আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম। আজ রোববার এই অভিযোগ দেন জেবুন্নাহার।

জেবুন্নাহারের অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে তাঁর স্বামী মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি (জেবুন্নাহার) ও দুই কন্যাশিশুকে ৪ মাস ৭ দিন গুম করে রাখা হয়।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তৎকালীন প্রধান মো.

মনিরুল ইসলাম, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) তৎকালীন প্রধান মো. আসাদুজ্জামান, মিরপুর বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ, রূপনগর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদ আলম, রূপনগর থানা–পুলিশের তৎকালীন অজ্ঞাতনামা সদস্যরা।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জেবুন্নাহারকে তাঁর দুই শিশুসন্তানসহ চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দী করে রাখেন। পরের দিন আসামিরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন তিনি জানতে চান, তাঁর স্বামী কোথায়? আসামিরা তখন বলতে থাকেন, তিনি ও তাঁর স্বামী জঙ্গি—এই স্বীকারোক্তি না দিলে তাঁকেও তাঁর স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তখন তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। পরে আসামিদের কোনো একজন বলেন, তাঁরাই তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছেন।

জেবুন্নাহারের অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে হত্যার পর তাঁদের ওপর নেমে আসে অমানবিক, নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম নির্যাতন। জঙ্গি নাটক করে তাঁকে, তাঁর মেয়েদের ধরে নিয়ে ডিবির কথিত আয়নাঘরে ৪ মাস ৭ দিন গুম করে রাখা হয়। তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তাঁর কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে চলে অমানুষিক নির্যাতন। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, যেন তিনি তাঁর স্বামীকে জঙ্গি বলে স্বীকার করেন। তিনি যদি স্বীকার না করেন, তাহলে তাঁকে ও দুই মেয়েকে তাঁর স্বামীর মতোই পরিণতি ভোগ করতে হবে, অর্থাৎ হত্যা করা হবে।

অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন জেবুন্নাহারের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি না পেয়ে বড় মেয়েকে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কথিত জঙ্গি নাটক সাজিয়ে আজিমপুরের একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার দেখানো হয়। কিশোর ভিকটিম সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আরেকটি জঙ্গি নাটক সাজিয়ে আশকোনার বাসা থেকে জেবুন্নাহারকে উদ্ধার দেখানো হয়। তারপর তাঁকে ডিবি কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ডিবি কার্যালয়ে আরও ১৬ দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন করা হয়। ১৬ দিন পর তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। তখন তিনি জানতে পারেন, তাঁকে তাঁর বাসা থেকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরে তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়।

জেবুন্নাহারের অভিযোগ, এরপর দীর্ঘ চার বছর জেলে থাকার পর তিনি জামিনে বের হন। তিনি দুই বছর জামিনে থাকেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার দুই বছর পর তাঁর জামিন বাতিল করে দেয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ভয় ছিল, তিনি জামিনে থাকা অবস্থায় যদি তাঁর স্বামীর হত্যার বিচার চান—এই সন্দেহে তাঁর জামিন বাতিল করে দেয়। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট তাঁকে আবার জেলখানায় পাঠানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়। ৩১ আগস্ট জেবুন্নাহার আবার জামিনে মুক্ত হন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তৎক ল ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি

ব্যবসায় অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৭ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মেহজাবীন চৌধুরীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার। 

আরো পড়ুন:

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে যা বললেন মেহজাবীন

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মেহজাবীন চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।    

মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সি ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত নয় মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি, কারণ অভিযোগকারী পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সাথে ‘ব্যবসা’ করছিলেন।”  

মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারী। এ বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তবে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। কিন্তু তিনি যা দেখাতে পারেননি।’ একটি মেসেজ যেটা তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন মেসেজের, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে, কিংবা আমার পক্ষ থেকে একটি উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও না।” 

অভিযোগকারীর পরিচয় অসম্পূর্ণ। এ তথ্য উল্লেখ করে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তার পরিচয় অসম্পূর্ণ। তার সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেয়া হয়নি। তার এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত। অভিযোগকারী ও তার আইনজীবী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তার আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।” 

আর্থিক লেনদেনের কোনো নেই। মেহাজাবীনের ভাষায়, “আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দাবি করেন যে, তিনি আমাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি—কোনো ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রশিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও নেই।” 

অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রমাণহীন। তিনি দাবি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাইসহ আরো ৪–৫ জনকে নিয়ে। গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি রেস্টুরেন্ট বা আশেপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।” 

মামলা হওয়ার পর ৯ মাস কেটে গেলেও কোনো নোটিশ পাননি মেহজাবীন চৌধুরী। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। এই নয় মাসে আমি কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।” 

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন মেহজাবীন। তার ভাষায়, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম যে একটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি। কারণ আমি আমাদের আইন ও নিয়ম মানি। প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যে উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে, সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।” 

অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “এর আগ পর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব—দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি