এআই দাবা প্রতিযোগিতায় মাস্কের গ্রোককে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ওপেনএআই
Published: 9th, August 2025 GMT
বিশ্বের সেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দাবাড়ু নির্ধারণে আয়োজিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। ফাইনালে তারা হারিয়েছে ইলন মাস্কের এআই মডেল গ্রোক ৪–কে।
দাবা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটারের সক্ষমতা যাচাইয়ের অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক দাবা সফটওয়্যার এখন বিশ্বের সেরা মানব-দাবাড়ুকেও অনায়াসে হারাতে পারে। তবে এবারের প্রতিযোগিতা ছিল ভিন্নধর্মী। এখানে অংশ নেওয়া এআই মডেল বিশেষভাবে দাবার জন্য তৈরি নয়। সাধারণত এগুলো নিত্যদিনের নানা কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা ওপেনএআইয়ের ওথ্রি মডেল ফাইনালে মাস্কের প্রতিষ্ঠান এক্সএআইয়ের গ্রোক ৪–কে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে। এই জয় দুই প্রতিষ্ঠানের চলমান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও উসকে দিয়েছে।
ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান ও ইলন মাস্ক দুজনই দাবি করে আসছেন, তাঁদের সর্বশেষ এআই মডেলই বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত। তৃতীয় স্থানে রয়েছে গুগলের মডেল জেমিনি। ওপেনএআইয়ের আরেকটি মডেলকে হারিয়ে এই অবস্থান অর্জন করেছে জেমিনি। চেজ ডটকমের প্রতিবেদক পেদ্রো পিনহাতা বলেন, ‘সেমিফাইনাল পর্যন্ত মনে হয়েছিল, গ্রোক ৪–কে থামানোর মতো কেউ নেই। কিছু দুর্বল মুহূর্ত থাকলেও এক্সএআইয়ের এআই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী দাবাড়ু। কিন্তু শেষ দিনের খেলায় সেই ধারণা ভেঙে যায়। ফাইনালে গ্রোকের ‘ভুলভরা’ খেলার সুযোগ নিয়ে ওথ্রি টানা কয়েকটি নিশ্চিত জয় তুলে নেয়।
দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার হিকারু নাকামুরা তাঁর সরাসরি সম্প্রচারে মন্তব্য করেন, গ্রোক অনেক ভুল করেছে, কিন্তু ওপেনএআই একটিও করেনি।
এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে গুগলের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম ক্যাগলে। এ প্ল্যাটফর্মে ডেটা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাঁদের সিস্টেম পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করেন। তিন দিনব্যাপী এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয় আটটি বড় ভাষা মডেল, অ্যানথ্রপিক, গুগল, ওপেনএআই, এক্সএআই ছাড়াও চীনের ডিপসিক ও মুনশট এআই। এআই ডেভেলপাররা সাধারণত ‘বেঞ্চমার্ক’ পরীক্ষা ব্যবহার করে মডেলের যুক্তি প্রয়োগ, কৌশল নির্ধারণ বা প্রোগ্রামিং দক্ষতা যাচাই করেন। দাবার মতো জটিল, নিয়মনির্ভর কৌশলভিত্তিক খেলা এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় মডেলের লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা পরিমাপের জন্য। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জয়লাভ।
গুগলের এআই ল্যাব ডিপমাইন্ডের তৈরি ‘আলফাগো’ ২০১০–এর দশকের শেষ দিকে মানব গো চ্যাম্পিয়নদের একের পর এক হারিয়ে আলোচনায় আসে। ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্যার ডেমিস হাসাবিস নিজেও একসময় ছিলেন দাবার বিস্ময় প্রতিভা। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে আইবিএমের সুপারকম্পিউটার ‘ডিপ ব্লু’ তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে প্রযুক্তি–দুনিয়ায় সাড়া ফেলে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাক্টিকা তৈরির পরিকল্পনা ইলন মাস্কের
মানবসভ্যতার সামষ্টিক জ্ঞানকে মহাকাশে সুরক্ষিত রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইলন মাস্ক। স্পেসএক্স ও এক্সএআইয়ের প্রধান নির্বাহী বলেন, উইকিপিডিয়ার বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলা তাঁর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর প্ল্যাটফর্ম গ্রোকিপিডিয়া একটি অস্থায়ী নাম। প্ল্যাটফর্মের সক্ষমতা আরও বাড়লে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হবে এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাক্টিকা। চিরায়ত বিজ্ঞান কল্পকাহিনির প্রতি সম্মান জানিয়ে নেওয়া এই নাম মানবজ্ঞান রক্ষার মহাজাগতিক ভান্ডারের ধারণা বহন করবে।
গত মঙ্গলবার এক্সে দেওয়া বার্তায় মাস্ক জানান, গ্রোকিপিডিয়া যখন যথেষ্ট উন্নত অবস্থায় পৌঁছাবে, তখন এর নাম বদলে রাখা হবে এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাক্টিকা। নামটির উৎস আইজ্যাক অ্যাসিমভের বিখ্যাত ফাউন্ডেশন সিরিজ। এ সিরিজে এক সাম্রাজ্যের সময়ে মানবজ্ঞান ধরে রাখতে গড়া হয়েছিল এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাক্টিকা নামে এক বিশাল তথ্যভান্ডার। ২০২৫ সালের অক্টোবরে চালু হওয়া গ্রোকিপিডিয়া এক্সএআইয়ের নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল গ্রোক ব্যবহার করে তৈরি করা অনলাইন বিশ্বকোষ। নিরপেক্ষ তথ্যসূত্র হিসেবে এটি উইকিপিডিয়ার বিকল্প হতে পারে বলে দাবি করে আসছেন মাস্ক। প্ল্যাটফর্মটিতে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নিবন্ধ যুক্ত হয়েছে। এগুলোর বড় অংশই এআই দিয়ে লেখা বা সম্পাদিত।
তবে মাস্কের সর্বশেষ ঘোষণা প্ল্যাটফর্মটিকে ধাপে ধাপে নতুন পরিচয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, গ্রোকিপিডিয়া কেবল সার্ভারে রাখা অনলাইন তথ্যভান্ডার হয়ে থাকবে না; এটি মানুষের মহাকাশ অভিযানের সঙ্গীও হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিশ্বকোষের স্থায়ী কপি পাঠানো হবে চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আরও দূরবর্তী মহাজাগতিক গন্তব্যে। যেন মানবসভ্যতা কোনো সংকটে পড়লেও জ্ঞান হারিয়ে না যায়।
মাস্কের প্রযুক্তিগত কর্মযজ্ঞে সায়েন্স ফিকশনের প্রভাব নতুন নয়। স্টারশিপের নকশা থেকে শুরু করে সাইবারট্রাকের বাহ্যিক অবয়ব কিংবা টেসলার হিউম্যানয়েড রোবট ‘অপ্টিমাস’—তাঁর এমন অনেক প্রকল্পেই সায়েন্স ফিকশনের ছাপ স্পষ্ট। এবার অ্যাসিমভের কল্পনা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি মানবসভ্যতাকে অন্য গ্রহে বিস্তারের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছেন জ্ঞান সংরক্ষণের এই উদ্যোগকে।
তবে ঠিক কোন প্রযুক্তিতে এই মহাজাগতিক তথ্যভান্ডার সংরক্ষিত হবে, কীভাবে বিভিন্ন গ্রহে আপডেটের সমন্বয় করা হবে—এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি। মাস্ক এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে