চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাড়ে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি
Published: 11th, August 2025 GMT
উজানের ঢল আর অতিবৃষ্টিতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে এই নদীর পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হয়েছে। ফলে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানিতে ডুবে গেছে রোপা আউশ, ভুট্টাসহ শাক-সবজি আবাদ করা ৪০৩ হেক্টর জমি। ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
রাঙামাটিতে পানিবন্দি ২৩ হাজার মানুষ
রাঙামাটিতে ২০ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৮ হাজার মানুষ
জনপ্রতিনিধিরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দুইটি এবং শিবগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৫০০ ও আলাতুলি ইউনিয়নের ৬০০ পরিবার পানিবন্দি।
শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ২ হাজার পরিবার, উজিরপুর ইউনিয়নের ৪৫০ ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার দুলর্ভপুর ইউনিয়নে নামোজগন্নাথপুরের বাসিন্দা খাদেমুল বাশার রুবেল ইসলাম বলেন, “পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলো ডুবে গেছে। সেখানে বসবাস করা মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে আবারো পদ্মায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষ ভাঙন আতঙ্কেও দিন পার করছেন।”
পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, “আমাদের এলাকার নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমিগুলোয় ডুবে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এখানকার অনেক বাড়ির চারদিকেই পানি আর পানি।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.
শিবগঞ্জের দুলর্ভপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহা. আজম আলী বলেন, “এই ইউনিয়নের দোভাগী, ফিল্টেরহাট, নামোজগন্নাথপুর, বাদশাপাড়া এলাকার নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো ডুবে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি।”
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া বলেন, “নদীর পানিতে ধান, ভুট্টা ও শাক-সবজির ৩৬০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল হক জানান, তার উপজেলায় পানিতে ৪৩ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘নিচু এলাকাগুলোর ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। যে কারণে ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আশপাশের উচুঁ জায়গায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব মানুষের তালিকা প্রস্তুতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে যাচাই-বাছাই করে তাদের ত্রাণের আওতায় আনা হবে।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন বন দ নদ প ইনব বগঞ জ সদর শ বগঞ জ উপজ ল র কর মকর ত নদ র প ন বগঞ জ র র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
দুর্নীতির দমন কমিশনের (দুদক) করা এই মামলায় আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম।
পিপি তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ মোট ২৩ আসামির বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন।’
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেন বলে জানান পিপি তরিকুল ইসলাম।
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের দুদকের করা পৃথক ছয় মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত।
এর মধ্যে তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১১ আগস্ট তারিখ ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন। বাকি তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৩ আগস্ট তারিখ ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম। সেদিন অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়ার পর আদালত বলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের অভিযোগ পড়ে শোনানো গেল না।
দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর পরিবারের অন্য অভিযুক্ত সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)।
মামলায় শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন অভিযুক্ত হয়েছেন, তাঁরা হলেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, গণপূর্তের তৎকালীন সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য কবির আল আসাদ, সদস্য তন্ময় দাস, সদস্য নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার।
দুদকের পিপি খান মো. মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী, ঢাকায় যাঁদের প্লট-গাড়ি-বাড়ি কিছুই নেই, তাঁরা মূলত সংস্থার প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিবার রাজউকের কাছে মিথ্যা হলফনামা দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তাঁদের ঢাকা শহরে জমি-বাড়ি কোনো কিছুই নেই। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নামে বাড়ি-জমি-গাড়ি সবই আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁরা রাজউকের ৬০ কাঠার প্লট নিয়েছেন, যা অপরাধ। অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গসহ অন্যান্য অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে মামলাগুলো বিচারের জন্য দুটি বিচারিক আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয় মামলায় গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।