জুলাই ঘোষণাপত্রকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক প্রহসন উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রটি প্রত্যাখ্যান করেছেন গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ৬০ ছাত্রনেতা। তারা শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণকে অংশীদার করে নতুন ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।

রোববার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানান ছাত্র নেতারা। এতে বলা হয়, হাজারো শহীদ এবং আহত ভাইবোনের রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সংঘটিত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নমূলক পুলিশ, আদালত, আইন-সংবিধান তথা পুরোনো ব্যবস্থার কর্তৃত্ব চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চব্বিশের জুলাই ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের মতো সামরিক শাসনকে মেনে নেয়নি। আবার নব্বইয়ের মতো কেবল ব্যক্তি স্বৈরাচারীর অপসারণকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেনি বরং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙক্ষার মধ্য দিয়ে গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের বৈপ্লবিক চেতনাকে জাগ্রত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের আকাঙক্ষা অনুসারে নতুন কল্যাণমূলক, গণবান্ধব রাষ্ট্র তৈরির দায়িত্ব পালনে অগ্রসর ভূমিকায় হাজির হয়ে গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা যাদের ডাকে বিশ্বাস স্থাপন করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ছাত্রনেতারা বিবৃতিতে বলেন, গত ৫ আগস্ট পুরোনো শোষণমূলক আমলাতন্ত্র, লুটেরা শক্তি ও পুরোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সমর্থনে একটি প্রতারণামূলক ও অর্থহীন ডকুমেন্টকে জুলাই ঘোষণাপত্র নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমন অবস্থায় গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা, জুলাই ঘোষণা ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানায়। পাশাপাশি শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও প্রকৃত ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন গণবান্ধব সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানায়।

এসব দাবি বাস্তবায়নে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা তথা পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, নারীসমাজ, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবীসহ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদ ও আহত গাজী ভাই-বোনদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। তাদের অপরিসীম সাহস ও দেশপ্রেমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমরা সত্যিকার গণবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে চলমান রাখবো।’

বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল্লাহ সালেহীন, মো.

ওয়াহিদ উজ জামান, হামজা মাহবুব, মো. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবলী সাদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল তানভীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাকিব হোসাইন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজিফা জান্নাত, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল, ঢাকা কলেজের মো. রাকিব, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদ বিন রনি, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নীরব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, স্টেট ইউনিভার্সিটির মিশু আলী সুহাস, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সিনথিয়া জাহিন, বিএল কলেজের (খুলনা) সাজিদুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রন ত র কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে: তারেক রহমান

স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পর এখন জনগণের শাসন ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ইনশাআল্লাহ আগামী রোজার আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে।’

আজ রোববার বিকেলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। রাজশাহী নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহের পাশের সড়কে প্রায় দেড় যুগ পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

দেশের ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন করা বিএনপির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে সম্মেলনে তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। আপনারা পত্রপত্রিকায় দেখেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সংস্কার কমিশনে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, যত সংস্কার আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তার অধিকাংশ সংস্কার বিএনপি আড়াই বছর আগেই জাতির সামনে রাষ্ট্র মেরামতের দফা হিসেবে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিল। সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের অধিকাংশ প্রস্তাব বিএনপির দেওয়া রূপরেখার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। বিএনপিই সর্বপ্রথম দেশের মানুষের সামনে রাষ্ট্র মেরামত দফা হিসেবে পরিচিত ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিল। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশকে যদি সামনে এগিয়ে নিতে হয়, দেশের মানুষের জীবনব্যবস্থার যদি উন্নতি করতে হয়, তাহলে কতগুলো ব্যাপারে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে।’

আরও পড়ুনতারেক রহমানের ঢাকায় বাড়ি নেই, তাই ভাড়া বাড়ি খুঁজছেন: আবদুস সালাম৫৮ মিনিট আগে

ক্ষমতায় গেলে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামত ও পুনর্গঠনের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেবে বলে জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকার দেশের সব সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত, বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে।

দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ আজ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে, একমাত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, একমাত্র আপনাদের প্রিয় দল বিএনপির পক্ষেই সম্ভব ধীরে ধীরে এই দেশকে আবার গড়ে তোলা।’ তিনি বলেন, শুধু নির্বাচন হলেই হবে না। ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই হবে না। সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। তা না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে, দেশের মানুষ আরও কষ্ট পাবে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতা–কর্মীদের একাংশ। আজ রোববার বিকেলে আজ রোববার বিকেলে নগরের পাঠানপাড়া এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে: তারেক রহমান
  • শাবিপ্রবিতে ‘অধিকার সচেতন’ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রূহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া
  • ব্যাংকের বেনামী ঋণ বন্ধ হয়েছে, আমানতকারীদের আস্থা ফিরছে
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘হামলাকারী’ শ্রমিক লীগ নেতা নাছির গ্রেপ্তার
  • সাংবাদিক তুহিন হত্যা: অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
  • জাবিতে ১৭ হলে ছাত্রদলের কমিটি, বাগছাসের উদ্বেগ
  • ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে রূপগঞ্জে শ্রমিক সমাবেশ ও দোয়া 
  • ছাত্র আন্দলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে রূপগঞ্জে শ্রমিক সমাবেশ ও দোয়া