১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারের সেতু বানানোর প্রতিবাদে ইতালিতে বিক্ষোভ
Published: 11th, August 2025 GMT
সরকারিভাবে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন ইতালির সিসিলি দ্বীপের বাসিন্দারা। গতকাল শনিবার সিসিলির মেসিনা শহরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
১ হাজার ৩৫০ কোটি ইউরো (১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার) মূল্যের একটি অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেতুটি ইতালির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ সিসিলির সংযোগ তৈরি করবে। নির্মাণ হলে এটি হবে বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু। এসব কারণে শনিবার সিসিলির মেসিনা শহরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রস্তাবিত স্টেট অব মেসিনা ব্রিজ নামক প্রকল্পটির বিরোধিতা করছেন। তাদের আশঙ্কা, সেতুটি নির্মাণ হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে, ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়বে এবং মাফিয়ারা প্রভাব বিস্তার করবে।
মেসিনা প্রণালির ওপর সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে কয়েক দশক ধরেই বিতর্ক চলছিল। চলতি সপ্তাহে ইতালির সরকারের কৌশলগত সরকারি বিনিয়োগ–সংক্রান্ত তদারকি কমিটি প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
ইতালির পরিবহনমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি এই পরিকল্পনাকে ‘পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প’ বলে অভিহিত করেছেন।
সালভিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রকল্প বছরে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং তা দক্ষিণ ইতালির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে। তা ছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে কয়েক শ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করা হবে।
তবে সমালোচকেরা তাতে সন্তুষ্ট নন; বরং ক্ষুব্ধ। কারণ, সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করতে হবে। তবে সালভিনি বলেন, এসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শনিবার বিক্ষোভকারীরা মেসিনাতে মিছিল করার সময় স্লোগান দিচ্ছিলেন ‘মেসিনা প্রণালিতে হাত দেওয়া যাবে না।’ তাঁদের অনেকের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল ‘নো পোন্তে’ (সেতু নয়)।
মেসিনার ৭৫ বছর বয়সী বাসিন্দা মারিওলিনা দি ফ্রান্সেস্কোর বাড়িটি সেতুর জন্য পরিকল্পিত ৩৯৯ মিটার (৪৪০ গজ) উঁচু একটি ল্যান্ড টাওয়ারের কাছে অবস্থিত। তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘তারা (সরকার) আমাকে আমার বাড়ির তিন গুণ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করতে পারে; কিন্তু আমার তাতে আগ্রহ নেই। আমার কাছে প্রাকৃতিক দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা (সরকার) মেসিনা প্রণালি স্পর্শ করতে পারবে না।’
নিজের ঘরের সোফায় মেসিনার ৭৫ বছর বয়সী বাসিন্দা মারিওলিনা দি ফ্রান্সেস্কো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভোট দিতে সিদ্ধান্তহীনদের সংখ্যা বেড়ে ৪৮.৫০ শতাংশ
আগামী জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এই প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার আরও বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৩৮ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আট মাস পরে এখন ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বলছেন, কাকে ভোট দেবেন সে বিষয়ে তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
কাকে ভোট দেবেন, তা বলতে চান না ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ। আর ভোট দেবেন না বলেছেন ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এই প্রশ্নে ১২ শতাংশ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কথা বলেছেন। আট মাস আগে গত অক্টোবর মাসে একই প্রশ্ন করা হলে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত ও ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ আট মাস পরে বিএনপি ও জামায়াতের ভোট কিছুটা কমেছে আর এনসিপির ভোট সামান্য বেড়েছে।
জরিপে গত অক্টোবরে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটি এখন কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ভোট শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ, অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে নেমেছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ।
অবশ্য আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়—এমন প্রশ্নে ৩৮ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। এই প্রশ্নের উত্তরে ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াত ও ১ শতাংশ এনসিপির কথা বলেছেন। আর আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন ৭ শতাংশ মানুষ।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহুরে। জরিপে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে টেলিফোনে প্রশ্ন করে মতামত জানতে চাওয়া হয়। গত ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে এই জরিপ চালানো হয়। এর আগে গত অক্টোবরের তথ্যের ভিত্তিতে ডিসেম্বরে বিআইজিডির দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কমেছে
বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিআইজিডির জরিপে। এর উত্তরে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে আর ৪৫ শতাংশ মানুষের মত হলো দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। গত বছরের অক্টোবরে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে আর ৪৩ শতাংশ বলেছিলেন অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে আশাবাদ সামান্য বেড়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তা কমেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত যেসব প্রচেষ্টা, সেগুলোকে আপনি ১০০-তে কত নম্বর দেবেন—এই প্রশ্নে সরকারকে ৬৩ শতাংশ নম্বর দিয়েছেন উত্তরদাতারা। গত অক্টোবরে এটি ছিল ৬৮ শতাংশ।
ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন চান ৫১ শতাংশ মানুষ। কিছু জরুরি সংস্কার করে নির্বাচন চান ১৭ শতাংশ। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন দেওয়া ভালো বলে মনে করেন ১৪ শতাংশ মানুষ। আর সংস্কার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।
কোন সংস্কারগুলো প্রয়োজন বলে মনে করেন—এই প্রশ্নে একাধিক উত্তর দেওয়ার সুযোগ ছিল। এর উত্তরে ৩০ শতাংশ মানুষ আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতির কথা বলেছেন ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া ১১ শতাংশ মানুষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসা চাঙা করা, ১৩ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, ১০ শতাংশ বেকারত্ব কমানো, ১৭ শতাংশ দুর্নীতি দমনের কথা বলেছেন। এর বাইরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছেন ১৯ শতাংশ করে মানুষ।
জাতীয় নির্বাচন কখন চান, এমন একটি প্রশ্নও করা হয়েছিল জরিপে। এর জবাবে ৩২ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা আগামী ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চান। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চান ১২ শতাংশ, জুনের মধ্যে ১১ শতাংশ আর ডিসেম্বর (২০২৬) অথবা পরে নির্বাচনের কথা বলেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ।
জরিপে ৭০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। সুষ্ঠু হবে না মনে করেন ১৫ শতাংশ আর এ বিষয়ে জানেন না বলেছেন ১৪ শতাংশ মানুষ।
জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন বয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকেরা।