রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে ২০১৫ সালে। ১০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাস পাননি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পার্বত্যাঞ্চলের প্রথম ও একমাত্র মেডিকেল কলেজটির কার্যক্রম শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও আবাসন সমস্যা নিয়ে চলছে।

রাঙামাটি শহরের হাসপাতাল সড়ক এলাকায় ছয় তলা ভবনে চলছে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এই ভবনটি করা হয়েছিল রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) জন্য।

একাডেমিক ভবন ও ছাত্রাবাস—সবখানে সংকট আর সংকট। কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষের অভাব আছে। শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে অস্থায়ীভাবে। ছাত্রদের থাকার কক্ষগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। শিক্ষকদের তিন-চারজনকে একটি কক্ষে ভাগাভাগি করে বসতে হয়।

কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শ্রেণি কার্যক্রম চললেও সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৫ টি। এর মধ্যে মাত্র দুটিতে ৭৫ জনের সংকুলান হয়। বাকি তিনটিতে বসতে পারেন ৫০ জন করে। এখন প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৭৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে সামনের দিনে শ্রেণিকক্ষে সব শিক্ষার্থীদের বসার স্থান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের সমস্যা নিরসনে গত ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। রাঙামাটির শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় ২৮ একর জায়গার ওপর নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৫ একর জায়গার ওপর ১৬টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১০টি আবাসিক ভবন ও ৬টি অনাবাসিক। এসব ভবনের মধ্যে থাকবে একাডেমিক, প্রশাসনিক, আবাসিক হল, কোয়ার্টার। এই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালও নির্মাণ করা হবে।

এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৮ নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসের অপেক্ষা তাঁদের আরও বাড়বে।

গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নেই। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় ধার করে চিকিৎসক এনে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিতে হয়। এভাবে কত দিন চালানো যায়? এভাবে চালানোর কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া, অধ্যক্ষ, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজঅস্থায়ী ভবনে ক্লাস-পরীক্ষা

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) চালু করতে ছয় তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে এই সেবা চালু করা যায়নি। সেবার পরিবর্তে ভবনটিতে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে পাঁচটি ব্যাচে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী আছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে আছেন ৭৫ জন করে। বাকি তিনটি বর্ষে আছেন ৫১ জন করে। ছয়তলা ভবনের প্রথম তলায় গ্রন্থাগার ও সন্ধানী অফিস, দোতলায় বায়োকেমিস্ট্রি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি ল্যাব এবং শিক্ষকদের কক্ষ, তৃতীয় তলায় অধ্যক্ষের কার্যালয়, ছাত্র শাখা, সভাকক্ষ ও শিক্ষকদের লাউঞ্জ। চতুর্থ তলায় ২টি শ্রেণিকক্ষ, অ্যানাটমি বিভাগ ও মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব, পঞ্চম তলায় একটি শ্রেণিকক্ষ (যেটি মিলনায়তনে হিসেবেও ব্যবহৃত হয়), উপাধ্যক্ষের কার্যালয় ও ২টি বিভাগ এবং ষষ্ঠ তলায় ২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।

কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শ্রেণি কার্যক্রম চললেও সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৫ টি। এর মধ্যে মাত্র দুটিতে ৭৫ জনের সংকুলান হয়। বাকি তিনটিতে বসতে পারেন ৫০ জন করে। এখন প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৭৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে সামনের দিনে শ্রেণিকক্ষে সব শিক্ষার্থীদের বসার স্থান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের দুই ছাত্র বলেন, মেডিকেল শিক্ষাক্রমে লেকচার কক্ষ ও টিউটোরিয়াল কক্ষ (ছোট গ্রুপে ক্লাস করার জন্য) প্রয়োজন। কিন্তু লেকচার কক্ষ থাকলেও টিউটোরিয়াল কক্ষ নেই। আবার ল্যাবগুলোতে সব শিক্ষার্থীর এক সঙ্গে সংকুলান হয় না। এতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য শহরের ভেদাভেদী এলাকায় ভাড়া করা ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ।সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র কল জ র শ ক ষ ন র ম ণ কর প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ