কাদের চাপে পড়ে কোন দিকে হাঁটছে সরকার: রাশেদা কে চৌধূরী
Published: 9th, August 2025 GMT
রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটছে, পেছনে হাঁটছে কিনা—এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘চাপ সৃষ্টি করতে বলা হচ্ছে আমাদের (নারীদের), তাহলে কাদের চাপে পড়ে, কোন দিকে হাঁটছে এই সরকার? নারীর ক্ষমতায়নের জায়গাটা কোন দিকে যাবে, সেটা নিশ্চয়ই বিবেচনা করতে হবে ঐকমত্য কমিশনকে।’
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে রাশেদা কে চৌধূরী এসব কথা বলেন। এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র তুলে ধরেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।
আরও পড়ুননারীদের জন্য ৫% আসন, এই দয়াদাক্ষিণ্য কেন : ফারাহ কবির১ ঘণ্টা আগেএকটা বিশেষ গোষ্ঠী বা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা কারও কাছে অন্তর্বর্তী সরকার যে ‘বায়াসড’ (পক্ষপাতদুষ্ট) না, সেটা তাদেরই (সরকার) প্রমাণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘কারণ মানুষ যদি এ রকম ধরে নিয়ে বসে থাকে তাহলে তো অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করা মুশকিল হবে।'
ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, 'মনে হচ্ছে আমরা যেন বাংলাদেশে নাই।' এ সময় তিনি নারীর ডাকে আরেকটি মৈত্রী যাত্রা করারও প্রত্যাশা জানান।
দেশে নারীদের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত কেন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে—এমন প্রশ্ন রাখেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘আমরা তো দীর্ঘদিন ধরে আছি। মাঠে কাজ করছি। আমরা জানি, এই মাঠে কাজ করছি। তো আমরা জানি যে পলিটিক্যাল পার্টিগুলা কাদের হয়ে কাজ, কী জন্য কাজ করে, কোন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে--সেই জায়গায় আমাদের যেতে হবে। আমাদের তাদের (রাজনৈতিক দল) কাছে দাবি করতে হবে।'
আরও পড়ুনসংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হতেই হবে: ফওজিয়া মোসলেম১ ঘণ্টা আগেনারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশে 'একটা মিথ' হিসাবে আছে বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, অংশগ্রহণ করলেই ক্ষমতায়ন হয়ে যায়, তো অংশীদারত্ব কোথায়।’
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, '৫০ শতাংশ (সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব) এর কথা এসছে। আমরা ওটাই বলব। এটার ব্যাপারেও আমাকে দুই-একজন ফোন করেছিলেন। কেউ একজন বললেন ঠিক আছে কামান চান, হয়তোবা বন্দুক তুমি পাবে। এ রকম কথাও শুনতে হয়েছে।’
৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব না থাকলে নারীরা আরও পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আমরা কেন দেন দরবার করব? করলে সেটা এ মুহূর্তে না, সেটা করব সংসদ হয়ে যাওয়ার পরে।’
‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে 'জাতীয় সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল র জন ত ক ক জ কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধের মধ্যেও কোন গোপন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে হামাস
গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর রাজনৈতিক নেতৃত্বও তীব্র চাপে রয়েছে।
তবু যুদ্ধ চলাকালেই হামাস নগদ অর্থভিত্তিক এক গোপন পরিশোধব্যবস্থা ব্যবহার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ৩০ হাজার সরকারি কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করছে তারা। মোট বেতন বাবদ এ অর্থের পরিমাণ ৭ মিলিয়ন (৭০ লাখ) ডলার (৫৩ লাখ পাউন্ড)।
বিবিসি গাজার তিনজন সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেছে। গত সপ্তাহেই প্রায় ৩০০ ডলার করে বেতন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন তাঁরা।
ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যাঁরা প্রতি ১০ সপ্তাহে যুদ্ধপূর্ব বেতনের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশের কিছু বেশি পাচ্ছেন, এই তিন কর্মচারী তাঁদের কয়েকজন।
বেগতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতির মধ্যে এই সামান্য বেতন, যা পূর্ণ বেতনের এক ভগ্নাংশ, দলের অনুগত কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।
প্রতিবার বেতন তুলতে গেলে আমি স্ত্রী-সন্তানদের বিদায় জানাই। জানি হয়তো আর ফিরে আসব না। কয়েকবার ইসরায়েলি হামলা বেতন বিতরণস্থলে আঘাত করেছে। গাজা শহরের একটি ব্যস্ত বাজারে এমনই এক হামলায় আমি প্রাণে বেঁচেছিলামনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মীগাজায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট চলছে। এ নিয়ে ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলি অবরোধকে দায়ী করছে। তীব্র অপুষ্টির ঘটনাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় গাজায় এক কেজি আটা বিক্রি হয়েছে ৮০ ডলারে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
গাজায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ থাকায় এ সামান্য বেতন তুলতেও জটিলতা ও ঝুঁকি রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত হামাসের বেতন বিতরণকারীদের নিশানা করে, যাতে সংগঠনটির শাসনক্ষমতা দুর্বল হয়।
পুলিশ থেকে শুরু করে কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে নিজের বা স্ত্রী-স্বামীর মুঠোফোনে এনক্রিপটেড বার্তা পান। বার্তায় নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে গিয়ে ‘বন্ধুর সঙ্গে চা খাওয়ার’ আহ্বান জানানো হয়।
নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালে একজন পুরুষ, কখনো নারী গোপনে একটি সিল করা খাম হাতে তুলে দেন, যাতে টাকা থাকে। এরপর কোনো কথা না বলে তিনি সরে পড়েন।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া হামাসের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মী নিজের ঝুঁকির অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
গাজায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট চলছে। এ নিয়ে ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলি অবরোধকে দায়ী করছে। তীব্র অপুষ্টির ঘটনাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় গাজায় এক কেজি আটা বিক্রি হয়েছে ৮০ ডলারে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।এই কর্মী বলেন, ‘প্রতিবার বেতন তুলতে গেলে আমি স্ত্রী-সন্তানদের বিদায় জানাই। জানি, হয়তো আর ফিরে আসব না। কয়েকবার ইসরায়েলি হামলা বেতন বিতরণস্থলে আঘাত করেছে। গাজা শহরের একটি ব্যস্ত বাজারে এমনই এক হামলায় আমি প্রাণে বেঁচেছিলাম।’
‘আলা’(প্রকৃত নাম প্রকাশ করা হয়নি) হামাস পরিচালিত সরকারের একজন স্কুলশিক্ষক ও ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি ১ হাজার শেকেল (প্রায় ৩০০ ডলার) পেয়েছি পুরোনো ও ছেঁড়া নোটে। কোনো ব্যবসায়ী তা নিতে রাজি হননি। মাত্র ২০০ শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) ব্যবহারযোগ্য। বাকিগুলো দিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না।’
‘দুই-আড়াই মাসের ক্ষুধার পর আমাদের এভাবে ছেঁড়া টাকা দিয়ে বেতন দেওয়া হয়। শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে আমি প্রায়ই সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে যাই, হয়তো কিছু আটা পাব বলে। কখনো পাই, বেশির ভাগ সময়ই খালি হাতে ফিরি’, বলেন আলা।
দুই-আড়াই মাসের ক্ষুধার পর আমাদের এভাবে ছেঁড়া টাকা দিয়ে বেতন দেওয়া হয়। শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে আমি প্রায়ই সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে যাই, হয়তো কিছু আটা পাব বলে। কখনো পাই, বেশির ভাগ সময়ই খালি হাতে ফিরিআলা (ছদ্মনাম), হামাস পরিচালিত সরকারের একজন স্কুলশিক্ষকচলতি বছরের মার্চে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে হামলায় হামাসের আর্থিক বিভাগের প্রধান ইসমাইল বারহুমকে হত্যা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হামাসের সামরিক শাখায় তহবিল সরবরাহ করছিলেন।
কীভাবে প্রশাসনিক ও আর্থিক অবকাঠামোর বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার পরও হামাস বেতন প্রদানের অর্থ জোগাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।
হামাসের আর্থিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত ও উচ্চপদে থাকা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মী বিবিসিকে জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার আগে হামাস গোপন সুড়ঙ্গে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলার নগদ ও শত শত মিলিয়ন শেকেল মজুত করেছিল। ওই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুনত্রাণ নিতে গিয়েছিল শিশুটি, চোখে গুলি ছুড়ল ইসরায়েলি সেনারা ০৪ আগস্ট ২০২৫অভিযোগ অনুযায়ী, এই মজুত তদারক করতেন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ। তাঁদের দুজনকেই পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে।
হামাস বহুদিন ধরে গাজায় আমদানি পণ্য ও কর থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে এসেছে। পাশাপাশি কাতার থেকেও মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পেয়েছে।
হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের জন্য আলাদা আর্থিক ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূলত ইরান থেকে অর্থায়নকৃত।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন মিসরের নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ হামাসকে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনকঙ্কালসার ইসরায়েলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করল হামাস০৩ আগস্ট ২০২৫নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালে একজন পুরুষ, কখনো নারী গোপনে একটি সিল করা খাম হাতে তুলে দেন, যাতে টাকা থাকে। এরপর কোনো কথা না বলে তিনি সরে পড়েন।যুদ্ধ চলাকালীন রাজস্ব জোগাড় করতে হামাস ব্যবসায়ীদের ওপর কর ধার্য করা অব্যাহত রেখেছে এবং সিগারেটের বিশাল মজুত শতগুণ দামে বিক্রি করেছে। যুদ্ধের আগে ২০টি সিগারেটের প্যাকেটের দাম ছিল ৫ ডলার। এখন তা বেড়ে ১৭০ ডলারের বেশি হয়েছে।
নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি হামাস তাদের সদস্য ও পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রীও বিতরণ করেছে স্থানীয় জরুরি কমিটির মাধ্যমে। এসব কমিটির নেতৃত্ব ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার কারণে বারবার পরিবর্তিত হয়েছে।
হামাসের এ পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। গাজার অনেক বাসিন্দা তাদের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা শুধু নিজেদের সমর্থকদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে, বাকি জনগণকে বঞ্চিত করছে।
আরও পড়ুনজিম্মিদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত হামাস, আছে যেসব শর্ত০৪ আগস্ট ২০২৫