল হক নামে এক ব্যক্তি ৩৫ জনের নামে মামলা করেন। অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়। 

সুরুজ আলীর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেল। কিন্তু আজও বিচার পেলাম না। আমাদের আগেই অন্য একজন এ ঘটনায় মামলা করেছে। ওই মামলার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। শুনেছি মামলার মাধ্যমে বাণিজ্য হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীরা শাস্তি পাক, নির্দোষীদের অব্যাহতি দেওয়া হোক। আমি সরকারের কাছে আমার নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্ত কাজের অগ্রগতি ভালো।”

মামলার বাদীদের অভিযোগ, এসব মামলায় অনেক নিরাপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো পুলিশ কীভাবে দেখছে? এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, “আমরা প্রতিটি বিষয় মাথায় রেখেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ভোগান্তির শিকার না হয়, সে বিষয়েও খেয়াল রাখছি।”

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) তৌফিকুর রহমান বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছি। প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এককালীন দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসন, আবাসন সুবিধা ও চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তদন ত ক পর ব র হত য র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।

দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।

স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার
  • খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করার নির্দেশ দিলো আদালত
  • ‘মোটা জেনারেলদের’ কড়া সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা হেগসেথ
  • ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯