দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
Published: 11th, August 2025 GMT
দেশে এমনিতেই বনভূমি কমছে, তার ওপর নতুন করে বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে বনের ভেতর অবৈধভাবে স্থাপন করা হাজার হাজার বিদ্যুতের খুঁটি। এসব অবৈধ বিদ্যুৎ–সংযোগ বনভূমি দখলের প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে বন্য হাতি হত্যা করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক, এসব খুঁটি সরাতেই হবে।
বন অধিদপ্তরের এক জরিপে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও দিনাজপুর অঞ্চলের বনাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি অবৈধ বিদ্যুতের খুঁটির সন্ধান পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে—৫ হাজার ৭১৭টি। বন বিভাগ বারবার সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানালেও তার ফল মিলেছে সামান্যই। উল্টো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিবির পক্ষ থেকে আসছে পরস্পরবিরোধী ও দায়সারা বক্তব্য।
জনগণের বিদ্যুৎ প্রাপ্তির অধিকার আছে, কিন্তু তার জন্য বনভূমি দখল করে পরিবেশ ও বন্য প্রাণীর জীবন বিপন্ন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক সদস্যের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই একজন বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে পারেন, কিন্তু বন বিভাগের আপত্তির বিষয়ে তাঁদের তেমন কোনো ধারণা নেই। অথচ বন বিভাগ নিয়মিত চিঠি এবং আইনশৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এই সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পুরো বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনের ভেতর অবৈধ বসতিতে বিদ্যুৎ–সংযোগে বনের ভেতর অবৈধ দখল রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তা ছাড়া মহাবিপন্ন প্রাণীর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। গত আট বছরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ২৬টি হাতি হত্যা করা হয়েছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টার উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে অবৈধ খুঁটি ও সংযোগগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। দ্বিতীয়ত, বন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে একটি কার্যকর সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, বনের ভেতর যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বা বিদ্যুৎ–সংযোগের ক্ষেত্রে বন বিভাগের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিগত এক–দেড় দশকে বনের ভেতরে সড়ক ও অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগের কারণে টাঙ্গাইল, সিলেটসহ অনেক জায়গায় বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে। দেরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনই কঠোর, কার্যকর ও সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ ব যবস থ অব ধ ব
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা
রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে রবিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে অজ্ঞাত ৭০০ জনের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
এদিকে, ওই ঘটনার প্রতিবাদে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বেলতলী এলাকায় রুপলালের মরদেহ নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। ফলে সড়কের দুই দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। আন্দোলনকারীরা দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
স্থানীয় সমাজসেবক সাবু খান বলেন, “রুপলাল নিরপরাধ। তাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি বাঁচার জন্য অনেক আকুতি করেছেন। নিজেকে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাছে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কেউ তার কথা শোনেনি। তাকে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
আরো পড়ুন:
পাবনার সেলিম গাজীপুরে এসে হন স্বাধীন, পাল্টান বাবার নামও
মুরগির ডাক শুনে ঘরের দরজা খুলতেই খুন হন জসীম
ঘনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা নান্নু মিয়া বলেন, “আমরা রুপলাল হত্যার বিচার চাই। আসামিদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটনোর সাহস অন্য কেউ না পান।”
তারাগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্ত বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে রুপলাল ও প্রদীপ লালের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আতে হবে।”
নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, তারাগঞ্জ বাজারে রুপলাল রবিদাস জুতা সেলাই করতেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিঠাপুকুরের ছরান বালুয়া এলাকা থেকে ভাতিজি জামাই প্রদীপ লালকে নিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি ফেরার পথে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এরই একপর্যায়ে সন্দেহভাজনরা প্রদীপ লালের কালো ব্যাগ তল্লাশি করে ‘স্পিড ক্যানের’ বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় ও কিছু ওষুধ পান। বোতলের ঢাকনা খোলার পর দুর্গন্ধে বুড়িরহাট এলাকার মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে উত্তেজিত হয়ে রুপলাল ও প্রদীপ লালকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে নিয়ে প্রায় ৫০০-৭০০ জন লোক লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর শুরু করে।
এক পর্যায়ে তাদের কান দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তাদের তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক রুপলালকে মৃত্য ঘোষণা করেন। প্রদীপ লালকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠান। সেখানে প্রদীপ লাল ভোর ৪টায় মারা যান।
এলাকাবাসী জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল থেকে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রুপলালের লাশ বাড়িতে পৌঁছায়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।
এ সময় সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি টিম। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে, মরদেহ নিয়ে সড়ক থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।
তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, “নিহত রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত চলছে। কিছু আলামত পেয়েছি, সেগুলো যাছাই বাছাই চলছে।’
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ